বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ও মসলিন পুনরুদ্ধার প্রকল্পের প্রধান গবেষক মনজুর হোসেন বলেছেন, ঢাকাই মসলিন একটি ওয়ার্ল্ড ব্র্যান্ড। যার বাজার মূল্য বিলিয়ন ডলারের সমপরিমাণ। সরকারী ও বেসরকারী বিনিয়োগ আসলে এ খাত গার্মেন্টস খাতের ন্যায় অর্থনীতিতে বিশাল অবদান রাখতে পারবে। মসলিন পুনরুদ্ধার ও তার ভবিষ্যত বাজার সম্ভাবনা নিয়ে সোনালী সংবাদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব বলেন।
অধ্যাপক মনজুর হোসেন আরও বলেন, ঢাকাই মসলিনের বিশ্বব্যাপী পরিচিতি রয়েছে। এটির ওপর অনেকে বাইরের দেশের বড় বড় ব্যাবসায়ীদের নজর রয়েছে। ইতোমধ্যে দুই-তিনটি দেশের ব্যবসায়ী আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেছে।আমার এক বন্ধু আমেরিকায় থাকে, তার কয়েকজন বন্ধু মসলিন কাপড় বানিজ্যিক উৎপাদনে বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এছাড়া সরকারিভাবে মসলিন নিয়ে গবেষণা শুরু পূর্বে জাপানি এক বড় ব্যবসায়ী আমাকে মসলিন পুনরুদ্ধারের জন্য বলেছিল। তিনি এ শাড়ি নিয়ে বিশ্বব্যাপী ব্যবসা করতে চায়।
প্রসঙ্গত, সম্প্রতি বাংলাদেশ সরকারের বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে একদল গবেষক ১৭০ বছর পূর্বে হারিয়ে যাওয়া বাঙালি মসলিন শাড়ি পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছে। এজন্য গবেষক দলের সময় লেগেছে দীর্ঘ ছয় বছর। এ গবেষক দলের নেতৃত্ব দিয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক মনজুর হোসেন।
প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালে রেশম চাষ কমে গিয়েছিল। মোট চাহিদার মাত্র ১০% রেশম দেশে উৎপাদন হতো। ওই বছরের অক্টোবরে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় পরিদর্শনে আসেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি রেশম উৎপাদন বৃদ্ধি ও ঢাকাইয়া মসলিন ফিরিয়ে আনার কথা বলেন। বাংলাদেশের কোন কোনা এলাকায় মসলিন সুতো তৈরি হতো তা জেনে নতুন করে মসলিন উদ্ধারের নির্দেশনাও দেন। সেই নির্দেশনা অনুযায়ী বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ও সচিবের পরামর্শেই অধ্যাপক মনজুর হোসেন এর নেতৃত্বে একদল গবেষক কাজ শুরু করে। পুরো গবেষণা দলে ৬ টি প্রতিষ্ঠানের ১৮জন গবেষক কাজ করেন। তারা সম্পূর্ণ কাজকে দুটি ভাগে বিভক্ত করে। একভাগে ছিল মসলিন তৈরি জন্য প্রয়োজনীয় কার্পাস তুলা খুঁজে বের করা। অন্য অংশে ছিল তুলা থেকে সুতা উৎপাদন করে মসলিন কাপড় তৈরি করা।
জিআই স্বীকৃতির জন্য সরকারকে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে এ গবেষক আরও বলেন, ঢাকাই মসলিনের জিআই স্বীকৃতির জন্য আবেদন করা হয়েছে। যদি এটি আমরা পেয়ে যাই। তবে বিশ্বের অন্যকোন দেশ আমাদের অনুমোদন ছাড়া তৈরি করতে পারবে না। এর ফলে একস্বত্ত্বের কারনে আমরা অর্থনৈতিকভাবে বেশ লাভবান হতে পারবো বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
মসলিন শাড়ির নমুন দেখতে গবেষকরা যুক্তরাজ্যের ভিক্টোরিয়া অ্যান্ড আলবার্ট মিউজিয়ামে যায়। সেখান থেকে মসলিন কাপড়ের ডিএনএ বের করে সিকোন্সে বের করা হয়। যার সঙ্গে কাপাসিয়ার একটি কার্পাস তুলার মিল পাওয়া যায়।পরে গুটি কার্পাস তুলার এই জাত বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের গবেষণা মাঠে লাগাই। সুতা সংগ্রহ ও শাড়ি বুননের জন্য জন্য আলাদা প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। যার প্রেক্ষিতে ছয়টি শাড়িও তৈরি করা হয়। বাঙালি ফিরে পেল তার হারানো ঐতিহ্য ঢাকাই মসলিন।