বৃহস্পতিবার, ২৭শে মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ১৩ই চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ।
নুরুজ্জামান, বাঘা:
গাছেরও প্রাণ আছে। মানুষের শরীরে আঘাত করলে যেমন কষ্ট লাগে কিংবা রক্তপাত হয়, ঠিক তেমনই প্রতিটি গাছের ক্ষেত্রেও। অথচ আমরা হরহামেশা বিজ্ঞাপনের ফেস্টুন লাগাতে গাছকে ব্যবহার করে থাকি। এর ব্যত্যয় ঘটেনি রাজশাহীর বাঘা উপজেলায়। এখানে বিভিন্ন রাস্তার পাশ দিয়ে লাগানো প্রায় প্রতিটি গাছে-গাছে ঝুলছে পেরেকযুক্ত ফেস্টুন। যা বন্ধের জন্য ইতোমধ্যে নতুন আইন পাশ করার প্রস্তাব এসেছে। এ আইন পাশ হলে বন্ধ হবে বিজ্ঞাপন সেঁটে দেওয়ার বিষয়টি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গাছে পেরেক ঠোকা বন্ধে নতুন আইন পাশ করার প্রস্তাব রেখেছেন বর্তমান তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পরিবেশ বিষয়ক প্রধান উপদেষ্টা রিজওয়ানা হাসান। এ দিক থেকে লক্ষণীয়, রাজশাহীর বাঘা উপজেলায় রাস্তা সংলগ্ন প্রায় প্রতিটি গাছে-গাছে ছয়লাব বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও কোম্পানির ফেস্টুন। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, দেশে নতুন এ আইন পাশ হওয়ার পর স্থানীয় প্রশাসন একটু উদ্যোগ নিলে এটি বন্ধ হয়ে যাবে।
সরেজমিন ঘুরে লক্ষ করা গেছে, বাঘা উপজেলার বিভিন্ন সড়কের পাশে লাগানো গাছগুলো প্রতিনিয়ত বিজ্ঞাপনদাতাদের নিষ্ঠুরতার শিকার হচ্ছে। গাছে পেরেক ঠুকে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপনী বিলবোর্ড, ফেস্টুন ও ব্যানার লাগানোর ঘটনা যেন দিন দিন বেড়েই চলেছে। এক শ্রেণির মানুষের অসচেতনতার কারণে প্রতিনিয়ত গাছগুলো এই নিষ্ঠুরতার শিকার হচ্ছে। ফলে সড়কের পাশের গাছগুলো পড়েছে ঝুঁকির মুখে।
বৃক্ষপ্রেমীরা বলছেন, গাছে পেরেক মারা নিষ্ঠুরতার শামিল। এমন পরিস্থিতিতে গাছ সুরক্ষায় নতুন আইন তৈরির কথা বলেছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। আইনে গাছে পেরেক লাগানো বন্ধে বিশেষ বিধান রাখার কথা বলেছেন তিনি। মঙ্গলবার ঢাকার ধানমন্ডির আবাহনী মাঠসংলগ্ন এলাকায় গাছের পেরেক অপসারণ কার্যক্রম পরিদর্শন করে তিনি এ কথা বলেন।
রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘গাছ অক্সিজেন সরবরাহ করে। গাছে পেরেক ঠুকলে তা গাছের বৃদ্ধি ব্যাহত করে এবং ধীরে ধীরে গাছ মারা যায়। এটি পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। তাই গাছে পেরেক ঠোকা বন্ধ করতে সবার সহযোগিতা প্রয়োজন। আইন কার্যকর হলে কেউ এ কাজ করলে প্রশাসনের শাস্তির মুখোমুখি হবেন বলেও তিনি মন্তব্য করেন।’
অপরদিকে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব ফারহিনা আহমেদ বলেন, ‘গাছেরও প্রাণ আছে, এটা আমরা কেউ অনুভব করছি না। রাজধানীসহ দেশের প্রতিটি রাস্তা সংলগ্ন অধিকাংশ গাছে পেরেক ঠুকে বিজ্ঞাপন টাঙানোয় সৌন্দর্য নষ্ট হচ্ছে। এ বিষয়ে প্রশাসনের নজর দেওয়া দরকার। যেসব প্রতিষ্ঠান গাছে পেরেক ঠুকে বিজ্ঞাপন লাগাচ্ছে, তাদের আইনের আওতায় আনা উচিত। সেই সঙ্গে উচিত গাছে পেরেক ঠুকে বিজ্ঞাপন দেওয়া নিষিদ্ধ করা।’
তিনি আরও বলেন, ‘গাছে পেরেক মারলে সেখানে মরিচার সৃষ্টি হয়। এর মাধ্যমে ছত্রাক ও ব্যাকটেরিয়া ঢুকে গাছের নানা অসুখ তৈরি করে। গাছের বয়স বৃদ্ধি কমিয়ে দেয়। এতে করে বড় ধরনের ঝড়-বৃষ্টি আঘাত হানলে সহজেই গাছ ভেঙে যায়।’
এ বিষয়ে বাঘা উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাম্মী আক্তার বলেন, ‘গাছে পেরেক লাগানো নিষিদ্ধ করার বিষয়টি অত্যন্ত ইতিবাচক। উন্নত দেশের তুলনায় জলবায়ু মোকাবিলায় আমরা একেবারে পিছিয়ে আছি। আমাদের একমাত্র সম্বল বৃক্ষ। এই বৃক্ষ বাঁচলে বাংলাদেশ বাঁচবে। আমি নতুন সরকারের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানাচ্ছি।’
সানশাইন/নুরু /রাজ