
সানশাইন ডেস্ক : জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান ও বিরোধী দলীয় উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ কাদের বলেছেন, ‘রাজনীতির মাঠে এখন আর রাজনীতিবিদরা নেই। রাজনীতির মাঠে খেলছে আমলারা, রাজনীতিবিদরা লাইনে বসে খেলা দেখছেন।’
রবিবার (২৭ ডিসেম্বর) দুপুরে জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যানের বনানী অফিস মিলনায়তনে জাতীয় পার্টি খুলনা বিভাগ আয়োজিত পোস্টার ও ক্যালেন্ডার বিতরণ এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
গোলাম মোহাম্মদ কাদের বলেন, ‘সংবিধান অনুযায়ী দেশের মালিক হচ্ছেন জনগণ। তাদের ভোটে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরাই দেশ পরিচালনা করার কথা। কিন্তু কাজকর্মে এমপি সাহেবদের খবরই নেই। সচিব সাহেবরা সব কাজ করেন, মন্ত্রী মহোদয়রা শুধু জানতে চান।’
তিনিত বলেন, ‘জনপ্রতিনিধিরাই জনগণের দুঃখ-কষ্ট সবচেয়ে ভালো বোঝেন। তারাই জনগণের বেশি উপকার করতে পারেন। আমলারা হচ্ছে রোবটের মত, তারা একটি গন্ডির ভেতরে কাজ করতে অভ্যস্ত।’
প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্য তিনি বলেন, ‘আমলারা রাজনীতিবিদদের মত সাধারণ মানুষের দুঃখ-কষ্ট বোঝে না। নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মূল্য দিন। জনপ্রতিনিধিরা সুযোগ পেলে দেশের মানুষের অনেক বেশি উপকার হবে। জনপ্রতিনিধিদের উপেক্ষা করে আমলাদের দিয়ে দেশ পরিচালনা কখনোই মঙ্গলজনক হবে না।’
এসময় জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান বলেন, ‘পল্লীবন্ধু এরশাদ সাধারণ মানুষের ভোটে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের দিয়ে দেশ পরিচালনা করেছেন। তখন উপজেলা পরিষদ ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানদের অধীনে আমলারা কাজ করেছেন। জনপ্রতিনিধিদের নির্দেশনায় কাজ করেছেন আমলারা। কিন্তু এখন উল্টে গেছে সবকিছু। উপজেলা চেয়ারম্যান হচ্ছেন “চেয়ারম্যান” মানে চেয়ারে বসে থাকবেন। আর উপজেলা পরিষদ চালাচ্ছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার। উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের কথা ইউএনও সাহেব শুনলে ভালো, না শুনলে কিছুই করার নেই। জনপ্রতিনিধিরা যদি দেশ পরিচালনা করতে না পারে তা সংবিধান পরিপন্থি।’
জাপার নেতা বলেন, ‘জাতীয় পার্টিকে একটি ব্যান্ড হিসেবে তৈরি করা হবে। জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীদের সম্মান করবে দেশের জনসাধারণ। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি ১৯৯১ সালের পর থেকে জাতীয় পার্টিকে ধ্বংস করতে অনেক ষড়যন্ত্র করেছে। জাতীয় পার্টিকে অনেক দুর্বল করেছে। কিন্তু পল্লীবন্ধুর প্রতি মানুষের ভালোবাসা আর জাতীয় পার্টির প্রতি গভীর আস্থার কারণে জাতীয় পার্টি আবারো ঘুরে দাঁড়িয়েছে। দেশের মানুষ দুটি রাজনৈতিক দলের দুঃশাসন থেকে মুক্তি পেতে চায়। জনসাধারণ চায় জাতীয় পার্টির রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পাক। কারণ, আওয়ামী লীগ ও বিএনপির শাসনামলের চেয়ে জাতীয় পার্টির শাসনামলে তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি সুশাসন ছিলো। আর এ কারণেই জাতীয় পার্টি দেশের সব চেয়ে বেশি সম্ভাবনাময় রাজনৈতিক শক্তি।’
জাতীয় পার্টির খুলনা বিভাগীয় অতিরিক্ত মহাসচিব সাহিদুর রহমান টেপা-র সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় জাতীয় পার্টি মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু বলেন, ‘এখনও চলন্ত বাসে নারী ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে। নারী ও শিশু নির্যাতন অনেক দিন ধরেই চলছে, এটা বিচ্ছিন্ন কোনও ঘটনা নয়।’
তিনি বলেন, ‘করোনার প্রকোপ বাড়ছে কিন্তু সাধারণ মানুষের জন্য কোনও চিকিৎসা নেই। সংবিধান স্বীকৃত অধিকার বঞ্চিত হচ্ছে মানুষ। প্রচণ্ড শীতে একটি কম্বলের জন্য মানুষের মাঝে হাহাকার উঠেছে। আবার কেউ কেউ হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করছে। বৈষম্যের জন্য মুক্তিযোদ্ধারা জীবনবাজি রেখে যুদ্ধ করেনি।’
যারা দেশের টাকা বিদেশে পাচার করেছে তাদের পরিচয় প্রকাশ করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান জাতীয় পার্টি মহাসচিব।
তিনি বলেন, ‘দুর্নীতি, দুঃশাসন, অন্যায়, অবিচার, বিচারহীনতার সংস্কৃতি, ও অপসংস্কৃতি বন্ধ করে পল্লীবন্ধুর স্বপ্নে নতুন বাংলাদেশ গড়তেই জাতীয় পার্টির রাজনীতি।’
এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু, প্রেসিডিয়াম সদস্য সাহিদুর রহমান টেপা, সুনীল শুভরায়, বীরমুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব আব্দুস সাত্তার মিয়া, চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা শেরিফা কাদের, মাহমুদুর রহমান মাহমুদ, নাজনিন সুলতানা, যুগ্ম মহাসচিব শেখ মুহাম্মদ আলমগীর হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ মঞ্জুর হোসেন মঞ্জু, হুমায়ুন খান, এডভোকেট জহিরুল হক জহির, সাইফুদ্দিন খালেদ, সম্পাদমন্ডলীর সদস্য সুলতান মাহমুদ, এম.এ. রাজ্জাক খান, সুমন আশরাফ, এস.এম. আল জুবায়ের, কেন্দ্রীয় নেতা শেখ হুমায়ুন কবির শাওন, জিয়াউর রহমান বিপুল, এড. এমদাদ, বিষ্ণুপদ রায় প্রমুখ।
এছাড়াও খুলনা বিভাগের নেতৃবৃন্দের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন নাফিজ আহমেদ খান টিটু, রাশেদ মাজমাদার, হাজী মোশাররফ হোসেন, মো. সাইফুল ইসলাম সেলিম, কামরুজ্জামান টিটু, ইসহাক মোল্লা, মুশফিকুর রহমান মুশফিকসহ প্রমুখ নেতৃবৃন্দ।
সানশাইন/২৭ ডিসেম্বর/রনি