সর্বশেষ সংবাদ :

সুন্দরবন দিবসের ২১ বছর, অগ্রগতি নেই ‘খুলনা ঘোষণা’র

ঢাকা অফিস: বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবনকে রক্ষার জন্য ২০০১ সালে “খুলনা ঘোষণা” নামে ১৮ দফার সংরক্ষণ কৌশল দাবি করা হয়েছিল। সুন্দরবন দিবসে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমেদের ফিতা কাটা জাতীয় সম্মেলনের মাধ্যমে এ দাবি করা হয়। সুন্দরবন রক্ষায় ব্যাপক জনমত সৃষ্টির ফলশ্রুতিতে “খুলনা ঘোষণা” তখন ব্যাপক সমর্থন পায়। কিন্ত ২১ বছরেও সেই ঘোষণার বাস্তবায়ন হয়নি। বরং সুন্দরবনের সংকট এখন আরও ঘনীভূত হয়েছে। সুন্দরবনের নদী ভরাটের পাশাপাশি বাড়ছে দূষণে, সেই সঙ্গে রয়েছে ভাঙনও। বনের প্রাণায়ু বিপদগ্রস্ত হচ্ছে। উদ্ভিদবৈচিত্র্য কমে যাচ্ছে । উদ্ভিদ-প্রাণীর ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। সার্বিকভাবে সুন্দ্রবনের জগৎখ্যাত জীববৈচিত্র্য ক্রমেই ধ্বংস হচ্ছে। “খুলনা ঘোষণা”-এর ১৮ দফার প্রথমেই রয়েছে-সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের লক্ষ্যে এ অঞ্চলের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটাতে হবে। এরপরে রয়েছে- জাতীয় প্রতীক হিসেবে চিহ্নিত সুন্দরবনের রয়েল বেঙ্গল টাইগার রক্ষা, হরিণসহ সকল প্রকার প্রাণী হত্যা বন্ধ, যাবতীয় বেআইনি কার্যকলাপ বন্ধ, সুন্দরবনের পার্শ্ববর্তী এলাকায় উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণে যাতে সুন্দরবনের ওপর তার কোনো ক্ষতিকর প্রভাব না পড়ে সে ব্যবস্থা নেওয়া, আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্যের এ অপূর্ব সমাহারকে সংরক্ষণ, নবায়ন ও উন্নয়নের লক্ষ্যে যথোপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ এবং সুন্দরবনের পরিবেশ-প্রতিবেশ বিপন্নকারী যেকোনো কার্যকলাপ বন্ধ, আইনানুগভাবে সম্পদ আহরণকারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং যথার্থভাবে সুন্দরবন সংরক্ষণের পক্ষের শক্তি হিসাবে তাদেরকে বিকাশে সংগঠিত করা। ঘোষণায় আরও রয়েছে- বিশ্ব সংরক্ষণ এলাকা হিসাবে ঘোষিত সুন্দরবনের অংশে সব ধরনের সম্পদ আহরণ, সংরক্ষণ ও নবায়নের সুষ্ঠু নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন, বন ও বন্যপ্রাণী আইনকে আরও যুগোপযোগী ও প্রয়োগবাদী করা অথবা প্রয়োজনে সুন্দরবনের জন্য পৃথক আইন করা, সুন্দরবনের ভেতর বা পাশ দিয়ে প্রবাহিত নদ-নদীসমূহের প্রয়োজনীয় সংস্কার করা, বিশেষ করে গড়াই নদী শাসনের ব্যবস্থা ঢেলে সাজানো, সুন্দরবন এলাকায় চিংড়ির পোনা ধরার জন্য অন্যান্য কারণে মাছসহ বিভিন্ন জলজ সম্পদের যে অপূরণীয় ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে তা রোধ করা, সুন্দরবনকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ট্যুরিজম স্থান হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে পরিবেশসম্মত কর্মপদ্ধতি গ্রহণ করা।ঘোষণার একটি গুরুত্বপূর্ণ দফা ছিল- খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান, দক্ষতা ও আগ্রহ বিবেচনা করে সুন্দরবন বিষয়ক গবেষণা ও উন্নয়ন কার্যক্রমে প্রতিষ্ঠানকে বিশেষ ভূমিকা রাখার সুযোগ প্রদান করা। সুন্দরবনের সম্পদ ব্যবস্থাপনায়, বিশেষ করে সম্পদ ব্যবহার, নবায়ন ও সংরক্ষণে, বিভিন্ন সরকারী কর্মকাণ্ডে জনগণের ও সুশীল সমাজের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা, সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্যের সকল উপাদানসমূহের প্রজনন বা বংশবৃদ্ধি, রোগবালাইসহ যেকোনো কারণের কোনো একটি উপাদানের আধিক্য বা লোপসহ সকল প্রকার পরিবর্তন সঠিকভাবে শনাক্তকরণ ও তা প্রতিকার করা, সুন্দরবনের অবক্ষয় রোধকল্পে বনবিদ, শিক্ষাবিদ, গবেষক, পরিবেশবিদ, জাতীয় ও স্থানীয় এনজিও, সামাজিক প্রতিষ্ঠান ও জনপ্রতিনিধি সমন্বয়ে নির্বাহী ক্ষমতাসম্পন্ন সুন্দরবন ওয়াচ গ্রুপ বা সুন্দরবন পর্যবেক্ষক দল গঠন করা। এ দফাগুলো বাস্তবায়নের জন্য প্রতি বছরের ১৪ ফেব্রুয়ারি সুন্দরবন দিবস পালন করে সুন্দরবন একাডেমি। সুন্দরবন দিবসকে জাতীয় স্বীকৃতি দেয়ার জন্যও দাবি জানানো হয়। বছরের প্রায় প্রতিটি দিনই বাংলাদেশে কোনো না কোনো আন্তর্জাতিক দিবস বা জাতীয় দিবস উদযাপিত হচ্ছে। অনেক গুরুত্বহীন বিষয়েও বাংলাদেশে বিভিন্ন দিবস উদযাপন করা হয়। কিন্তু বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ এবং বাংলাদেশের জাতীয় বন হয়েও দুই দশকেরও বেশি সময়ে সুন্দরবনের জন্য একটি দিন বরাদ্দ করা সম্ভব হলো না। পর্যবেক্ষক মহলের ভাষ্যমতে, ২১ বছর আগে সুন্দরবন সুরক্ষায় ১৮ দফার আদলে যে কথাগুলো বলা হয়েছে সেগুলো সার্বিকভাবেই সুন্দরবনের জন্য কল্যাণকর হবে। সুন্দরবন একাডেমির উপদেষ্টা এবং রূপান্তরের নির্বাহী পরিচালক রফিকুল ইসলাম খোকন বলেন, “সুন্দরবনের সঙ্গে এ অঞ্চলের মানুষের জীবন প্রবাহ ওতোপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে। সুতরাং পরিবেশগত এবং অর্থনৈতিক মূল্য বিবেচনা করেই এ বনকে রক্ষা করতে হবে। কারণ খুলনা-বরিশাল উপকূলীয় অঞ্চলের কোটি কোটি মানুষের উপর সুন্দরবনের প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ প্রভাব রয়েছে। এছাড়া, সুন্দরবনকে আবর্তিত করেই যেন এখানকার পরিবেশ ও প্রতিবেশ ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে। তাই সুন্দরবন এ অঞ্চলের মানুষের বেঁচে থাকার প্রশ্নে প্রধান অবলম্বন।” সুন্দরবন একাডেমির নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক আনোয়ারুল কাদির বলেন, “বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য রক্ষা এবং অনন্যসুন্দর প্রাকৃতিক এ সম্পদ সংরক্ষণে দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে সুন্দরবন একাডেমির আয়োজনে খুলনাসহ সুন্দরবন সন্নিহিত জেলাসমূহে বেসরকারিভাবে সুন্দরবন দিবসের নানাবিধ কর্মসূচি পালিত হয়ে আসছে। দেশের সামগ্রিক পরিবেশসহ উপকূলীয় অঞ্চলের পরিবেশ এবং সুন্দরবননির্ভর মানুষের জীবিকা ও জীবন রক্ষায় সুন্দরবনের অসাধারণ ভূমিকা প্রশ্নাতীত।”


প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০২২ | সময়: ৩:২২ অপরাহ্ণ | সুমন শেখ

আরও খবর