সর্বশেষ সংবাদ :

মাহে রমজান

সানশাইন ডেস্ক : মাহে রমজানুল মোবারকের আজ ২৬ তম দিবস। আজ পবিত্র শবে ক্বদর, আল কুরআন নাজিলের রজনী। ৬১৯ খ্রিস্টাব্দের মাহে রমজানের ২০ তারিখ ওফাতপ্রাপ্ত হয়েছিলেন আমাদের প্রিয় নবী হুজুরে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রিয়তমা স্ত্রী হযরত খাদীজা (রা.)। তিনি নারী-পুরুষের মধ্যে প্রথম ইসলাম ধর্ম গ্রহণকারী, নূরনবীর সঙ্গে প্রথম নামাজ আদায়কারী। ইসলামের একেবারে শুরুর যুগে ধনসম্পদ ও মূল্যবান পরামর্শ দিয়ে অবিস্মরণীয় ও বরণীয় হয়ে আছেন এ অতুলনীয় বিশ্ববরেণ্য মহিলা। তার একটি বড় পরিচয় ৬১০ খ্রিস্টাব্দে মক্কার জাবালে নূরের হেরা গুহা আলোকিত করে যখন পাক কালাম কুরআন শরীফ নাজিলের শুভ সূচনা হয়েছিল, তখন সে পর্বতশৃঙ্গে স্বামীভক্ত ধনাঢ্য খাদিজা মাথায় করে পানাহার নিয়ে যেতেন আখেরি পয়গম্বরের জন্য। তাই আজ কুরআন নাজিলের মাসে, কুরআনুল কারীম অবতীর্ণ হওয়ার পুণ্য স্মৃতিময় রজনী শবে কদরের প্রাক্কালে সর্বোপরি কুরআন শরীফ নাজিলের সূচনাপর্বের মাত্র নয় বছরের ব্যবধানে এ মাসে ওফাতপ্রাপ্ত হওয়া মহীয়সী মহিলা মা খাদিজা আমাদের হৃদয় নিঙড়ানো স্মরণ শ্রদ্ধা, সালাম ও ভালোবাসা পাওয়ার দাবি রাখেন।
হযরত খাদীজার (রা.) বাল্য ও কৈশর জীবনের তেমন কোনো তথ্য সীরাতের গ্রন্থাবলিতে পাওয়া যায় না। তবে সেই জাহিলী সমাজে তিনি যে অতি পুত-পবিত্র স্বভাব-বৈশিষ্ট্য নিয়ে বেড়ে উঠেছিলেন, সে কথা বিভিন্নভাবে জানা যায়। আবু হালা হিন্দা ইবন যুরারা আত-তামীমীর সঙ্গে তার প্রথম বিয়ে হয়। তার মৃত্যুর পর আতিক ইবন আবিদ মতান্তরে আয়িজের সঙ্গে দ্বিতীয় বিয়ে হয়। বালাজুরী বলেছেন, দ্বিতীয় স্বামী আতীকের সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। তার পর দয়াল নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) তাকে স্ত্রীর মর্যাদা দিয়ে ঘরে তোলেন।
নবী (সা.) যখন খাদীজাকে (রা.) বিয়ে করেন, তখন রাসূলুল্লাহর (সা.) বয়স ২৫ এবং খাদীজা (রা.) তার চেয়ে ১৫ বছরের বড়। আজ-জাহবী : তারিখ-১/৪২। বিয়ের ১৫ বছর পর হযরত নবী করীম (সা.) নবুওয়াত লাভ করেন। সহীহ বুখারীর ‘ওহীর সূচনা’ অধ্যায়ে একটি হাদিসে বিষয়টির বিস্তারিত বিবরণ এসেছে। নবীজীর আরেক স্ত্রী হযরত আয়িশা (রা.) অতি চমৎকারভাবে বর্ণনা করেছেন : ‘রাসূলুল্লাহর (সা.) প্রতি প্রথম ওহীর সূচনা হয় ঘুমে সত্য স্বপ্নের মাধ্যমে। স্বপ্নে যা কিছু দেখতেন, তা সকাল বেলার সূর্যের আলোর ন্যায় প্রকাশ পেত। তার পর নির্জনে থাকতে ভালোবাসতেন। খানাপিনা সঙ্গে নিয়ে গুহায় চলে যেতেন। সেখানে কয়েকদিন ইবাদাতে মশগুল থাকতেন। খাবার শেষ হয়ে গেলে আবার খাদীজার কাছে ফিরে আসতেন। খাদ্যদ্রব্য নিয়ে আবার গুহায় ফিরে যেতেন। এ অবস্থায় একদিন তার কাছে সত্যের আগমন হলো। ফিরিশতা এসে তাকে বললেন : আপনি পড়ুন। তিনি বললেন : আমি তো পড়ালেখার লোক নই। ফিরিশতা তাকে এমন জোরে চেপে ধরলেন যে, তিনি কষ্ট অনুভব করলেন। ছেড়ে দিয়ে আবার বললেন : পড়ুন। তিনি আবারও বললেন : আমি তো পড়ালেখার লোক নই। ফিরিশতা দ্বিতীয় ও তৃতীয়বারও তার সঙ্গে প্রথমবারের মত আচরণ করলেন। অবশেষে বললেন : পড়ুন আপনার প্রতিপালকের নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন। যিনি সৃষ্টি করেছেন মানুষকে জমাট রক্তপি- থেকে। পড়ুন, আপনার পালনকর্তা মহাদয়ালু, যিনি কলমের সহায্যে শিক্ষা দিয়েছেন। শিক্ষা দিয়েছেন মানুষকে, যা সে জানত না।’ (সূরা আল ‘আলাক-৫)
রাসূল (সা.) ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে ঘরে ফিরলেন। খাদীজাকে ডেকে বললেন : ‘আমাকে কম্বল দিয়ে ঢেকে দাও, কম্বল দিয়ে ঢেকে দাও।’ তিনি ঢেকে দিলেন। তার ভীতি কেটে গেল। তিনি খাদিজার নিকট পুরো ঘটনা খুলে বললেন এবং নিজের জীবনের আশঙ্কার কথা ব্যক্ত করলেন। খাদীজা বললেন : না, তা কখনো হতে পারে না। আল্লাহর কসম! তিনি আপনাকে লাঞ্ছিত করবেন না। আপনি আত্মীয়তার বন্ধন সুদৃঢ়কারী, গরিব-দঃখীর সাহায্যকারী, অতিথিপরায়ণ ও মানুষের বিপদে সাহায্যকারী। অতঃপর খাদীজা (রা.) রাসূলুল্লাহকে (সা.) সঙ্গে করে তার চাচাত ভাই ওয়ারাকা ইবন নওয়াফিলের নিকট নিয়ে যান। সেই জাহিলী যুগে তিনি খ্রিস্ট ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন। হিব্রু ভাষায় ইনজিল কিতাব লিখতেন। তখন তিনি বৃদ্ধ ও দৃষ্টিহীন। খাদিজা বললেন : ‘শুনুন তো আপনার ভাতিজা কি বলে।’ তিনি জিজ্ঞেস করলেন : ‘ভাতিজা তোমার বিষয়টি কি?’ রাসূলুল্লাহ (সা) পুরো ঘটনা বর্ণনা করলেন। সব কথা শুনে ওয়ারাকা বললেন : এত সেই ‘নামুস’ বা খোদার দূত-আল্লাহ যাকে মূসার (আ) নিকট পাঠিয়েছিলেন… ’ পবিত্র কুরআনুল কারীম নাজিলের সঙ্গে সম্পর্কিত অনেকগুলো ঘটনার নিবিড় সাক্ষী ও সহযোগী ছিলেন মা খাদিজাতুল কোবরা (রা.)। ইমাম যুহরী বলেন : খাদীজা (রা.) প্রথম ব্যক্তি, যিনি আল্লাহর প্রতি ঈমান আনেন। আল্লাহ পাক ইসলামের প্রতি, ইসলামের মহান নবীর প্রতি এ মহীয়সী মহিলার মতো আমাদেরও সর্বস্ব ত্যাগী হওয়ার তাওফিক দান করুন।


প্রকাশিত: এপ্রিল ১৮, ২০২৩ | সময়: ৫:২৯ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ