আন্দোলন প্রত্যাহার করে নিলেন শাবি শিক্ষার্থীরা

ঢাকা অফিস: সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শাবি) উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগ দাবিতে চলমান আন্দোলন প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। শনিবার (১২ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের গোল চত্বরে এক সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন শিক্ষার্থীরা। সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীদের মুখপাত্র মোহাইমিনুল বাশার রাজ বলেন, “মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী ও শিক্ষা উপমন্ত্রী আমাদের দাবি পূরণের আশ্বাস দিয়েছেন। আমরা তাদের ওপর আস্থা রেখে আপাতত আন্দোলন প্রত্যাহার করে নিলাম এবং আমাদের দাবী পূরণের অপেক্ষায় থাকলাম। আগামীকাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ স্বাভাবিক করে ক্লাস-পরীক্ষা শুরুর আহ্বান জানাচ্ছি।” সংবাদ সম্মেলনে রাজ বলেন, “আপনারা সবাই অবগত আছেন গতকাল মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী এবং শিক্ষা উপমন্ত্রী মহোদয় আমাদের আমন্ত্রণে বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেছিলেন। তাদের সঙ্গে আমাদের দাবী নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা হয়েছে। তিনি আমাদের সকল দাবী আন্তরিকতার সঙ্গে শুনেছেন এবং আমাদের আলোচনা ফলপ্রসূ হয়েছে।” তিনি বলেন, “মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী এবং শিক্ষা উপমন্ত্রীর সঙ্গে আমাদের ছয়টি দাবি এবং দেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক উন্নয়নের বিষয়ে কিছু প্রস্তাবনা নিয়ে আলোচনা হয়। আমাদের প্রথম দাবি ছিল ভিসির পদত্যাগ। মাননীয় মন্ত্রী মহোদয় এই বিষয়ে বলেছেন, ‘ভিসির বিরুদ্ধে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের অভিযোগ আচার্যের কাছে উপস্থাপন করা হবে, আচার্য এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন।’ তাই আমরা আশা করছি মহামান্য আচার্য আমাদের শিক্ষার মান ও পরিবেশ নিশ্চিত করতে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে আমাদের কথা বিবেচনায় রাখবেন।” মোহাইমিনুল বাশার আরও বলেন, “শিক্ষার্থীদের উপর মামলার বিষয়ে মাননীয় মন্ত্রী বলেছেন শিক্ষার্থীদের উপর যে দুইটি মামলা হয়েছে সেটা অতি দ্রুত প্রত্যাহারের ব্যবস্থা করা হবে। বর্তমান ও প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের মোবাইল সিম ও মোবাইল ব্যাংকিং বন্ধ থাকার বিষয়ে মাননীয় মন্ত্রী মহোদয় বলেন, ‘আগামী তিন থেকে চার দিনের মধ্যে সকল নম্বর ও মোবাইল ব্যাংকিং সচল করা হবে। পুলিশের স্প্রিন্টারের আহত সজল কুণ্ডুসহ অনশনকারী সকল শিক্ষার্থীর সুচিকিৎসা চলমান আছে এবং থাকবে।’ এছাড়া মাননীয় মন্ত্রী সজল কুণ্ডুর শারীরিক অবস্থা বিবেচনায় তার চাকরীর ব্যবস্থা করার আশ্বাস দেন।”এর আগে ঘটনার ২৮ দিন পর ১২ ফেব্রুয়ারি এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের গুলি ও লাঠিপেটার ঘটনাকে “অনাকাঙ্ক্ষিত” বলে দুঃখ প্রকাশ করেন উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, “আমাদের প্রিয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘটে যাওয়া অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীসহ যারা আহত হয়েছেন, সবার প্রতি আমার আন্তরিক সমবেদনা ও সহমর্মিতা প্রকাশ করছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ অভিভাবক হিসেবে ঘটে যাওয়া অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার জন্য আমি আন্তরিকভাবে গভীর দুঃখ প্রকাশ করছি।” বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক অবস্থা দ্রুত ফিরিয়ে আনতে শিক্ষামন্ত্রীর নেতৃত্বে শিক্ষা উপমন্ত্রীসহ সরকারের সব স্তরের দায়িত্বশীল ব্যক্তিবর্গ, কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাসহ সিলেটের সুশীল সমাজের সবাইকে এবং বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থাসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের আন্তরিক ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতাও জানান তিনি। এর আগে শুক্রবার সন্ধ্যায় শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে মতবিনিময়ের সময় উপাচার্যকে গত ১৬ জানুয়ারি পুলিশি হামলার ঘটনায় দুঃখপ্রকাশ করে ক্ষমা চেয়ে বিবৃতি দেওয়ার পরামর্শ দেন শিক্ষামন্ত্রী। উল্লেখ্য, ১৬ জানুয়ারি প্রভোস্টবিরোধী আন্দোলনের সময় অবরুদ্ধ উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদকে মুক্ত করতে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায় পুলিশ। এতে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, পুলিশসহ অর্ধশতাধিক আহত হন। এ সময় আহত হন ছাত্র উপদেশ ও নির্দেশনা পরিচালক অধ্যাপক জহির উদ্দিন আহমেদ। হামলার পরপরই প্রভোস্ট বিরোধী আন্দোলন উপাচার্যবিরোধী আন্দোলনে রূপ নেয়। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, ছাত্র উপদেশ ও নির্দেশনা পরিচালকসহ বেশ কয়েকজন শিক্ষকের পদত্যাগ দাবি করে আন্দোলন শুরু করেন শিক্ষার্থীরা।


প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০২২ | সময়: ১:৩৭ অপরাহ্ণ | সুমন শেখ