
এ কে এস রোকন, শিবগঞ্জ: গত ১৯ নভেম্বর একসাথে ৯ জনের প্রানহানির অন্যতম প্রধান কারণ জলাবদ্ধতা ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের অবহেলা। পরদিন সরজমিনে জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার ভাঙ্গাসাকো এলাকাটি সরজমিনে পরিদর্শন শেষে এমনই চিত্র উঠে এসেছে। জলাবদ্ধতা নিরসন ও রাস্তা সংষ্কারের একাধিকবার আবেদন করেও কোন ফলাফল না পাওয়ার অভিযোগ রয়েছে।
ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেছে উপজেলার দাইপুখুরিয়া ইউনিয়নের গ্রামটির পাশে রয়েছে অন্তত ৮ হাজার বিঘার বিশাল একটি বিল,যার নাম ঘোড়াদহ বিল। বিলের এক তৃতীয়াংশ দাইপুখুরিয়া ইউনিয়নে এবং বাকি অংশ শাহবাজপুর ও মোবারকপুর ইউনিয়নে। বিলের মাঝ দিয়ে সরু পীচ ঢালায় ক্ষতিগ্রস্থ রাস্তা।
রাস্তাটি চাঁপাইনবাবগঞ্জ-সোনামসজিদ মহাসড়কের সাথে যুক্ত হওয়ায় বারিকবাজার, হাউসনগর, মিয়াপুর,বাঘবাড়ি, লাতোড়, ভাঙ্গাসাকো, গাজিপুরসহ বেশ কয়েকটি গ্রামের ১০ হাজার লোক চলাফেরা করে থাকে।
পাশাপাশি এসব এলাকার ৩০ হাজার মানুষ ঘোড়াদহ বিলের সাথে অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে জড়িত। বিশেষ করে ভাঙ্গাসাঁকো এলাকার ৩ হাজার পরিবার সরাসরি বিলটির সাথে অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে জড়িত। গত একবছরে বিলটির বিভিন্ন স্থানে শতাধিক পুকুর হওয়ায় চার ভাগের ৩ ভাগ জমিই এখন জলাবদ্ধতার শিকার। সে বিলে চাষ হতো মাছ এবং শুষ্ক মৌসুমে বিভিন্ন ফসল। সম্প্রতি আমের ব্যপক চাষের ধারাবাহিকতায় অপেক্ষাকৃত উচু জায়গাগুলোতে লাগানো হয় আমগাছ।
কিন্তু সরজমিনে গিয়ে দেখা গেছে পুরো এলাকায় শতাধিক পুকুর বানিয়ে পাড়গুলো উঁচু করে বাধিয়ে ফেলায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে।এতে করে সম্প্রতি লাগানো আমগাছ গুলো মারা যাচ্ছে।জলাবদ্ধতার কারনে কৃষকরা কোন ফসল চাষ করতে পারছেনা। পুরো এলাকাটি রয়েছে পনির নিচে পতিত পড়ে। গ্রামের মধ্যেই একটি কারিগরি স্কুল থাকলেও সেটি বর্তমানে পানিতে ডুবে রয়েছে।বিদ্যালয়টির মাঠ সহ বিভিন্ন স্থানে জলাবদ্ধতার কারনে বিদ্যালয়ে কেউ প্রবেশ করতে পারছেনা।
পাশাপাশি পিরোজপুর- বারিকবাজার সড়কটির অধিকাংশ স্থানের ২ পাশে পানি জমে থাকায় এবং সরু রাস্তাটি দিয়ে অতিরিক্ত পন্য বোঝায় অবৈধ বিভিন্ন যান দ্রুত বেগে চলাচল করায় রাস্তাটি ব্যপক হারে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। প্রতিনিয়ত রাস্তাটি পানির তোরে ভেঙ্গে খাঁদের সৃষ্টি হচ্ছে। শুক্রবার রাতে এ সরু ভাঙ্গা রাস্তা দিয়ে সিমেন্ট বোঝায় একটি বড় ট্রাক প্রবেশ করায় রাস্তাটির আরও ঝুঁকিপূর্ন হয়ে পড়েছে। এতে করে আবারো বড় ধরনের কোন অঘটনের আশংকা থেকেই যাচ্ছে।
গ্রামবাসী শফিকুল ইসলাম মুন্সী জানান, পুকুরগুলো খননের সময় এ নিয়ে উপজেলা ও জেলা প্রশাসন অফিসে একাধিকবার অভিযোগ দেয়ার পরও পুকুর খনন বন্ধ হয়নি।পানি নিষ্কাশনের বিকল্প কোন ব্যবস্তাও করেনি কেউ। মুলত পানি নিষ্কাষন না হওয়ায় এ জলাবদ্ধতা বলে দাবী তার।
একই এলাকার জুয়েল জানান, এলাকাবাসীর দাবী অগাহ্য করে প্রশাসনের খামখেয়ালিপনায় এ পুকুর গুলোর জন্ম। আর এ কারনেই আজকের এ পরিবেশ বিপর্যয়।
অপরদিকে স্থানীয় যুবলীগ নেতা আলমগীর কবির জানান, তারা একাধিকবার চেয়ারম্যান ও সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড সদস্যকে জলাবদ্ধতা নিরসন এবং রাস্তাটি মেরামতের আবেদন করেও কোন ফল পাননি। তার অভিযোগ পুকুর খননকারীদের কাছে আর্থিক সুবিধা নিয়ে চেয়ারম্যান ও ওয়ার্ড সদস্যরা পুকুর খননে সহায়তা করেছে।রাস্তা মেরামতের জন্য বার বার তাগাদা দেয়ার পরও চেয়ারম্যান তাতে কর্ণপাত করেনি।
একই এলাকার জোবদুল হক এটি দুর্ঘটনা না বলে হত্যাকান্ড বলে দাবী করেন। তিনি জানান, রাস্তাটির ২ পাশে জলাবদ্ধতা ও মাছ চাষের কারনে রাস্তার মাটি প্রতিনয়তই সরে যাচ্ছে। এর আগে একই এলাকায় কয়েকটি দুর্ঘটনা ঘটার পরও প্রশাসনের টনক নড়েনি।তার প্রশ্ন আর কত লাশ পেলে রাস্তাটি সংষ্কার হবে?
সোনামসজিদ মাধ্যমিক ও কারিগরি ভকেসনাল ইন্সিটিটিউটের শিক্ষার্থী আব্দুর রাকিব জানান, গত ৬ মাস থেকে তাদের বিদ্যালয়টি জলমগ্ন হয়ে রয়েছে।করোনার কারনে বিদ্যালয় বন্ধ না থাকলে এ বিদ্যালয়টিতে শিক্ষা কার্যক্রম চালানো সম্ভব হতোনা।
বিদ্যালয়টি পরিচালনা কমিটির সভাপতি মোশারফ হোসেন জানান, তাদের বিদ্যালয়টি দীর্ঘদিন জলমগ্ন থাকায় এর পরিবেশ নষ্ট হয়ে গেছে। মাত্রারিক্ত পুকুর খননের মাধ্যমে পানি নিষ্কাষন বন্ধ হওয়ায় এ জলাবদ্ধাতা। দ্রুত পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না করলে এ এলাকার গাছপালা সব নষ্ট হয়ে যাবে। বির্পযয় হবে পরিবেশের।
এ ব্যাপারে দাইপুখুরিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আতিকুল ইসলাম জুয়েল তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, তিনি উপজেলা পরিষদের একাধিক সভায় জলাবদ্ধতা নিরসনের এবং রাস্তার ২ পাশে প্রটেকসন ওয়াল নির্মানের তাগাদা দিলেও অজ্ঞাত কারনে তা বস্তবায়ন হয়নি।
অপরদিকে শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাকিব আল রাব্বি জানান, তিনি যোগদানের আগেই এসব পুকুর খনন হওয়ায় তার কিছু করনীয় ছিলনা। তবে পরিবেশ বির্পযয় রোধে অতিদ্রুত একটি ক্যানেল খনন করে আটকেপড়া পানি পাগলা নদীতে ফেলার ব্যবস্থা করা হবে।পাশাপাশি সাময়িক ভাবে রাস্তাটি মেরামতের পর রাস্তা সংষ্কারে দীর্ঘমেয়াদি উদ্যোগ নেয়া হবে।
প্রসঙ্গত: গত ৬ মাস ধরে পিরোজপুর-বারিকবাজার সড়কটি জলাবদ্ধতার কারণে ক্ষতিগ্রস্থ হলেও সংষ্কার না হওয়ায় এবং জলাবদ্ধতা নিরসনের কোন উদ্যোগ না নেয়ায় গত ১৯ নভেম্বর ধান বোঝাই একটি ভুটভুটি জলাবদ্ধ পানিতে উল্টে গিয়ে ধানের বস্তার নিচে চাপা পড়ে মারা যায় ৯ শ্রমিক।