সর্বশেষ সংবাদ :

জন্মনিবন্ধনে এত বেশি ভোগান্তি কেন?

মোঃ তারেক রহমান;

পাসপোর্ট, বিবাহ নিবন্ধন, মৃত্যুসনদ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি, জমি রেজিস্ট্রেশনসহ নানা গুরুত্বপূর্ণ কাজে জন্মসনদ প্রয়োজন হয় । কিন্তু নতুন করে জন্মনিবন্ধন সনদ নিতে অনেককেই ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে এখন । সনদ পেতে জুড়ে দেওয়া হয়েছে বেশ কয়েকটি শর্ত । এসব শর্ত পূরণ করতে গিয়ে অনেকেরই বেহাল অবস্থা, যেন জন্মনিবন্ধনের আরেক নাম যেনো ভোগান্তি।

পুরোনো থেকে নতুন সার্ভারে যাচ্ছে অনলাইনে জন্মনিবন্ধন ব্যবস্থা। আর এ ক্ষেত্রে দেখা দিয়েছে সার্ভারজনিত কারিগরি জটিলতা। ফলে দেশের অনেক স্থানেই জন্মনিবন্ধন করতে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে নাগরিকদের । ১৭টি সেবার ক্ষেত্রে জন্মসনদ বাধ্যতামূলক হওয়ায় মানুষ বাধ্য হয়ে অতিরিক্ত টাকা দিয়ে জন্মনিবন্ধন করছে । এরপরও জরুরি এই সনদ পেতে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে দেশের মানুষকে ।

গত বছর ১ জানুয়ারি থেকে নতুন নিয়ম কার্যকর হওয়ায় স্কুলে ভর্তির জন্য সন্তানের জন্মনিবন্ধন করাতে গিয়ে আটকা পড়েন অনেক পিতা মাতা। এর আগে মা-বাবার জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর দিয়েই যে কারও জন্মনিবন্ধন করা যেত। কিন্তু নতুন নিয়মে আগে বাবা-মায়ের জন্মনিবন্ধন করতে হয়, এরপর পাওয়া যায় সন্তানের জন্মসনদ ।

তবে সিটি কর্পোরেশন বলছে, সবাই যেন জন্মনিবন্ধনের আওতায় আসে, সেজন্য নিবন্ধনের আবেদনে কিছু বিষয় নতুন করে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে । নতুন নিয়ম অনুযায়ী যাদের জন্ম ২০০১ সালের পর, তাদের জন্মনিবন্ধনের জন্য বাবা-মায়ের জন্মসনদ বাধ্যতামূলক করা হয়। এর ফলে সন্তানের জন্মনিবন্ধন করাতে গিয়ে বিপাকে পড়ছেন অনেকেই। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের কয়েকটি আঞ্চলিক অফিসে নাগরিকদের ভোগান্তির কথা জানা যায়। ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করেও অনেকেই সনদ না নিয়ে ফিরে গেছেন। অনেকে আবার অভিযোগ করেছে, মাসের পর মাস ঘুরেও মিলছে না কাঙ্ক্ষিত জন্মসনদ । এ সনদ পেতে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে সব শ্রেণির মানুষকেই । এর মধ্যে সন্তানদের স্কুলে ভর্তির জন্য জন্মনিবন্ধন করাতে গিয়ে বেশি ঝামেলায় পড়তে হচ্ছে বাবা-মায়েদের। ঢাকা সিটিতে বসবাসরত নাগরিকদের স্থানীয় কমিশনারের প্রত্যয়নপত্র লাগে। বয়স্ক কেউ জন্মসনদ নিতে গেলে অতিরিক্ত টাকা গুনতে হচ্ছে । সেই সঙ্গে হয়রানি তো আছে । অনেক ইউনিয়নের তথ্য সেবাকেন্দ্র থেকে নোটিশ জারি করা হয়েছে । এতে বলা হয়েছে, সার্ভার আপডেট করার জন্য সমস্যা হচ্ছে, এ কারণে জন্মনিবন্ধন কার্যক্রম বন্ধ করা হয়েছে ।

প্রায় দেশের সবখানেই জন্মনিবন্ধন করতে গিয়ে ভোগান্তিতে পড়ছেন সেবাপ্রার্থীরা। ইন্টারনেটের গতি কম, সার্ভার খারাপ ইত্যাদি অজুহাত দেখিয়ে সেবাপ্রার্থীদের দিনের পর দিন ঘোরানো হয়। এমনও শোনা যাচ্ছে, কোনো কোনো কেন্দ্রে অসাধু কর্মকর্তাদের হাতে কিছু টাকা তুলে দিলেই জন্মসনদ পাওয়া যাচ্ছে। এ অবৈধ বাণিজ্য বন্ধে চাই আইনের কঠোর প্রয়োগ। নতুবা সবার মাঝে জেগে উঠবে অনীহা ।


প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৪, ২০২২ | সময়: ৮:২৬ অপরাহ্ণ | সুমন শেখ