রবিবার, ২০শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ৭ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ।
মাহফুজুর রহমান প্রিন্স, বাগমারা: রাজশাহীর বাগমারায় শীতকালীন পেঁয়াজ চাষ করে লাভবান হচ্ছেন চাষিরা। পেঁয়াজের দাম পাওয়ার পাশাপাশি ফুলকা (কলি) বিক্রি করে অতিরিক্ত আয় হচ্ছে।
সুস্বাদু ও পুষ্টিকর এই সবজি এলাকার চাহিদা মিটিয়ে বাইরে বিক্রি হয়। স্থানীয় কৃষি বিভাগের দাবি, এবছর বাগমারায় তিন হাজার মেট্রিকটন পেঁয়াজের কলি উৎপাদন হয়েছে। এ থেকে অতিরিক্ত দুই থেকে আড়াই কোটি টাকা আয় হয়।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, বাগমারায় এবার এক হাজার ৮১০ হেক্টর শীতকালীন পেঁয়াজ চাষ হয়েছে।
স্থানীয় ভাবে এই পেঁয়াজ তাহেরপুরী হিসেবে পরিচিত। তাহেরপুর উপজেলার একটি প্রসিদ্ধ জায়গা। এখানে যে পেঁয়াজ উৎপাদন হয় তা তাহেরপিরী হিসাবে পরিচিত। এই পেঁয়াজের চাহিদা ও সুনাম রয়েছে দেশজুড়ে।
গত অক্টোবরের মাঝামাঝিতে এই পেঁয়াজ চাষ হয় এবং ডিসেম্বরের মধ্যে ফলন পাওয়া যায়। তবে জানুয়ারি মাস পর্যন্ত চাষাবাদ করা যায় এই পেঁয়াজের। এই জাতের পেঁয়াজ বাজার নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি চাহিদা মিটিয়ে থাকে।
শীতকালীন পেঁয়াজ বিক্রির সঙ্গে এর কলি বিক্রি করে চাষিরা অতিরিক্ত টাকা পেয়ে থাকেন। এই কলির সুস্বাদু ও পুষ্টিকর সবজি হিসেবে চাহিদা রয়েছে। খেত থেকে পেঁয়াজ তোলার আগে গাছে গজানো কলি তুলে ফেলতে হয়। এই কলি গাছ থেকে অপসারণ না করলে ফলন কম হয়। এই কারণে চাষিরা কলি অপসারণ করে থাকেন। তবে এই কলি ফেলে না দিয়ে বাজারে বিক্রি করেন চাষিরা। এই কলি সবজি এবং আবার পেঁয়াজের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার হয় রান্নায়। উপজেলার হাটে-বাজারে এই কলি বিক্রি হচ্ছে গত এক মাস ধরে। চাষিরা খেত থেকে কলি তুলে বাজারে নিয়ে আসেন বিক্রির জন্য। সেখান থেকে চলে যায় দেশের বিভিন্ন স্থানে।
সরেজমিনে গত এক সপ্তাহ ধরে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় খেত থেকে কলি ওঠানো দেখা যায়। পুরুষ, নারী ও শিশুরা এসব তুলছেন খেত থেকে।
এছাড়াও তাহেরপুর, ভবানীগঞ্জ, মচমইল, হাসনিপুর ও মোহনগঞ্জ হাটে গিয়ে বিক্রির দৃশ্য চোখে পড়ে। চাষি ছাড়াও সাধারণ লোকজনও বিক্রি করেন এই কলি। শুরুতে বাজারে ২০-২৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হলেও এখন দাম কমে ১০ থেকে ১৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে পাইকারি বাজারে এর দাম আরও কমে এসেছে। ভবানীগঞ্জ হাটে পেঁয়াজের কলি স্তুুপ দেখা যায় গত সোমবার হাটে। পাইকারি কিনে তা ঢাকা, চট্রগ্রামসহ অন্য স্থানে পাঠানোর জন্য বস্তায় ভরতে দেখা যায়। আহসান হাবিব নামের এক পাইকার জানান, বাগমারার হাটবাজারে এগুলোর (পেঁয়াজের কলি) আমদানি হয়। এখান থেকে কিনে ঢাকার কারওয়ান বাজারে বিক্রি করেন। চাহিদা থাকায় দামও ভালো পাওয়া যায়।
উপজেলার যোগিপাড়া গ্রামের চাষি জোবায়েদ হোসেন (৪৮), নখোপাড়ার আজিজুল হক (৫৫), কামারখালির দেলশাদ আলী ( ৫২) জানান, তাঁরা পেঁয়াজের সঙ্গে ফুলকার (কলি) যে দাম পান তা দিয়ে সেচ ও শ্রমিকের খরচ ওঠে আসে। এটা অতিরিক্ত পাওয়া বলে জানান। প্রথমে ভালো দাম পেলেও এখন কমে এসেছে। এজন্য তারা খেতটি উম্মুক্ত করে দিয়েছেন। নিম্ন আয়ের লোকজন এগুলো তুলে বাজারে বিক্রি করছেন।
এছাড়াও স্থানীয় বাজারে এর চাহিদা দেখা যায়। ক্রেতারা বলেন, এটা পুষ্টিকর খাবার। ভর্তা, শুটকি মাছ দিয়ে রান্না করলে ভালো লাগে বলে মন্তব্য করেন। বাগমারা পশ্চিম পাড়ার বাসিন্দা মফিজ উদ্দিন (৬২) বলেন, তিনি তরকারিতে পেঁয়াজের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করেন।
বাগমারা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবদুর রাজ্জাক বলেন, পেঁয়াজের ফুলকা চাষিদের অতিরিক্ত পাওয়া। এই ফুলকা তুলে ফেলতে হয়, তা না হলে উৎপাদন কম হয়। এজন্য চাষিরা নিজে অথবা লোকজনদের দিয়ে সেগুলো তুলে বিক্রি করেন। শুধু মাত্র এই মৌসুমে দুই থেকে আড়াই কোটি টাকা পাওয়া গেছে।