নতুন বছরে তারুণ্যের প্রত্যাশা

২০২২! নতুন বছর এলে আমরা অপূরণীয় অনেক স্বপ্ন দেখি। সব ধরনের স্থবিরতা কাটিয়ে নতুন বছর সবার জীবনে বয়ে আনুক অনাবিল আনন্দ। দেশে ফিরে আসুক শান্তি, সমৃদ্ধি, স্বস্তি ও গতিময়তা। নতুন বছরকে নিয়ে এমনটাই প্রত্যাশা সবার। ২০২২ সালকে নিয়ে প্রত্যাশার প্রাপ্তিতে যোগ হয়েছে নতুন মাত্রা। করোনাময় বছরে প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির স্মৃতি পেছনে ফেলে নতুন বছরে নতুন আশায় বুক বাঁধছেন বিশ্ববাসী। পিছিয়ে নেই বাংলাদেশের তরুণরাও। নতুন বছরে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যয়নরত কয়েকজন তরুণ শিক্ষার্থীর ভাবনা, প্রত্যাশা-প্রাপ্তি আর স্বপ্নের কথা তুলে ধরেছেন একই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও ক্যাম্পাস সাংবাদিক মেহেরাবুল ইসলাম সৌদিপ।
নতুনকে আঁকড়ে জীবন গড়ি
দেখতে দেখতে ২০২১ কে বিদায় দিয়ে ক্যালেন্ডারের পাতায় যুক্ত হলো নতুন আরেকটি বছর। করোনার ধকলকে পাশ কাটিয়ে সবাই উদগ্রীব হয়ে ছিল নতুন বছরকে বরণ করে নেয়ার জন্য। শীতের আমেজের সাথে নতুন বছরের ফানুস উড়ানো, আতশবাজি আর প্রদীপ জ্বালিয়ে নতুন বছরকে বরণ করে নেয়া কিছুটা হলেও মানুষকে করোনার বিষণ্নতা কাটিয়ে নতুন করে এগিয়ে যেতে উৎসাহ যুগিয়েছে। পুরনো সব ভুল-ভ্রান্তি, হতাশা-গ্লানি, স্মৃতি  আর না পাওয়াকে ছেড়ে ফেলে নতুন উদ্দীপনা, প্রত্যাশায় সামনে এগিয়ে যেতে হবে। নতুন বছরের নতুন সূর্য আমাদেরকে স্বপ্ন পূরণের, দৃঢ় মনোবলে সামনে এগিয়ে যাওয়ার সাহস যোগায়। করোনা মহামারীর ভয়াল থাবা আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, শিল্প প্রতিষ্ঠান, যোগাযোগ ব্যবস্থা সর্বোপরি আমাদের আর্থসামাজিক জীবনকে দুমড়ে মুচড়ে দিয়েছে। নতুন বছরে এসব প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে দেশ সামনে এগিয়ে যাক এমনটাই কাম্য। তবে বিগত বছরের বড় অর্জন পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল,  রুপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মতো প্রকল্পগুলো এবছর আমাদের জীবনে অগ্রযাত্রার নতুন পথ উন্মোচন করবে।  শিক্ষাঙ্গন শিক্ষার্থীদের পদচারণায় আবার মুখর হয়ে উঠবে, পৃথিবী তার চিরচেনা রূপে ফিরে আসবে, মৃত্যুর মিছিলে যুক্ত হবে না নতুন কোন সংখ্যা নতুন বছরে এমনটাই প্রত্যাশা সবার।
ববিতা মন্ডল সোমা
শিক্ষার্থী, ফার্মেসী বিভাগ
নতুন বছরে ফিরে আসুক শিক্ষার প্রাণচাঞ্চল্য
কালের পরিক্রমায় আরো একটি বছর বিদায় নিয়ে শুরু হয়েছে নতুন বছর। নতুন বছর মানেই নতুন এক আশা, নতুন এক উদ্দীপনা। করোনাকালীন ভয়াবহ সময় পেরিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো সবেমাত্র চালু হয়েছে। ছাত্রছাত্রীদের পদচারণায় আবার মুখরিত হয়ে উঠেছে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণ। সাধারণত একজন শিক্ষার্থীর প্রধান লক্ষ্য থাকে পড়াশোনা শেষ করে দেশের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করা। কিন্তু এই মহামারীর কারণে এতদিন লেখাপড়া থেকে দূরে থাকায় বেশিরভাগ শিক্ষার্থীই পড়াশোনায় পিছিয়ে পড়েছে৷ অনেকে লেখাপড়া শেষ করেও কর্মজীবনে স্বাভাবিকভাবে প্রবেশ করতে পারছেনা। তাই প্রত্যেক শিক্ষার্থীর জীবনে শিক্ষার চাঞ্চল্যতা আগের মত ফিরে আসুক এবং পুরোনো দিনের হতাশা-গ্লানি কাটিয়ে নতুনভাবে এগিয়ে যাক এটাই প্রত্যাশা।
শেখ শাহরিয়ার হোসেন
শিক্ষার্থী, সমাজকর্ম বিভাগ
ব্যর্থতাকে শক্তি করব এগিয়ে যেতে হবে
আমাদের প্রতিনিয়ত চলার পথে হাজারো ব্যর্থতা, বাধার সৃষ্টি হয়। যা আমাদের সামনে এগিয়ে যেতে অনেকটা পিছিয়ে দেয়। অতীতের সকল বাঁধা, ব্যর্থতাকে নিজের চলার শক্তির হিসেবে গড়ে নিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে হবে। হতাশায় না পড়ে, সকল সমস্যাকে সমাধানের চেষ্টা করা। অতীতে কি হারালাম, কি পেলাম সেসব নিয়ে হতাশায় না পড়ে, সামনে কিভাবে নিজেকে এগিয়ে নেয়া যায়, নিজের কাজের মাধ্যমে নিজের, পরিবার, সমাজের, দেশের এবং বিশ্বের এগিয়ে চলায় সামিল হওয়া। হার জিত জীবনে থাকবে, তা নিয়ে হতাশায় না পড়ে সেই হার জিতকে নিজের চলার শক্তিতে পরিণত করে সামনে এগিয়ে যাওয়া। পৃথিবীতে সকল সফল ব্যক্তির সাফল্যের পিছনে তাদের জীবনের প্রথম দিকের হারই শক্তিতে পরিণত হয়েছে। আমরাও আমাদের জীবনকে তুচ্ছ না ভেবে, এর সঠিক ব্যবহার করে নিজেদেরকে আত্মবিশ্বাসী হিসেবে গড়ে তুলে বিশ্ববাসীর সাফল্যের সামনের কাতারের আমরাও হয়ে উঠতে পারি একজন।
আনতাজ হেনা আখি
শিক্ষার্থী, মনোবিজ্ঞান বিভাগ
নতুনরূপে শুরু হোক নতুন বছর
কালের গর্ভে বিলীন হয়ে গেল আরেকটি বছর। অতীতের সব গ্লানি, দুঃখ-কষ্ট আর প্রত্যাশা-প্রাপ্তির টানা পোড়নে পুরনো বছরকে বিদায় দিয়ে নতুন বছরের আগমন। নতুন বছরের উদিত সূর্যের নব আভা আমাদের মনে সঞ্চার করুক নতুন প্রাণশক্তি। দেশের ক্রমবর্ধমান উন্নতি অব্যাহত থেকে একটি ভালোবাসার বাংলাদেশ গড়ে উঠুক। পদ্মাসেতু ও মেট্রোরেলের বাস্তবায়ন, ডিজিটালাইজেশনে বাংলাদেশের প্রবেশসহ মাাপিছু আয় বৃদ্ধি আমাদের দেশের জন্য বেশ গৌরবের। আসছে নতুন বছরে প্রত্যাশা করি- করোনা মহামারি চিরতরে বিদায় নিক। সবাই সবার স্বাভাবিক জীবনযাপনে ফিরে আসুক। শিক্ষা কার্যক্রম আরো ত্বরান্বিত হোক। সব পণ্যের দাম নাগালের মধ্যে আসুক। বাংলাদেশের হোক আরো সমৃদ্ধময়। সর্বোপরি সবকিছু ভালো ঘটুক।
সাগর সরকার
শিক্ষার্থী, সমাজবিজ্ঞান বিভাগ
ভালো থাকি, ভালো রাখি
অনেক প্রত্যাশা আর সম্ভাবনা নিয়ে হাজির হয় নতুন বছর। একটি দেশের সমৃদ্ধিতে তারুণ্যের আশা-আকাঙ্ক্ষা, চিন্তাচেতনা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। বিগত বছরটিতে প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি প্রভৃতি বিষয় নিয়ে নতুন উদ্দীপনা ও সম্ভাবনার দ্বার খুলে যায় তরুণদের সামনে। বিশ্বের একটি দ্রুত উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশ আমাদের অহঙ্কার। দেশের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখার জন্য আমাদের প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণের পাশাপাশি তার যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। যেমন, আমরা রান্নার পর চুলা জ্বালিয়ে রাখার ব্যাপারে সচেতন হতে পারি। আমরা আমাদের দেশকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে পারি। নয়তো বায়ুদূষণে আমাদের এই সুজলা সুফলা দেশটা কেমন বিবর্ণ হয়ে যাবে। পাশাপাশি নিজে ভালো আর সুস্থ থাকি। অন্যদেরও ভালো রাখি। নতুন বছরে এটাই প্রত্যাশা।
মীম আফরোজ রাই
শিক্ষার্থী, উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগ
প্রাপ্তি-সাফল্যে কাটুক ২০২২
নতুন বছর প্রতি মানুষের জীবনে প্রশান্তির বাতাস বয়ে নিয়ে আসে। সারাবিশ্বে খুব উৎসাহ, উদ্দীপনার মধ্যে ইংরেজি নববর্ষ উৎযাপন হয়। নববর্ষ অতীত ছেড়ে অপূর্ণ আশার বার্তা নিয়ে আসে। অতীত জীবনের ভুল ত্রুটি, ব্যর্থতা, হতাশার গ্লানি মুছে ভবিষ্যত জীবন সুখ-শান্তিতে পূর্ণতা ফিরে পাক সবাই। পূরণ হোক মানুষের মনের সব অপূর্ণ চাওয়া। ২০২১ সাল খুব মলিন ছিল করোনা ভাইরাসের সংক্রমণে। মানুষের স্বাভাবিক জনজীবনে বাধাগ্রস্ত করেছে। কিন্তু নতুন বছর ২০২২ কে সাদর সম্ভাষণ জানাই। নতুন বছর থেকে বিশ্বের প্রতিটি জাতির প্রাণে আনন্দ ধারা বয়ে যাক অবিরাম, অন্তহীন অগ্রযাত্রায়। ভালবাসার স্পন্দনে মেতে উঠুক শিশু, প্রাপ্ত বয়স্ক, বৃদ্ধ মানুষের কোমলমতি  হৃদয়ে।
মো. আবদুল্লাহ আলমামুন
শিক্ষার্থী, সমাজবিজ্ঞান বিভাগ
অতীতের শিক্ষা হোক ভবিষ্যতের পাথেয়
২০২১ সাল আমাদের জীবনে অনেক গুলো সুখস্মৃতি দুঃস্মৃতির ঘটনা রেখে গেছে। অনেক গুলো ভয়ানক রোগের সাথে পরিচিত হয়েছি আমরা। এই রোগ গুলো আমদেরকে জানিয়ে  গেছে পৃথিবীতে কেউ আমরা নিরাপদ নয়। জীবন প্রদীপ যেকোনো সময় নিভে যেতে পারে। যার দরুন আমাদের পৃথিবীকে নিয়ে আরও অনেক ভাবনার বিষয় আছে সেটাও জানিয়ে গেছে। অনেক গুলো অশনিসংকেত এর একটি হলো করোনা। যার ভয়াল রুপ গোটা বিশ্ব দেখেছে। আমরা যদি এখনই সচেতন না হই তাহলে অদুর ভবিষৎ এরচেয়ে ভয়ংকর অবস্থার সম্মুখীন হতে হবে। কেননা প্রতিনিয়ত পৃথিবীর জলবায়ু পরিবর্তন হয়েই যাচ্ছে। নদী ভাঙন, নিম্নাঞ্চল তলিয়ে যাও, অতিবৃষ্টি-অনাবৃষ্টি ইত্যাদি দুর্যোগে বিপর্যস্ত হয়ে যেতে পারে আমাদের গ্রহ। তাই অতীতের এর ভুল গুলো শুধরিয়ে ভবিষ্যৎ অধিক বাসযোগ্য পৃথিবী হোক এটাই কাম্য। নতুন বছর থেকে নতুন ভাবে শুরু হোক আমদের প্রতিটি পদক্ষেপ। সেই সাথে আমাদের প্রিয় মাতৃভুমির কল্যাণে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করতে হবে।
ইসমাইল জাবিউল্লাহ
শিক্ষার্থী, আইন বিভাগ
প্রত্যাশাগুলো পূর্ণ হোক নতুনরূপে
দেখতে দেখতে একুশের শোকআশ্রিত দিনগুলোকে বিদায় জানিয়ে আবারো হাজির হলো নতুন ২০২২। পরস্পরের প্রতি যে শ্রদ্ধা ভালোবাসা ও আশাগুলো ছিলো যা অপূর্ণ রয়ে গেছে সেগুলোই যেন নতুন বছরে পূরন হোক। নতুন বছর সকলের জন্য নিয়ে আসুক অনাবিল হাসি আর আনন্দ। তমসার মহাপ্রলয় প্রহর কেটে রাঙা প্রভাত এর আগমন হোক সকলের জীবনে। নিষ্পেষিত কলুষিত পাপীতাপীর সকালগুলো সেজে ওঠুক রঙিন ছন্দের কবিতায়। সকলের সব প্রত্যাশাগুলো নতুনের রং তুলির আচড়ে পূর্ণ হোক। সবার অনাগত দিনগুলি রক্তিমাবর্নিত হোক।
সানজিদা মাহমুদ মিষ্টি
শিক্ষার্থী, শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট

প্রকাশিত: জানুয়ারি ৫, ২০২২ | সময়: ৯:৩০ অপরাহ্ণ | সুমন শেখ