ই-পেপার

রাজশাহী কলেজে বসন্তের আবাহন: রঙে, সুরে, আনন্দে হৃদয়-নৃত্য

স্টাফ রিপোর্টার:

ফাল্গুনের উষ্ণ পরশ লেগেছে রাজশাহী কলেজের আঙিনায়। প্রকৃতির রঙিন আঁচলে আজ লেগেছে বসন্তের ছোঁয়া। দখিনা বাতাসে উড়ছে শাড়ির আঁচল, কোকিলের কুহুতানে সাড়া দিয়ে তরুণ হৃদয় গুনগুনিয়ে উঠছে ভালোবাসার সুরে। কুয়াশার চাদর সরিয়ে বসন্ত এসে হাজির হয়েছে নতুন প্রাণের আহ্বান নিয়ে।

 

বসন্ত এসেছে ১৪ ফেব্রুয়ারি, তবে এবছর ১৪ ফেব্রুয়ারি শবে বরাত থাকার কারণে ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের প্রতি সম্মান জানিয়ে রাজশাহী কলেজের শিক্ষার্থীরা বসন্ত উৎসব উদযাপন করেছে দুই দিন পরে ১৬ ফেব্রুয়ারি।দেরিতে বসন্ত উৎসব উদযাপন কারণে অপেক্ষার যে রঙ, সেই রঙেই যেন বসন্ত আজ আরও বেশি উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে।

 

গাছের ডালে নতুন কচি পাতা, ডালে ডালে আগুনরাঙ্গা পলাশ আর শিমুলের উচ্ছ্বাস, বাতাসে মৃদু মধুর কোকিলের ডাক, সব মিলিয়ে রাজশাহী কলেজ যেন প্রকৃতির এক চিত্রশালা হয়ে উঠেছে।

 

সকাল ১১টা থেকে শুরু হয়েছে অনুষ্ঠানের আনন্দের ঝরনা। ক্যাম্পাস মুখরিত গানের সুরে, রঙিন শাড়ি-পাঞ্জাবিতে শিক্ষার্থীরা যেন জীবন্ত ক্যানভাসের মতো ঘুরে বেড়াচ্ছে কলেজের আনাচে-কানাচে। হাতে আর খোপায় বাসন্তী ফুল, ঠোঁটে হাসির রং, আর মনে এক অদ্ভুত উচ্ছ্বাস , বসন্ত মানেই তো এমন।

 

বসন্ত বরণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মো. যহুর আলী, উপাধ্যক্ষ মো. ইব্রাহিম আলী সহ বাংলা বিভাগের অন্যান্য শিক্ষকবৃন্দ। অধ্যক্ষ যহুর আলী তাঁর বক্তব্যে বলেন, সংস্কৃতি লালন করাই আমাদের দায়িত্ব। বসন্ত উৎসব কোনো একদিনের আনন্দ নয়, এটি আমাদের হাজার বছরের ঐতিহ্যের অংশ। আজকের এই দিনটি যেন সবার হৃদয়ে আনন্দের রং ছড়িয়ে দেয়, সেটাই আমাদের প্রত্যাশা।

 

বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের রাজশাহী কলেজ শাখার সেক্রেটারি মোশাররফ হোসেন বলেন—

প্রতিবছর ১৪ ফেব্রুয়ারি বসন্ত উৎসব হলেও এবার শবে বরাত থাকায় কলেজ প্রশাসন দুই দিন পর আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেয়। এতে প্রমাণ হয়, আমরা প্রত্যেকেই একে অপরের ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল।

 

এ দিকে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল রাজশাহী কলেজের আহ্বায়ক খালিদ বিন ওয়ালিদ আবির বলেন, এবার বসন্তবরণ একটু আলাদা। কারণ আমরা স্বাধীন দেশে বসন্ত বরণ করছি। তবে শবে বরাতের রাতে উৎসব না করে সকালে করলে ভালো হতো বলেই আমি মনে করি। তবুও আনন্দের কোনো কমতি নেই।”

 

 

উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী অয়ন বলেন, আজকের অনুষ্ঠান দারুণ উপভোগ করছি। রঙিন শাড়ি, বাসন্তী ফুল, গান আর আনন্দে দিনটি অন্যরকম হয়ে উঠেছে। ধর্মকে সম্মান জানিয়ে দুদিন পর বসন্ত উদযাপন হলেও উৎসবের উচ্ছ্বাস একটুও কমেনি।

 

সন্মান দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আল-মাহমুদ বলেন,

বসন্তবরণ শুধু একটি উৎসব নয়, এটি আমাদের সংস্কৃতিরই অংশ। তবে যদি আয়োজন বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত হতো, তাহলে আরও বেশি উপভোগ্য হতো।

 

 

বসন্ত মানে শুধু রঙের উৎসব নয়, এটি পারস্পরিক সম্প্রীতিরও প্রতিচ্ছবি। এই দিনে কলেজ প্রাঙ্গণে ভর্তি ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের সহায়তায় হেল্প ডেস্ক পরিচালনায় দেখা যায় ছাত্রদল ও ছাত্রশিবিরের দুই সংগঠনকে। বসন্তের মতোই তাদের এই সহমর্মিতা যেন সবার মনে আশার বাতিঘর হয়ে জ্বলে থাকে।

 

 

আজকের এই দিনটি শুধু একটি উৎসব নয়, এটি এক ভালোবাসার উৎসব। প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের মিলনের উৎসব। কচি পাতার কচকচে হাসির উৎসব। গাছের কচি পাতায় লেগেছে ফাগুনের ছোঁয়া, চারদিকে ফুটেছে বাহারি ফুল, বাতাসে ভেসে আসছে কোকিলের কুহুতান, এই সবকিছু মিলিয়ে রাজশাহী কলেজে সৃষ্টি হয়েছে এক অনন্য বসন্তবরণ আয়োজন। রঙ, গান আর প্রাণের স্পন্দনে বসন্ত যেন সত্যিই তার আগমনী বার্তা দিয়ে গেছে শিক্ষার্থীদের হৃদয়ে।

 

সানশাইন /জুলইকরাম ফেরদৌস/রাজ


প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০২৫ | সময়: ৭:৪৪ অপরাহ্ণ | Daily Sunshine