ই-পেপার

বাঘায় গাছে গাছে সুরোভিত মুকুল : পরিচর্যায় ব্যস্ত কৃষক

নুরুজ্জামান, বাঘা:

আম প্রধান এলাকা রাজশাহীর বাঘা উপজেলার বিভিন্ন বাগানে এখন মুকুলের মৌ-মৌ গন্ধ। যে কারো প্রাণ জুড়িয়ে যাবে। কোন কোন গাছ থেকে ক্ষুদ্র আকারে মুকুল বের হচ্ছে, আবার কোন-কোন গাছে পরিপূর্ণ মুকুল এসে গেছে। ফলে বাগান পরিচর্যায় এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন বাগান মালিক ও ব্যবসায়ীরা। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে আমের ভালো ফলনের আশা করছেন স্থানীয় কৃষি বিভাগ। তাঁদের দেয়া তথ্য মতে, গত কয়েক বছর থেকে বাঘার আম বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে।

 

রাস্তার দুই ধারে সারি সারি আম বাগান আর সুস্বাদু-বাহারি জাতের আমের কথা উঠলেই চলে আসে রাজশাহী অঞ্চলের নাম। এই জেলাকে আমের জন্য বিখ্যাত বলা হলেও মূলত আম প্রধান অঞ্চল হিসাবে বিখ্যাত জেলার বাঘা-চারঘাট ও পুঠিয়া উপজেলা। এ অঞ্চলের কৃষকরা জানান, গত বছর অধিকাংশ বাগানে ভালো আম হয়নি। ফলে এ বছর সকল বাগানে পরিপূর্ণ মুকুল বের হচ্ছে। আম চাষীদের মতে, এখন পর্যন্ত আবহাওয়ার যে অবস্থা তাতে বিগত বছরের তুলনায় এবার আমের মুকুল ভাল হবে।

 

বাঘার (বয়স্ক) মুরব্বি লোকজন জানান, এ উপজেলায় প্রত্নতাত্বিক নিদর্শন ৫০০ বছরের পুরোনো ঐতিহাসিক বাঘা শাহী মসজিদ। এই মসজিদের শিলা লিপিতে আমের ছবি ঐতিহ্য বহন করছে। ১৫২৩-১২২৪ খিস্টাব্দে (হিজরি-৯৩০) হোসেন শাহ্ এর পূত্র নুসরাত শাহ শাহী মসজিদ নির্মান করেন। এই শাহী মসজিদে চুন-সুড়কি দিয়ে গাথা পোড়া ইটের শিলা-লিপিতেও আমের টেরাকোটা অঙ্কিত আছে। যা থেকে প্রমাণিত হয় বাঘার আমের সুখ্যাতি প্রাচীন আমল থেকে স্বীকৃত।

 

তাঁরা আরো বলেন, এই মুহুর্তে গাছে গাছে ফুটছে আমের মুকুল। চারদিকে ছড়িয়ে পড়ছে এই মুকুলের পাগল করা ঘ্রাণ। বাতাসে মিশে সৃষ্টি করছে মৌ-মৌ গন্ধ। যে গন্ধ মানুষের মনকে বিমোহিত করছে। পাশাপাশি মধুমাসের আগমনী বার্তাও জানান দিচ্ছে আম্র কাননের।

 

উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহী জেলার ৯ টি উপজেলার মধ্যে ৮ টিতে যে পরিমান আম বাগার রয়েছে। তার সম-পরিমান বাগান রয়েছে কেবল বাঘা উপজেলায়। এখানকার প্রধান অর্থকারী ফসল আম। শুধু তাই নয়, বাঘার আমের খ্যাতি সারা দেশ জুড়ে। ঢাকার বাজারে অন্য যে কোন জেলা-উপজেলার চেয়ে বাঘার আমের দাম সব সময় বেশি। গত ৭-৮ বছর থেকে এখান কার আম রপ্তানি হচ্ছে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে। আমকে ঘিরে প্রতি মৌসুমে বাঘা এলাকায় অন্তত ২৫টি ছোট-বড় আমের বাজার (হাট) বসে। এর মধ্যে বড় বাজার বসে বাঘা সদর, মনিগ্রাম, বিনোদপুর, বাউসা, আড়ানী, পাকুড়িয়া ও পুঠিয়া উপজেলার বানেশ্বর বাজারে। সেই হাটে পাশ্ববর্তী চারঘাট থেকেও আম যায়।

 

স্থানীয় লোকজন জানান, এ বছর আম পাড়ার পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত যদি আবহাওয়া ভাল থাকে এবং রাজনৈতিক পরিস্থিতি শান্ত থাকে তাহলে এবার যে হারে গাছে মুকুল আসতে শুরু করেছে তাতে করে আম বিক্রি হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। এ অঞ্চলের আমের মধ্যে-ফজলি, হিমসাগর, গোপাল ভোগ, ল্যাংড়ার, আড়াজম, আম্রপালি ও আশ্বিনা আমের নাম শোনা যায় সবার মুখে-মুখে। এ ছাড়াও বৌ-ভুলানী, রানী পছন্দ, জামাইখুসি, বৃন্দাবন, লকনা, বোম্বাই খিরসা, মহনভোগ, সেনরি, ব্যানানা, খিরসা পাত, বৃন্দাবনী, ও কালীভোগ-সহ প্রায় দেড়’ থেকে দুইশ জাতের আম রয়েছে। প্রতিবছর আম মৌসুমে এ উপজেলায় প্রায় লাধিক মানুষের কর্মসংস্থান হয়। এ ছাড়াও কৃষি মেলায় দেখা যায় দুইশ জাতের আম।

 

এ অঞ্চলের আম বাগান মালিকরা জানান, প্রতি বছর মাঘের শুরুতে আম গাছের ডালে ডালে মুকুল ফুটতে শুরু করে। এ দিক থেকে বাগান মালিক ও ব্যবসায়ীরা মুকুলের পরিচর্যা শুরু করেছেন। তাঁদের মতে, এবার পরিপূর্ণ মুকুল ফুটে গুটি বের হতে ফালগুন চলে আসবে। এখানে আঞ্চলিক ভাবে প্রবাদ রয়েছে, ‘আমের আনা মাছের পাই, টিকলে পরে কে কত খাই।’আম চাষীদের মতে, গাছে-গাছে যে পরিমাণ মুকুল আসে, তার সিকিভাগ (২৫%) টিকে গেলেও আমের বাম্পার ফলন হবে। উপজেলার আমোদপুর গ্রামের সফল আম চাষি শামসুল হক জানান, গাছে মুকুল আসার পর থেকে আম পাড়া পর্যন্ত ৫ থেকে ৬ বার কীটনাশক প্রয়োগ করতে হয়। তাতে হেক্টরে ৩৮ থেকে ৪৫ হাজার টাকার বালাইনাশক লাগে।

 

বাঘা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শফিউল্লাহ্ সুলতান বলেন, বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে আম চাষ করলে এর উৎপাদন যেমন বাড়বে, তেমনি সঠিক ভাবে সংরণ এবং পরিবহন, রপ্তানি-সহ বাজারজাত করলে কৃষকরা ব্যপক হারে লাভবান হবেন। তিনি উন্নত পদ্ধতিতে আম চাষ ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য কৃষকদের নানা পরামর্শ দেয়ার ফলে গত ৭-৮ বছর থেকে বাঘার আম বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

সানশাইন/রাজন


প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ৭, ২০২৫ | সময়: ৬:৪২ অপরাহ্ণ | Daily Sunshine