শনিবার, ১৯শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ৬ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ।
ক্ষোভে, প্রতিরোধে উত্তাল ৫ মার্চ, ১৯৭১। বাঙালির চোখে শুধুই স্বাধীনতার স্বপ্ন। দেশজুড়ে মিছিল, মিটিং, বিক্ষোভ। আগুনঝরা মার্চেও তারিখ এগোনের সঙ্গে সঙ্গে আন্দোলনের গতি তীব্র হচ্ছিল। চারদিকে স্বাধিকার আন্দোলন জোরদার করার কাজ চলছে। অসহযোগ আন্দোলন এগিয়ে যায় স্বাধীনতার অবশ্যম্ভাবী ও যৌক্তিক পরিণতির দিকে। কিন্তু ঘাতকের বুলেট মৃত্যুর মিছিল বাড়িয়ে দিলেও রুখতে পারেনি মুক্তিকামী বাঙালির উত্তাল আন্দোলন।
‘বীর বাঙালি অস্ত্র ধরো, বাংলাদেশ স্বাধীন করো’- স্লোগানে প্রকম্পিত টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়ার রাজপথ। অন্যদিকে লাকনায় ভুট্টোর প্রাসাদে ইয়াহিয়া-ভুট্টো ডুয়েল ষড়যন্ত্রে ২০ হাজার বাঙালির লাশ হলেই আন্দোলন থেমে যাবে- ভুট্টোর এই অভিলাষ বাস্তবায়ন করতে নেমে পড়ে পাক হানাদার বাহিনী। রক্তে রঞ্জিত হয় রাজপথ।
একাত্তরের এই দিনে, ৫ মার্চ চট্টগ্রামে স্বাধীনতার জন্য প্রাণ দেন ২২২ বীর বাঙালি। তাদের রক্তে ভেসে যায় বীর চট্টলার রাজপথ। টঙ্গীতে গুলিবর্ষণে হতাহত হয় ১৮ জন। যশোরেও নিহত হন মুক্তিকামী এক বাঙালি যুবক। এমন গণহত্যার সংবাদে রাজধানীসহ সারাদেশে মানুষ প্রতিবাদে ফেটে পড়ে, মিছিল-প্রতিবাদ সভায় কেঁপে ওঠে অত্যাচারী শাসকের ভিত। এদিনে ঘটে এক অবিশ্বাস্য ঘটনা। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার ভেঙে ৩২৫ কয়েদি মিছিল করে শহীদ মিনারে চলে আসে এবং স্বাধীনতা সংগ্রামে যোগ দেয়। অবশ্য কারাগারের ফটক ভাঙার সময় প্রহরীর গুলিতে সাত কয়েদিকে প্রাণ হারাতে হয়। কয়েদিদের এ আন্দোলন সারাদেশের মুক্তিকামী জনতার আন্দোলনে নতুন মাত্রা যোগ করে। জনতা টঙ্গী ব্রিজের কাঠের অংশ উপড়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। ব্যারিকেড দিয়ে বন্ধ করে দেয় রাস্তা। চট্টগ্রামে বাঙালি-বিহারি সংঘর্ষ এবং সামরিক জান্তার গুলিতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ২২ জনে। রাজশাহী এবং যশোরেও মুক্তিকামী জনতার মিছিলে সেনাবাহিনীর গুলিতে হতাহত হয় অনেকে।
জনতার ওপর গুলিবর্ষণের প্রতিবাদে একাত্তরের এদিনে পালিত হয় দেশব্যাপী সর্বাত্মক হরতাল। মুক্তিকামী বাঙালির উত্তাল ও অপ্রতিরোধ্য দুর্বার আন্দোলনে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর ভিত নড়ে ওঠে। নিরীহ মানুষের ওপর গুলিবর্ষণ থেকে শুরু করে সব ধরনের অত্যাচার-নির্যাতনের মাত্রা বাড়লেও দমেনি বাংলার প্রতিবাদী মানুষ। ঐতিহাসিক মার্চের এই দিনে ঘটে আরও অনেক উল্লেখযোগ্য ঘটনা। জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিত করার ঘোষণাকে অবাঞ্ছিত ও অগণতান্ত্রিক ঘোষণা করে বেলুচিস্তান ন্যাপ।
৫ মার্চ সারাদেশ থেকে মুক্তিকামী জনতার ওপর পাকিস্তানিদের লেলিয়ে দেয়া পুলিশ বাহিনীর গুলিবর্ষণের খবর আসতে থাকে। কিন্তু সময় যত গড়াচ্ছিল মুক্তিকামী জনতার উত্তাল আন্দোলন তত অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠছিল। মুক্তিকামী জনতা এদিন অপ্রতিরোধ্য আন্দোলনের ঐতিহাসিক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন।