মঙ্গলবার, ১৮ই মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ৪ঠা চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ।
রকিবুল হাসান, পুঠিয়া: রাজশাহীর পুঠিয়ায় ভূমি কর্মকর্তাদের অনিয়ম ও গাফিলতির কারণে, ফসলি জমিগুলোতে পুকুর খনন করে জমির আকার পরিবর্তন করা হচ্ছে। পুকুরগুলো বাণিজ্যিক ভাবে মাছ চাষ করা হচ্ছে। আর পুকুরের খাজনা আদায় করা হচ্ছে ধানী জমি হিসাবে। এতে করে সরকারের প্রতিবছর বাণিজ্যিক পুকুরগুলো হতে মোটাঅংকের রাজস্ব আদায় হতে বঞ্চিত হচ্ছে।
জানা গেছে, পুঠিয়া উপজেলার মোট কৃষি জমির পরিমাণ ৩৬ হাজার ৫৬৫ একর। উপজেলার ছয়টি ইউপির মধ্যে মোট চারটি ইউনিয়ান ভূমি অফিস রয়েছে। ভূমি অফিসগুলোর অধিনে গত কয়েক বছরে প্রায় ১৩ হাজার একর ধানী, ফলের বাগান, ভিটা জমিতে পুকুর খনন করা হয়েছে। এরমধ্যে শিলমাড়িয়া ও ভালুকগাছি ইউপিতে প্রায় ১১ হাজার একর ধানী জমিতে পুকুর খনন করা হয়েছে। তবে গত কয়েক বছরে মোট কত একর জমিতে পুকুর খনন করা হয়েছে তার সঠিক কোনো পরিসংখ্যান উপজেলা ভূমি অফিস দিতে পারেনি।
উপজেলা ভূমি অফিস বলছে, সরকারী নিয়ম অনুসারে ১৪২২বাংলা সাল থেকে ধানী জমি প্রতি শতাংশ দুই টাকা হারে খাজনা ধার্য করা হয়েছে। বাণিজ্যিক পুকুরের খাজনা ধরা হয়েছে প্রতি শতাংশ পৌর এলাকায় ৪০ টাকা, ইউনিয়ন এলাকায় ৩০ টাকা হারে। সরকার প্রতিবছর নতুন খননকৃত উপজেলার বানিজ্যিক পুকুরগুলো হতে মোটা অংকের রাজস্ব আদায় হতে বঞ্চিত হচ্ছে।
শিলমাড়িয়া ইউনিয়নের পচামাড়িয়া এলাকার কৃষক জমির উদ্দিন বলেন, এই এলাকায় গত কয়েক বছরে কী পরিমাণ নতুন পুকুর খনন করা হয়েছে। তা সঠিক বলা খুব কঠিন। তবে শিলমাড়িয়ার অধিকাংশ ধানী জমিগুলো বর্তমানে নতুন করে পুকুর খনন করা হয়েছে।
শিলমাড়িয়ার ছত্রারপাড়া গ্রামে সামছুদ্দিন নামের ব্যক্তি বলেন, জমির মালিকরা বেশি লাভের আশায়, পুকুর খননকারীদের সঙ্গে চুক্তি করে খনন করে নিয়েছেন। পরবর্তী সময়ে মৎস্য চাষীরা বাণিজ্যিক ভাবে মাছ চাষ করছে। এমন কিছু বিলের পানি বাহির হওয়ার স্থানে পুকুর খনন করা হয়েছে। যা আগামী বর্ষা মৌসুমের অনেকের জমির পানি বাহির হতে পারবে না এবং জলাবদ্ধ হয়ে থাকবে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, অতীতের ও বর্তমান রাজনৈতিক দলের নেতারা, ইউনিয়ন ভূমি অফিসের অসাধু কর্মচারীকে বার্ষিক ভাবে টাকার সুবিধা দিলে, নতুন পুকুর খনন করা পুকুরগুলো ধানী জমি হিসাবে দাওশিলদারা খাজনা আদায় করছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপজেলার এক উধর্বতন কর্মকর্তা বলেন, আমরা রাজনৈতিক চাপের কারণে, পুকুর খনন করতে দিতে হচ্ছে। নেতাদের আত্মীয়স্বজন এবং কাছের মানুষগুলো পুকুর খননের মাটি ইটভাটায় বিক্রি করে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়ে যাচ্ছে। তারপর বিভিন্ন মহল হতে আমাদের ওপর চাপসৃষ্টি করছে। আমরা এই এলাকায় চাকরি করতে এসেছি।
মোল্লাপাড়া ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম বলেন, অর্থের বিনিময় বাণিজ্যিক পুকুরগুলোকে ধানী জমির খাজনা নেওয়ার বিষয়টি সম্পন্ন মিথ্যা। গত কয়েক বছরের মধ্যে যে নতুন পুকুর খনন হয়েছে তার বেশিরভাগ ধানী হিসাবে খাজনা আদায় করা হয়েছে। বর্তমানে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে নতুন পুকুর খননের হিড়িক পড়েছে। আমরা পূর্বের তালিকা অনুযায়ী ধানী হিসাবে খাজনা আদায় করছি।
মোল্লাপাড়া ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা প্রনব কুমার বলেন, পুকুর মালিকরা জমির আকার পরিবর্তন জন্য, কোনো আবেদন আমাদের নিকট জমা দেয়নি। বাধ্য হয়ে আমরা ধানী জমি হিসাবে খাজনা আদায় করছি। নতুন পুকুর খনন ও খাজনা বিষয়গুলো জেলা প্রশাসক ও উপজেলা ভূমি কর্মকর্তার নির্দেশনা না দেওয়ার পর্যন্ত পুরাতন নিয়ম অনুসারে খাজনা আদায় করা হচ্ছে।
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা তানজিমুল ইসলাম বলেন, উপজেলায় কোথায় নতুন পুকুর খনন হচ্ছে তা আমাদের কেউ জানায় না।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা স্মৃতি রানী সরকার বলেন, কোথায় পুকুর খনন করা হচ্ছে তা আমাদের জানা নেই। কৃষি শুমারি অনুযায়ী উপজেলার ফসলি জমি নির্ধারণ হয়ে থাকে।
এ ব্যাপারে উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) দেবাশীষ বসাক বলেন, জমির শ্রেণি যা-ই থাক না কেন। জমির বর্তমান আকৃতি অনুযায়ী খাজনা আদায় করার জন্য ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তাদের আদেশ দেওয়া হয়েছে।