মঙ্গলবার, ১৮ই মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ৪ঠা চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ।
মতলুব হোসেন, জয়পুরহাট: নির্মাণের ৫ বছর পেরিয়ে গেলেও চালু হয়নি জয়পুরহাট পৌরসভার আধুনিক স্যানিটারি ল্যান্ড ফিল্ড ও পয়োবর্জ পরিশোধনাগার। জয়পুরহাট পৌর শহরকে পরিচ্ছন্ন রাখতে আধুনিক পয়োবর্জ পরিশোধনাগারটি চালু না হওয়ায় পৌরসভার অতীতের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অব্যবস্থাপনাকে দায়ি করছেন স্থানীয়রা। তদন্ত করে পয়োবর্জ পরিশোধনাগারটি দ্রুত চালুর দাবি জানান এলাকাবাসীরা।
বর্তমানে শহরের ময়লা আবর্জনাগুলো শহর থেকে তুলে পাহারপুর রোডের খনজনপুর এলাকায় অপরিকল্পিত ভাবে পৌরসভার ভাগাড়ে ফেলা হয়। এতে ব্যাপক দুর্গন্ধ ও পরিবেশ দুষণ হওয়ায় স্বাস্থ্য ঝুঁকি হচ্ছে অভিযোগ এলাকাবাসীর। সমস্যা সমাধানে হিচমী-হিলি বাইপাস কাদিরপুরের স্থায়ী নির্মিত পয়োবর্জ পরিশোধনাগারটি দ্রুত চালুর আশ্বাস পৌর সংশ্লিষ্টদের।
জানা গেছে, তৃতীয় নগর পরিচালনা ও অবকাঠামো উন্নতি করণ সেক্টর প্রকল্পের জয়পুরহাট পৌরসভার আধুনিক স্যানিটারি ল্যান্ড ফিল্ড ও পয়োবর্জ পরিশোধনাগারের কাজ ২০১৮ সালের ১০ আগস্ট শুরু হয়। এর আগে ৪.৯০ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয় ১ কোটি ৩৯ লাখ ৮২ হাজার ৯২২ টাকায়। এরপর ৫ কোটি ৭১ লাখ ৮০ হাজার ১শ টাকা ব্যয়ে ২০১৯ সালের ১০ আগস্ট নির্মাণ সম্পন্ন করার পর পয়োবর্জ্য পরিশোধনাগারটি বুঝিয়ে নেন পৌরসভা।
স্থানীয়দের অভিযোগ, নির্মাণের পর থেকে এই পয়োবর্জ্য পরিশোধনাগারটির কার্যক্রম দৃশ্যমান দেখতে পাননি এলাকাবাসী। আর এতে শহরের যত্রতত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে ময়লা আবর্জনা তুলে পয়োবর্জ পরিশোধনাগারটিতে না ফেলে ফেলা হয় পাহারপুর রোডের খনজনপুর এলাকায় অপরিকল্পিত ভাবে পৌরসভার ভাগাড়ে। সরকারের কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত প্রতিষ্ঠানটি চালু না হওয়ায় ক্ষুব্ধ স্থানীয়রা। দ্রুত চালু করে পরিচ্ছন্ন ও স্বাস্থ্য সম্মত শহর গড়ার দাবি জানান এলাকাবাসী।
পাহারপুর রোডের পৌরসভার খনজনপুর ময়লার ভাগার এলাকার পথচারী মাহবুব হাসান, মোস্তাকিম হোসেন বলেন, এই রোড দিয়ে দেশের ঐতিহাসিক পাহারপুরে পর্যটক সহ নওগাঁ, রাজশাহী, চাপাইনবাবগঞ্জ, নাটোর সহ বিভিন্ন এলাকার যানবাহন ও সাধারণ মানুষ চলাচল করে। কিন্তু যাওয়া আসার সময় যে প্রচন্ড দুর্গন্ধ, এই দুর্গন্ধে দম বন্ধ হয়ে যায়।
স্থানীয় শহিদুল, মারুফা আক্তার, মর্জিনা সহ অনেকে বলেন, এই ময়লার ভাগারের কারণে আমাদের চরম সমস্যা। প্রায় ২০ বছর ধরে শহরের সব ময়লা আবর্জনা এই ভাগারে ফেলা হয়। দুর্গন্ধে আমাদের বসবাস করা অযোগ্য হয়ে পড়েছে, ছোট বাচ্চাদের আরও সমস্যা, আমাদের স্বাস্থ্য ঝুকির মধ্যে পড়ছে। অথচ কয়েক বছর আগে কাদিরপুরে কোটি কোটি টাকা খরচ করে পয়োবর্জ পরিশোধনাগার করে ফেলে রাখা হয়েছে।
কড়ই কাদিরপুর এলাকার আনোয়ার সাদাত, মনোয়ার হোসেন, আব্দুল মুমিন বলেন, পয়োবর্জ পরিশোধনাগারটি নির্মাণ করার পর ৫-৬ বছর হলো পড়ে আছে। এখানকার কোন কাজ আমরা দৃশ্যমাণ দেখিনি। সরকারের কোটি কোটি টাকা খরচ করে ফেলে রাখছে। পৌরসভার গাফিলতির কারণে প্রতিষ্ঠানটি চালু হয়নি। প্রতিষ্ঠানটি চালু হলে এলাকা উন্নত হবে, কিছু মানুষের কর্মসংস্থান হবে। অবশ্যই এটি তদন্ত করা দরকার কেন চালু হলোনা।
জয়পুরহাট পৌরসভার পয়োবর্জ পরিশোধনাগারের দায়িত্বে থাকা কর্মচারি ফারুক হোসেন বলেন, এই প্রকল্পের শুরু থেকে আমি আছি। কাজ শেষ হয়েছে ৫ বছর আগে। কিন্তু কবে এটা চালু হবে আমি বলতে পারবোনা। এটা পৌরসভার উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ বলতে পারবে। তারা আমাদের যেভাবে নির্দেশনা দেয় আমরা সেভাবে চলি।
জয়পুরহাট পৌরসভার উপ-সহকারী প্রকৌশলী (সিভিল) বলেন, এখানে একটি কার্যক্রম চালু আছে। আর শহরের যে বর্জ সরবরাহ করার পর সেখানে ফেলা হয়না। কারণ সেখানে বিভিন্ন বর্জ্য, পলিথিন, প্লাস্টিক বা অন্যান্য আবর্জনাগুলো বাছাইয়ের জন্য কোন প্রযুক্তির ব্যবহার নেই। এ কারণে চালু করা সম্ভব হয়নি।