ই-পেপার
সর্বশেষ সংবাদ :

নগরীতে গণতান্ত্রিক পুনর্গঠনের জন্য সংলাপে অতিথিরা : রাজনৈতিক দলগুলোকে ধৈর্য্য সহকারে বর্তমান সরকারকে সময় দেয়া উচিৎ

জিয়াউল কবীর স্বপন: রাজশাহী জেলা শিল্পকলা একাডেমির মিলনায়তনে ‘গণতান্ত্রিক পুনর্গঠনের জন্য সংলাপ’ শীর্ষক সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। শনিবার রাজশাহীতে সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস) আয়োজিত এ সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সংস্কারের অগ্রাধিকার ক্ষেত্রগুলো নিয়ে দেশের প্রতিটি বিভাগে ধারাবাহিক সংলাপ করছে সিজিএস।
সংলাপে অতিথি আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) ড. মোহাম্মদ মাঈন উদ্দীন, সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) জেলা সভাপতি আহমদ সফি উদ্দিন। সংলাপে বিএনপি ও জামায়েত ইসলামসহ বিভিন্ন দলের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিল।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) ড. মোহাম্মদ মাঈন উদ্দীন বলেন, ড. মুহাম্মদ ইউনুসের মত একজন মহান ব্যক্তি আমাদের দেশের নেতৃত্বে এসেছেন, এটি আমাদের জন্য অত্যন্ত সৌভাগ্যের। আমাদের উচিৎ এ সময়টিকে কাজে লাগানো। দেশ সংস্কারের বিভিন্ন ধাপগুলো পুরন করে আমাদের জাতীয় নির্বাচনের দিকে যাওয়া উচিৎ। এক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলোকে ধৈর্য্য সহকারে বর্তমান সরকারকে সময় দেয়া উচিৎ।
সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) জেলা সভাপতি আহমদ সফি বলেন, নাগরিক সমস্যা সমাধানে সকল পর্যায়ের মানুষকে নিয়ে একটি প্ল্যাটফর্ম প্রয়োজন। সিটি করপোরেশনের মেয়রের উচিৎ টাউনহলটি জনগনকে ফিরিয়ে দিয়ে নাগরিক ও আঞ্চলিক সমস্যা সমাধানে আলোচনার প্ল্যাটফর্ম বাড়ানোর। এছাড়াও, দেশের সিনিয়র সিটিজেনদের প্রাপ্য অধিকার দেয়া, শ্রমিকের অধিকার বাস্তবায়ন করা, আইনের যথার্থ ব্যবহার, সাইবার সিকিউরিটি আইন বাতিল, প্রশাসনে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতে, আয়কর নিশ্চিতে করা, শিক্ষায় উন্নয়ন বাস্তবায়ন, ইত্যাদি সংস্কারগুলো আবশ্যক।
বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু সংলাপে বলেন, ‘দেশ পুনর্গঠনের বিএনপির ৩১ দফা রয়েছে। নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ক্ষমতায় আসলে বিএনপি এই দফা বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে নতুন এক বাংলাদেশ উপহার দিবে। হাজার মানুষের রক্তের বিনিময়ে আমরা ফ্যাসিস্ট সরকারকে বিদায় করেছি, এ দেশে আর ফ্যাসিজম কায়েম করতে দেয়া হবে না।’
রাজশাহী জেলা জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর আবু মোহাম্মদ সেলিম বলেন, ‘যেকোনো ধরনের সংস্কারের আলচনায় সরকারের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকা প্রয়োজন। রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে সরকারের আন্তরিক সম্পর্ক থাকা উচিৎ। এতে দেশে প্রয়োজনীয় সংস্কারগুলো ত্বরান্বিত করবে।’
অনুষ্ঠানে রাজশাহীর সাবেক সিটি মেয়র মোহাম্মদ মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলও মতামত তুলে ধরেন।
তৃতীয় লিঙ্গের নারী সুলতানা সাগরিকা জানান, দেশের স্বাস্থ্যখাতে ভয়াবহ পরিস্থিতি বিরাজমান, বিশেষভাবে হিজড়া কমিউনিটির মানুষের জন্য সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগ পোহাতে হয়। এ বিষয়ে সরকারকে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া উচিৎ। বিশিষ্ট লেখক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক নাজিব ওয়াদুদ বলন, প্রত্যেকটি সংগঠনকেই নিজের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী গনতান্ত্রিক উপায়ে সংগঠন চালাতে হবে এবং মানুষের চিন্তার জগতে পরিবর্তন আনতে হবে। তা না হলে কোনো পরিবর্তনই টেকসই হবেনা।
পরিবেশ ও নদী বাঁচাও আন্দোলনের নেতা এ্যাডকেট এনামুল হক বলেন, ভবিষ্যতের টেকসই উন্নয়নে একইসাথে সংবিধান পুনঃলিখনের জন্য জাতীয় নির্বাচনের পাশাপাশি গনপরিষদ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে দেশ পরিচালনা করতে হবে এবং সংবিধান নতুন করে প্রণয়ন করতে হবে।
সাংবাদিক আব্দুল আউয়াল বলেন, ‘রাজনৈতিক কারণে সাংবাদিকরা বিভক্ত হয়ে পড়েছে। আমাদের এটি নিশ্চিতে করতে হবে যে রাজনৈতিক মতাদর্শ ভিন্ন হলেও সাংবাদিকতার স্বার্থে সবাই যেন এক থাকে। পাশাপাশি সাংবাদিকদের আর্থিক নিরাপত্তা যেন নিশ্চিতে করা হয়।’
বৈষম্যবিরোধী আন্দলনের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক তাসিন খান বলেন, ‘বর্তমান সরকার শুধুমাত্র বৈষম্যবিরোধীদের নয়, এটি বর্তমান বাংলাদেশে ফ্যাসিস্টবিরোধী সকল রাজনৈতিক দলেরও। তাদের উচিৎ এ সরকারকে সর্বাত্মক সহায়তার মাধ্যমে গণতান্ত্রিক দেশ সংস্কার এগিয়ে নিয়ে দ্রুত নির্বাচন দেওয়া।’
অনুষ্ঠানের সঞ্চালক ছিলেন সিজিএসের নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমান। তিনি বলেন, বলেন, ‘৫ আগস্টের মাধ্যমে বাংলাদেশে পরিবর্তনের নতুন সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। আমাদের খেয়াল রাখতে হবে এক ফ্যাসিস্টকে বিদায় করে আমরা যেন আরেকজন ফ্যাসিস্ট তৈরি না করি।’
এছাড়াও শিক্ষক-শিক্ষার্থী, আইনজীবী, শিল্প উদ্যোক্তা, ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি, অধিকারকর্মী, নারী সংগঠক, সেচ্ছাসেবীসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রের পেশাজীবীরা মুক্ত আলোচনায় অংশ নিয়ে সংস্কার বিষয়ে তাদের গুরুত্বপূর্ণ মতামত তুলে ধরেন।


প্রকাশিত: জানুয়ারি ১২, ২০২৫ | সময়: ৭:৩৬ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ

আরও খবর