মঙ্গলবার, ১৮ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ৫ই ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ।
নুরুজ্জামান, বাঘা:
প্রতি বছর জানুয়ারিতে বাঘার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী ভর্তির হিড়িক পড়ে। বিভিন্ন বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের দেখা যায় শিক্ষার্থী ভর্তির জন্য অভিভাবকদের বাড়ি বাড়ি ধর্না দিতে। এর ব্যত্যয় ঘটেনি এবারও। এ ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন সুশীল সমাজের কর্তৃবৃন্দ।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, উপজেলাটির কিছু সংখ্যক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তির চাপে শিক্ষকরা হিমশিম খাচ্ছেন। অন্যদিকে, কোনো কোনো বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী সংকটে শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের নানা সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার শর্তে অভিভাবকদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে অনুরোধ করছেন। এ বিষয়ে স্থানীয় লোকজন ও সুশীল সমাজের বক্তব্য—এমন কেন হবে? তারা লেখাপড়ার মান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এবং শিক্ষকদের অযোগ্যতাকে বিশেষভাবে দায়ী করেছেন।
উপজেলার বাউসা অমরপুর ধন্দহ উচ্চ বিদ্যালয়ের ইংরেজি শিক্ষক কামরুল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, তাদের পাশেই অবস্থিত হারুন অর রশিদ শাহদ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়। সেখানে এবার ষষ্ঠ শ্রেণিতে ৫৫ জনের স্থলে ভর্তি হয়েছে ১২০ জন শিক্ষার্থী। যা সরকারের নিয়মের পরিপন্থী এবং শিক্ষানীতির মধ্যে পড়ে না। অনুরূপ অবস্থা অন্যান্য শ্রেণিতেও। অথচ সেখানে একই শ্রেণিতে ডাবল শাখা খোলার অনুমতি এখনও পাওয়া যায়নি। তাহলে এটি কীভাবে সম্ভব হলো? আর তারা সরকারি বইই-বা কীভাবে পেল? এমন প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। এ নিয়ে বেশ কয়েকজন শিক্ষক ইতোমধ্যে মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছেন।
অন্যদিকে, বাঘা সদরের বাঘা মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ে একই শ্রেণিতে ২০ থেকে ৩০ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হয়নি। এর প্রধান কারণ লেখাপড়ার মান এবং শিক্ষকদের গাফিলতি বলে মন্তব্য করেছেন অনেকে। পার্শ্ববর্তী রহমতুল্লাহ বালিকা বিদ্যালয় ও ইসলামী একাডেমি উচ্চ বিদ্যালয়ে ইতোমধ্যে ডাবল শাখা খোলা না থাকায় তারা শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধ করে দিয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছেন শিক্ষকরা।
মফস্বল এলাকার বিভিন্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে এবার কম সংখ্যক শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছে বলে জানা গেছে। যা সংশ্লিষ্টরা তদন্ত করলেই নিশ্চিত হওয়া যাবে।
এ বিষয়ে বাউসা হারুন অর রশিদ শাহদ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আনিছুর রহমান বলেন, “আমরা কোনো শ্রেণিতেই ডাবল (ক-খ) শাখা খোলার অনুমতি পাইনি। কিন্তু অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের চাপের মুখে ভর্তি নিতে বাধ্য হয়েছি।” তার স্কুলে প্রতি ক্লাসেই প্রায় শতাধিক শিক্ষার্থী রয়েছে বলে তিনি অকপটে স্বীকার করেছেন।
সার্বিক বিষয়ে বাঘা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আ.ফ.ম মাহমুদুল হাসান বলেন, “আমি বাউসা হারুন অর রশিদ শাহদ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে বলে দিয়েছি তারা আর শিক্ষার্থী ভর্তি করবেন না। সরকারি অনুমতি না পাওয়া পর্যন্ত কোনো বিদ্যালয় প্রতি ক্লাসে ৫৫ জনের বেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করতে পারবে না। আর যদি সেটি করতে হয়, তাহলে ডাবল শাখা খোলার অনুমতি নিতে হবে।”
তিনি আরও জানান, “শিক্ষা বোর্ড থেকে গত বছর দশম শ্রেণি পর্যন্ত ১০০ জন ফরম পূরণের সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। এ কারণে আমরা বাড়তি বইগুলো যেখানে শিক্ষার্থীর চাপ বেশি, সেইসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দিয়েছি।”
সানশাইন/রাজ