বুধবার, ১২ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ২৯শে মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ।
নুরুজ্জামান, বাঘা:
সকাল থেকেই রাজশাহীর বাঘা উপজেলার আড়ানীতে ভিড় করেছিলেন বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ। উদ্দেশ্য ছিল জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বীর প্রতীক আজাদ আলীকে সম্মান জানানো। অবশেষে দুপুরে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টারে তার মরদেহ ঢাকা থেকে এসে পৌঁছায় আড়ানী মণোমোহিনী সরকারি স্কুল মাঠে। সেখান থেকে ম*র*দেহ নিয়ে যাওয়া হয় পাশে অবস্থিত আড়ানী ডিগ্রি কলেজ মাঠে। সেখানে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাম্মি আক্তার ও স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন গার্ড অব অনার দিয়ে তাকে রাষ্ট্রীয় সম্মানে ভূষিত করেন।
তার জানাজায় অংশ নেন গ্রামের সাধারণ মানুষ-সহ হাজার হাজার মানুষ। জানাজা শেষে ম*র*দে*হ আবার ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হয় এবং বারিধারা গোরস্থানে দাফন সম্পন্ন করা হয়।
বীর প্রতীক আজাদ আলী রাজশাহীর বাঘা উপজেলার আড়ানী পৌরসভার কুশবাড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা। তিনি গত সোমবার (১৩ জানুয়ারি) রাত ৯টায় ঢাকার সিএমএস হাসপাতালে ইন্তেকাল করেন (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। মৃ*ত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৫ বছর। বর্তমানে তিনি ঢাকার বারিধারা ডিওএইচএস এলাকায় পরিবারের সঙ্গে বসবাস করতেন। তিনি স্ত্রী, দুই ছেলে, এক মেয়ে এবং অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
বাঘার মুক্তিযোদ্ধারা জানান, ১৯৭১ সালের রণাঙ্গনে দেশের মানুষ ও তাদের জানমাল রক্ষার জন্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আজাদ আলী নাটোরের নাবিরপাড়া, ঈশ্বরদী-রাজশাহী রেলপথ এবং আবদুলপুর রেলওয়ে জংশন রক্ষার দায়িত্ব পালন করেছিলেন। পাকবাহিনীর ধ্বংসযজ্ঞ ঠেকাতে তার নেতৃত্বে একটি গেরিলা দল নিয়মিত রেলপথ সচল রাখার কাজ করত। এই কাজে ১৯৭১ সালের ২২ নভেম্বর পাকবাহিনীর সঙ্গে লড়াইয়ের সময় ছয়টি মাইন বিস্ফোরিত হলে তিনি তার বাঁ হাতের কবজি হারান। সেই যুদ্ধেই ১৬ জন পাকিস্তানি সেনা হতাহত হন। বীরত্বপূর্ণ অবদানের জন্য তিনি “বীর প্রতীক” খেতাবে ভূষিত হন।
আজাদ আলী মুক্তিযুদ্ধের সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি যুদ্ধে যোগ দেন এবং মে মাসে ভারতে চলে যান। জুন মাসে তাকে মুক্তিবাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত করে চাকুলিয়ায় প্রশিক্ষণে পাঠানো হয়। প্রশিক্ষণ শেষে ৭ নম্বর সেক্টরের লালগোলা সাব-সেক্টর এলাকায় তিনি বেশ কয়েকটি গেরিলা যুদ্ধে অংশ নেন।
মঙ্গলবার দুপুরে আড়ানী ডিগ্রি কলেজ মাঠে জানাজা শেষে মরদেহ ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তাকে বারিধারা গোরস্থানে দাফন করা হয়।
তার মৃত্যুতে বাঘা ও আড়ানী বাসী গভীর শোকাহত। বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠন ও ব্যক্তিত্ব শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন।
সানশাইন/রাজ