সর্বশেষ সংবাদ :

কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক’র দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী আজ

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক:
বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান কথাসাহিত্যক হাসান আজিজুল হক’র দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী আজ (১৫ নভেম্বর) । তিনি একাধারে গল্প, উপন্যাস ও প্রবন্ধ লিখেছেন। বাংলা সাহিত্যে অবদানের জন্য বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার, একুশে পদক ও স্বাধীনতা পুরস্কারসহ নানা গৌরবের অধিকারী ছিলেন।

 

তিনি, ১৯৩৯ খ্রিষ্টাব্দের ২ ফেব্রুয়ারি বর্তমান ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার যবগ্রামে এক সম্ভ্রান্ত এবং একান্নবর্তী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন এবং ২০২১ সালের ১৫ নভেম্বর দীর্ঘদিন বিভিন্ন অসুস্থতায় থাকার পর রাজশাহীতে মৃত্যুবরণ করেন। তাকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে সমাধিস্থ করা হয়।

 

 

হাসান আজিজুল হক ছিলেন, বাংলাদেশের একজন অন্যতম ঔপন্যাসিক ও ছোট গল্পকার। তবে কথাসাহিত্যিক হিসেবে তার খ্যাতি ছিল আকাশচুম্বী। এখনো আছে। ষাটের দশকে আবির্ভূত এই কথাসাহিত্যিক তাঁর সুঠাম গদ্য এবং মর্মস্পর্শী বর্ণনাভঙ্গির জন্য প্রসিদ্ধ। জীবনসংগ্রামে লিপ্ত মানুষের কথকতা তার গল্প-উপন্যাসের প্রধানতম অনুষঙ্গ। রাঢ়বঙ্গ তার অনেক গল্পের পটভূমি। এই অসামান্য গদ্যশিল্পী তার সার্বজৈবনিক সাহিত্যচর্চার স্বীকৃতি স্বরূপ ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে “সাহিত্যরত্ন” উপাধি লাভ করেন। আগুনপাখি (২০০৬) আজিজুল হক রচিত প্রথম উপন্যাস। তিনি ১৯৭০ সালে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার লাভ করেন। বাংলাদেশ সরকার তাকে ১৯৯৯ সালে একুশে পদকে ও ২০১৯ সালে স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত করে।

 

প্রথম যৌবনেই ছাত্র রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েছিলেন তিনি। রাজনীতি করার কারণেই পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হাতে চরম নির্যাতন ভোগ করেন। ১৯৫৮ সালে রাজশাহী সরকারি কলেজে থেকে দর্শন-এ সম্মানসহ স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৬০ সালে তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি পিএইচডি অধ্যয়নের জন্য অস্ট্রেলিয়া গিয়েছিলেন এবং মেলবোর্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে কিছু দিন অধ্যয়ন করেছিলেন। কিন্তু বিদেশের পরিবেশ ভালো না-লাগায় অধ্যয়ন শেষ না-করেই দেশে ফিরে আসেন।

 

১৯৭৩ -এ তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগে অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন। এ বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০০৪ সাল পর্যন্ত একনাগাড়ে ৩১ বছর অধ্যাপনা করেন। ২০০৯-এ তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বঙ্গবন্ধু চেয়ার পদের জন্য মনোনীত হন এবং দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৪ এর আগস্ট এ তিনি বাংলাদেশ প্রগতি লেখক সংঘ এর সভাপতি নির্বাচিত হন। তার নিজস্ব বাসভবন ‘উজান’ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর্ব দিকে ‘বিহাস’-এ।

 

 

রাজশাহী কলেজে পড়ার সময় কলেজের উদ্যমী তরুণ মিসবাহুল আজীমের সম্পাদনায় প্রকাশিত ভাঁজপত্র ‘চারপাতা’য় হাসানের প্রথম লেখা ছাপা হয়, লেখাটির বিষয় ছিল রাজশাহীর আমের মাহাত্ম্য। তবে সিকান্দার আবু জাফর সম্পাদিত সমকাল পত্রিকায় পত্রিকায় ১৯৬০ সালে ‘শকুন’ শীর্ষক গল্প প্রকাশের মধ্য দিয়ে হাসান আজিজুল হক সাহিত্যাঙ্গনে তার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। তবে কৈশোর জীবনেই তার সাহিত্যচর্চার হাতেখড়ি। তিনি যখন কাশীশ্বরী উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র তখন ঐ স্কুলে রাজা সৌমেন্দ্র চন্দ্র নন্দীর আগমন উপলক্ষ্যে একটি সম্বর্ধনাপত্র রচনার মধ্য দিয়ে তার লেখালেখি জীবনের শুরু। এছাড়া প্রবেশিকা পাশের পরপরই তিনি লেখেন ‘মাটি ও মানুষ’ শীর্ষক একটি উপন্যাস; যে রচনাটি অদ্যাবধি অপ্রকাশিত। ‘শকুন’ গল্পটি প্রকাশের আগেই ১৯৫৬ সালে নাসির উদ্দিন আহমেদ সম্পাদিত ‘মুকুল’ পত্রিকায় তার ‘মাটি ও পাহাড়’ শীর্ষক একটি গল্প প্রকাশিত হয়েছিল। এছাড়া বিএল কলেজবার্ষিকীতে তার ‘লাঠি’ শীর্ষক একটি ছোটগল্প এবং ‘সাগর পারের পাখিরা’ শীর্ষক একটি কবিতা প্রকাশের কথাও জানা যায়। এ সময় ‘পাষাণ বেদী’ নামে একটি গল্পও প্রকাশ পেয়েছিল অন্য একটি কলেজবার্ষিকীতে। সাহিত্যচর্চার প্রথম দিকে হাসান আজিজুল হক কবিতা রচনায়ও আগ্রহী হয়েছিলেন। ‘বিনতা রায় : আমি’, ‘নিরর্থক’, ‘গ্রামে এলাম’, ‘দিনাবসান’, ‘কথা থাক’, ‘রবীন্দ্রনাথ’ প্রভৃতি কবিতা তিনি ১৯৫৭ সালে রচনা করেছিলেন। তিনি ১৯৫৭ সালে ‘শামুক’ শীর্ষক একটি উপন্যাস রচনা করে ‘মানিক স্মৃতি উপন্যাস প্রতিযোগিতা’য় অংশগ্রহণ করেন।

সানশাইন / শামি


প্রকাশিত: নভেম্বর ১৫, ২০২৩ | সময়: ৬:০৯ অপরাহ্ণ | Daily Sunshine