ই-পেপার

পুলিশের মনোবল পুনরুদ্ধারে আমরা বদ্ধপরিকর: আইজিপি

স্টাফ রিপোর্টার: রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ (আরএমপি) এবং রাজশাহী রেঞ্জ পুলিশের যৌথ উদ্যোগে বিশেষ কল্যাণ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। রাজশাহী পুলিশ লাইন্স ড্রিল শেডে বুধবার বিকেল ৪টায় এই সভা আয়োজন করা হয়। সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ পুলিশের ইন্সপেক্টর জেনারেল (আইজিপি) বাহারুল আলম, বিপিএম। প্রধান অতিথি অফিসার ও ফোর্সদের বিভিন্ন আবেদন-নিবেদন মনোযোগসহকারে শোনেন এবং সেগুলোর দ্রুত বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি প্রদান করেন।
বিশেষ কল্যাণ সভায় আইজিপি বলেন, দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশকে সর্বোচ্চ ভূমিকা রাখতে হবে। সুদীর্ঘ সময় ধরে পুলিশ জনগণের সাথে মিলেমিশে শান্তি প্রতিষ্ঠায় কাজ করে যাচ্ছে। তিনি বলেন, পুলিশকে জনবান্ধব করতে এবং পুলিশের মধ্যে বিদ্যমান অসঙ্গতি দূর করতে, নিয়োগ প্রক্রিয়ায় পরিবর্তনে ও স্বাধীনভাবে কাজ করার পরিবেশ সৃষ্টি করতে কাজ করছে পুলিশ সংস্কার কমিশন। বাংলাদেশ পুলিশ এ বিষয়ে তাদের সহযোগিতা করছে।
তিনি আরও বলেন, জুলাই-আগস্টে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে জনগণের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। উত্তম পুলিশি সেবা দিয়ে তা দূর করতে বাংলাদেশ পুলিশ সর্বাত্মকভাবে কাজ করছে। যে সকল পুলিশ সদস্য ইচ্ছাকৃতভাবে অন্যায় করেছে তাদের বিচার হবে। এছাড়াও তিনি বলেন, পুলিশে দুর্নীতিগ্রস্তদের ঠাঁই হবে না। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে এবং হবে। জনগণের সাথে মিশে আমরা একটি সুন্দর, সুশৃঙ্খল ও ন্যায়ভিত্তিক বাংলাদেশ গড়ে তুলতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। এজন্য পেশাদারিত্ব, ন্যায়পরায়ণতা ও নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে পুলিশ সদস্যদের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানান।
উক্ত সভায় আরও বক্তব্য রাখেন রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মোহাম্মদ আবু সুফিয়ান, রাজশাহী রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি মো: সারোয়ার জাহান। স্বাগত বক্তব্য দেন রাজশাহীর পুলিশ সুপার ফারজানা ইসলাম। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন কামরুন নাহার, পুলিশ সুপার, ইন-সার্ভিস ট্রেনিং সেন্টার, রাজশাহী। কল্যাণ সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী রেঞ্জ, আরএমপি ও রাজশাহী বিভাগের পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দসহ অন্যান্য পুলিশ সদস্যরা। বিশেষ কল্যাণ সভাটি পুলিশ সদস্যদের কল্যাণ এবং তাদের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের প্রতিশ্রুতি দ্বারা সমাপ্ত হয়।
এর আগে বুধবার সকাল ১০টায় রাজশাহীর সারদায় বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমিতে ৪০তম ক্যাডেট উপপরিদর্শক (এসআই) ব্যাচের প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম বলেছেন, ‘পুলিশকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করে একটি দল নিরপেক্ষ সংস্থায় উন্নয়ন করতে কাজ করে যাচ্ছে পুলিশ সংস্কার কমিশন। পুলিশের মনোবল পুনরুদ্ধার করে আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে আমরা বদ্ধপরিকর।’ তিনি বলেন, ‘অপরাধ দমন, জনগণের সম্পত্তির নিরাপত্তা প্রদান ও শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখা পুলিশের প্রধান দায়িত্ব।’
শিক্ষানবিশ এসআই ক্যাডেটদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘পরিবর্তিত সমাজের সারথি হিসেবে বদলে যাওয়া বাংলাদেশের অগ্রযাত্রায় জনসেবায় আপনারা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবেন। পুলিশের উপপরিদর্শক খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা পদ। কারণ, ৯০ ভাগ ফৌজদারি অপরাধের তদন্ত আপনারা করে থাকেন। আর ন্যায়বিচার পাওয়া নির্ভর করে পুলিশের তদন্তের ওপর।’ এর আগে, প্রশিক্ষণে বিভিন্ন বিষয়ে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনকারীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করেন আইজিপি। এর মধ্যে বেস্ট অ্যাকাডেমিক হিসেবে ক্যাডেট এসআই মো. বদিউজ্জামান, বেস্ট ইন ফিল্ড অ্যাক্টিভিটিজ শিক্ষানবিশ ক্যাডেট এসআই নজরুল ইসলাম, বেস্ট শুটার ও বেস্ট সুইমার হিসেবে শিক্ষানবিশ ক্যাডেট এসআই নয়ন কুমার ঢালী এবং সর্ববিষয়ে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করায় শিক্ষানবিশ ক্যাডেট এসআই আরিফুল ইসলামকে বেস্ট ক্যাডেট পুরস্কার প্রদান করা হয়।
কুচকাওয়াজে ২২ জন নারীসহ ৪৮০ জন শিক্ষানবিশ ক্যাডেট এসআই অংশগ্রহণ করেন। এ সময় পুলিশ অ্যাকাডেমির অধ্যক্ষ অতিরিক্ত আইজিপি মাসুদুর রহমানস ভূঁঞা, পুলিশের রাজশাহী রেঞ্জের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) আলমগীর রহমান ও রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মোহাম্মদ আবু সুফিয়ানসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের ৫ নভেম্বর পুলিশ একাডেমিতে ৮২৩ জন ক্যাডেট এসআইয়ের এক বছর মেয়াদি মৌলিক প্রশিক্ষণ শুরু হয়। প্রশিক্ষণ শুরুর পরই নানা অভিযোগে ডিসচার্জ হন ২২ জন। গত বছরের ৪ নভেম্বর ৮০১ জনের প্রশিক্ষণ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু হয়নি। এরই মধ্যে সম্প্রতি চার দফায় মোট ৩২১ জন শিক্ষানবিশ ক্যাডেট এসআইকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
ঠুনকো কারণে অব্যাহতি পাওয়া এই ৩২১ জন আছেন আন্দোলনে। তারা তাদের চাকরি ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানাচ্ছেন। মঙ্গলবার দিবাগত মধ্যরাতে আন্দোলনরত অব্যাহতি পাওয়া এসআইদের ওপর জলকামান নিক্ষেপ করে তাদের সচিবালয়ের সামনে থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। পরদিন (বুধবার) সকালে অনুষ্ঠিত হলো ‘টিকে থাকা’ ৪৮০ জনের প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ।


প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৬, ২০২৫ | সময়: ৭:৪০ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ