
সানশাইন ডেস্ক: সরলপুর ব্যান্ডের ‘যুবতি রাধে’ গানটি নিয়ে সম্প্রতি বাংলা একাডেমির ফোকলোর উপবিভাগের সহপরিচালক সাইমন জাকারিয়ার বক্তব্যকে ‘নিরপেক্ষ নয়’ বলে দাবি করেছে সরলপুর ব্যান্ড। দলটির ভোকাল ও বাংলাদেশ আইডল খ্যাত মার্জিয়া আমিন তুরিন ফেসবুক লাইভে এসে এমনটা জানান।
এই কণ্ঠশিল্পী বলেন, সাইমন জাকারিয়া নিরপেক্ষ গবেষক নন, কেননা তিনি তার বক্তব্যে বিভিন্ন গবেষণা থেকে যেসব তথ্যাদি প্রকাশ করেছেন তার সঙ্গে সরলপুর ব্যান্ডের গানের কথার হুবহু কোনো মিল নেই। যেসব লোকসাহিত্য সংগ্রহ উপস্থাপন করেছেন তার কোনোটার সঙ্গে কোনোটির হুবহু মিল নেই। ফলে, আমরা বলতে পারি দুটি মিথিক্যাল ক্যারেক্টার রাধা-কৃষ্ণর প্রেমলীলা নিয়ে যুগ যুগ ধরে অসংখ্য সৃষ্টি হয়েছে। আমরাও তাদের প্রেমোপাখ্যানের কাহিনি অক্ষুণ্ন রেখে আমাদের মতো করে গানটি রচনা করেছি। যা কথায়-সুরে ও যন্ত্রানুষঙ্গে এটি একটি মৌলিক কম্পোজিশন হিসেবে কপিরাইট পাওয়ার যৌক্তিক ও নৈতিক দাবি রাখে। যা অতীতেও সুমী মির্জা নামে এক শিল্পীর অজ্ঞতাবশত অভিযোগের ভিত্তিতে কপিরাইট অফিস যথাযথ বিবেচনা করে দুটি শুনানির মধ্য দিয়ে আমাদের সনদ বহাল রেখেছে। তারা কিছু না জেনেই রায় দিয়েছে?
‘আইপিডিসি আমাদের গান’ নামে একটি সংগীত প্রকল্পে পার্থ বড়ুয়ার সংগীতায়োজনে জনপ্রিয় তারকা চঞ্চল চৌধুরী ও মেহের আফরোজ শাওনের কণ্ঠে সরলপুর ব্যান্ডের ‘যুবতি রাধে’ গানটি নকলের দায়ে কপিরাইট প্রয়োগ করে ইউটিউব ও আইপিডিসির ফেসবুক পেজ থেকে সরিয়ে নেয় সরলপুর ব্যান্ড। পরবর্তীতে লোকগবেষক সাইমন জাকারিয়া একটি ভিডিও প্রকাশের মধ্য দিয়ে সরলপুর ব্যান্ডের গানটি বিভিন্ন লোকসাহ্যিতের অংশ বলে প্রমাণ হাজির করেন। যার পরিপ্রেক্ষিতে সৃষ্ট বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে সরলপুর ব্যান্ড ফেসবুক লাইভে তাদের অবস্থান তুলে ধরে।
ফেসবুক লাইভে সাইমন জাকারিয়ার ভিডিওটিকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও এর নিরপেক্ষ অবস্থানকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুরিন বলেন, সাইমন জাকারিয়া যে ভিডিওটি প্রকাশ করেছেন, সেখানে তিনি একটি গান প্রমাণস্বরূপ উপস্থাপন করে বলেছেন—যুগ যুগ ধরে আমাদের গানটি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিভিন্ন কীর্তনে গাওয়া হয়ে আসছে। অথচ ভিডিওটি ২০২০ সালের ১২ এপ্রিল ইউটিউবে প্রকাশ করা হয়েছে। যাতে আমাদের গানটিই হুবহু গেয়েছে নবনিত্য সম্প্রদায় বলে একটি গোষ্ঠি। আমরা মনে করি, কোনো দায়িত্বশীল গবেষকের উচিত সচেতনভাবে এ ধরণের অমার্জনীয় অপরাধ না করা। কিংবা ভুল হলেও তা পরবর্তীতে সংশোধন করে নিজের নিরপেক্ষতা প্রমাণ করা। কিন্তু তিনি তা করেননি। এতেই প্রমাণিত হয়, তিনি নিরপেক্ষ গবেষক নন। তার গবেষণার পেছনে কারো স্বার্থ লুকায়িত।
অন্যদিকে এক বিবৃতিতে সরলপুর ব্যান্ড জানায়, আইনি প্রক্রিয়ায় তাদের পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। তবে এখন পর্যন্ত তারা বরাবরের মতো কপিরাইট অফিসের প্রতিই আস্থা রাখছে। অন্যথায় আদালতে যেতে সমস্ত আইনি ভিত্তি তাদের আছে এবং তারা সম্পূর্ণ প্রস্তুত বলে জানিয়েছে।
সরলপুর ব্যান্ড তাদের গানটিকে কথায়-সুরে একটি মৌলিক কম্পোজিশন হিসেবে দাবি করে গানটির মেধাস্বত্ব রক্ষায় দেশের সংগীতবোদ্ধা, ব্যান্ড সংগঠন বামবাসহ গীতিকার ও সুরকার সংগঠনগুলোর নিরপেক্ষ সহযোগিতা কামনা করেছে। শুধু তাই নয়, ২০১০ সালে গানটি সরলপুর প্রকাশের পূর্বে অন্য কোথাও তাদের গানটির অস্তিত্ব খুঁজে পেলে তাও সকলের সামনে উপস্থাপনের আহ্বান জানিয়েছে।
একটি সংবাদমাধ্যমে মেহের আফরোজ শাওন জানান, ছোটবেলায় এই গানের সঙ্গে নেচেছেন তিনি। বিষয়টি উল্লেখ করে তুরিন বলেন, কোন গানের সঙ্গে নেচেছেন তিনি? গসিপ না ছড়িয়ে তা সবার সামনে হাজির করুন। কোথাও কি তার কোনো অস্তিত্ব আছে?
সমালোচকদের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে সরলপুর বলে, আমাদের গানটি তারা হুবহু মেরে দিয়েছে। চুরি ঢাকতে এখন বিভিন্ন গবেষণাপত্র এনে হাজির করছে তারা। আমাদের গানটি চুরি না করে তারাই কি পারতেন না সেসব থেকে নিজের মতো করে কিছু সৃষ্টি করতে? আপনারাই ভেবে দেখুন কার নিন্দিত হওয়ার কথা? আমরা কি তারকাখ্যাতির কাছে হেরে যাব? অগ্রজরাই যদি আমাদের পথে কাঁটা বিছিয়ে দেন তাহলে নতুন গানের দল, নতুন গান কিংবা শিল্প কি করে সৃষ্টি হবে?
জানা যায়, সম্প্রতি আইপিডিসি কর্তৃক কপিরাইট অফিস বরাবর সরলপুরের গানটি নিয়ে একটি অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে। তার বিপরীতে সরলপুর ব্যান্ড তাদের যৌক্তিক অবস্থান তুলে ধরতে প্রস্তুত বলে জানিয়েছে দলটি। পাশাপাশি কপিরাইট আইন লংঘনের অভিযোগে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থাও নিতে যাচ্ছে তারা।
সানশাইন/২৪ নভেম্বর/রনি