
আসাদুজ্জামান নূর : স্বল্প জায়গায় অধিক ঘনত্বে মাছ চাষ পদ্ধতির নাম বায়োফ্লক। ইউটিউবে দেখে সর্বপ্রথম এই পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে পারেন বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া তরুন আদনান শফিক। সেখান থেকে উদ্বুদ্ধ হয়ে এক মাছচাষি বড় ভাইয়ের কাছে পরামর্শ নেন। হাতে কলমে মাছ চাষের বিষয়ে প্রশিক্ষণ নেন। প্রশিক্ষণ শেষে পড়ালেখার পাশাপাশি বাড়তি কিছু আয়ের লক্ষ্যে এই পদ্ধতিতে মাছ চাষ শুরু করেন তিনি।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ইতিহাস বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী শফিক চাকরির পেছনে না ছুটে হতে চান উদ্যোক্তা। বেছে নিয়েছেন স্বল্প জায়গায় অধিক ঘনত্বে মাছ চাষ পদ্ধতি বায়োফ্লক। একজন সফল উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন বুনছেন এই তরুন।
বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর থেকেই উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন দেখেন শফিক। ক্যাম্পাস জীবনের বছর দুয়েক না পেরুতেই শুরু করেন পরীক্ষামূলক সবজি চাষ। প্রথমেই ব্রকলি চাষে সফলতা পান। এরপর আলু, মূলা, কপি, পালং শাক, ড্রাগনসহ প্রায় ১০-১২টি সবজির চাষ করেন। সবজি বিক্রির টাকা দিয়ে রাজশাহীর সিলিন্দা এলাকায় গড়ে তুলেছেন প্রায় ৪০ হাজার লিটারের ৩টি বায়োফ্লক ট্যাংক। শফিকের কার্যক্রমের সাথে যুক্ত হয়েছেন দুই তরুন শাহাদত ও ওবায়দুল্লাহ।
জানা গেছে, শফিকের বাড়ি কিশোরগঞ্জ জেলার পাকুন্দিয়া উপজেলার আনোয়ারখালি গ্রামে। তার বাবার নাম আব্দুল মতিন। নগরীর ডাবতলা এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকতেন। সবজি ও মাছ চাষের জন্য বাসার পাশের ফাঁকা জমি লিজ নেন। চলতি বছরের শুরুর দিকে তিনটি ট্যাংকসহ অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণ করেন তিন বন্ধু মিলে। টিউশনি আর পরিবার থেকে সামান্য টাকায় কঠোর মনোবলে নেমে পড়েন কৃষিকাজ ও মাছচাষে।
আদনান শফিক জানান, পুকুর খনন করে মাছ চাষ করা কিংবা পুকুরে মাছ চাষ অনেকটাই আশঙ্কাজনক এবং ঝুঁকিপূর্ণ। কখন কি হয় বলা যায় না। তাছাড়া খরচ বেশি, উৎপাদন কম। বেশ কয়েক বছর ধরে বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষের প্রযুক্তি বাংলাদেশে দেখা যাচ্ছে। এই পদ্ধতিতে মাছ চাষ করতে কোনো পুকুর, খালবিল কিংবা নদীনালার প্রয়োজন হয় না। বরং অল্প জায়গায় ইট-সিমেন্ট দিয়ে ট্যাংক কিংবা ত্রিপল দিয়ে ঘের তৈরি করে টানা কয়েকবছর মাছ চাষ করা যায়। আয়ও করা যায় উল্লেখযোগ্য। এ ধারণা থেকেই মাছ চাষে আগ্রহী হয়েছেন তিনি।
তিনি জানান, খুব সহজেই যে কেউ অল্প পুঁজিতে এই পদ্ধতিতে মাছ চাষ করতে পারেন। ১৮ হাজার, ১৫ হাজার ও ৭-৮ হাজার লিটার পানি ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন তিনটি ট্যাংক দিয়ে তার বায়োফ্লক প্ল্যান্ট। এ পদ্ধতিতে মাছের জন্য খাবার খুব কম দিতে হয়। এ পদ্ধতিতে মাছের উচ্ছিষ্ট এবং নষ্ট হয়ে যাওয়া খাবার ব্যাকটেরিয়ার সাহায্যে প্রক্রিয়াকরণ করে তা পুনরায় মাছকে খাওয়ানো যায়। এতে খাবারের খরচ অনেক কমে যায়। মাত্র ৬০০ থেকে ৭০০ গ্রাম খাবার খাইয়ে কেজি খানেক ওজনের মাছ উৎপাদন করা যায়। অথচ ১ কেজি মাছ উৎপাদনে খরচ হয় ৮০ থেকে ৯০ টাকা।
উদ্যোমী এই তরুন বলেন, মাছ চাষে সফলতা পেলে কয়েকজনকে সাথে নিয়ে আরও বড় পরিসরে এগিয়ে যাব। শুরুতে সামান্য টাকা হলেও বন্ধুবান্ধবরা সাহস করতে পারছেন না। পরে হয়ত অনেককেই সঙ্গী হিসেবে পাওয়া যাবে।
শিক্ষিত তরুণদের মাছ চাষে স্বাবলম্বী হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে রাজশাহী জেলা মৎস্য কর্মকর্তা অলক কুমার সাহা বলেন, বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছচাষ লাভজনক। আমাদের জেলা-উপজেলাতে অনেকেই এই পদ্ধতিতে মাছ চাষ শুরু করেছেন। অনেকে না জেনে ব্যক্তিগত উদ্যোগে মাছের চাষ শুরু করেছেন। কিন্তু এই পদ্ধতিতে বৈজ্ঞানিক কিছু বিষয় আছে যা জানা জরুরি। না জেনে মাছ চাষ শুরু করে লোকসান খেয়ে বায়োফ্লককেই দায়ী করেন অনেকে। আসলে এটি খুবই লাভজনক একটি পদ্ধতি।