বৃহস্পতিবার, ২৭শে মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ১৩ই চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ।
সানশাইন ডেস্ক: নতুন বছরের প্রথম দিন পাঠ্যবইয়ের অনলাইন ভার্সন প্রকাশ করবে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। এছাড়া এদিন বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতার সরকারি অংশ বা এমপিও, অবসর ও কল্যাণ সুবিধা ইলেক্ট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার সিস্টেমে বা ইএফটিতে বিতরণও উদ্বোধন হতে যাচ্ছে।
রাজধানীর সেগুন বাগিচায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে বুধবার সকালে এসব কার্যক্রমের উদ্বোধন করবেন শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। মঙ্গলবার সকালে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ তথ্য কর্মকর্তা সিরাজ উদ-দৌলা খান এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন শিক্ষা উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক এম আমিনুল ইসলাম।
বছরের প্রথম দিন এবার প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বড় একটি অংশের হাতে নতুন কোনো পাঠ্যবই পৌঁছাচ্ছে না। এজন্য অপেক্ষায় থাকতে হবে ২০ জানুয়ারি পর্যন্ত। স্কুলগুলোতে বই পৌঁছাতে দেরি হওয়ার কারণেই এই তিন শ্রেণির ২৮ শতাংশ শিক্ষার্থীদের অপেক্ষা অন্যদের চেয়ে বাড়বে।
প্রাথমিকের অন্য শ্রেণির মধ্যে প্রাক-প্রাথমিক, চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা বই হাতে পাবেন আরও কয়েকদিন পর। আর মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীরা জানুয়ারির শুরুতে কিছু বিষয়ের বই পাবেন। এনসিটিবির কর্মকর্তারা বলছেন, এদের মধ্যে দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বই পৌঁছাবে জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে।
এমন বাস্তবতায় এবার বছরের প্রথম দিনই সব পাঠ্যবইয়ের সফট কপি অনলাইনে প্রকাশ করবে এনসিটিবি। এছাড়া প্রতিবারের মত এবার বই উৎসব হচ্ছে না। চেয়ারম্যান অধ্যাপক এ কে এম রিয়াজুল হাসান বলেন, “১ জানুয়ারি আমরা সব শ্রেণির পরিমার্জিত ৪১১টি বইয়ের সফট কপি অনলাইনে প্রকাশ করবে।
“আমরা আশা করছি দশম শ্রেণির বইগুলো ৫ জানুয়ারির মধ্যে সব উপজেলার শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছে দিতে পারব। ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের কিছু বই আমরা জানুয়ারির প্রথমাংশে তাদের হাতে পৌঁছে দিতে চাচ্ছি। এসব শ্রেণির বাংলা, ইংরেজি ও গণিতের বই ১০ জানুয়ারির মধ্যে সব উপজেলায় পৌঁছে যাবে বলে আশা করছি।”
তিনি আরও বলেছেন ১০ জানুয়ারির মধ্যে সব উপজেলার প্রাক-প্রাথমিক, চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির বাংলা, ইংরেজি ও গণিত বই শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেওয়ার পরিকল্পনায় কাজ চলছে। “আর সব শ্রেণির অন্যান্য সব বই চলে যাবে ২০ জানুয়ারির মধ্যে।” জানুয়ারি মাস থেকে বেসরকারি স্কুল ও কলেজের ২ লাখ ৮৯ হাজার শিক্ষক-কর্মচারীর বেতন-ভাতার সরকারি অংশ বা এমপিও ইলেক্ট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার সিস্টেমে (ইএফটি) ছাড় করবে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর।
এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা ইএফটিতে ছাড় করা শুরু হবে বুধবার। ওইদিন ১ লাখ ৮৯ হাজার শিক্ষক-কর্মচারী ইএফটিতে বেতন-ভাতা পাওয়ার ‘বার্তা’ পাবেন। সেদিনই অথবা পরদিন শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতার টাকা তাদের অ্যাকাউন্টে জমা হবে। আর জানুয়ারির প্রথমাংশে আরও ১ লাখ শিক্ষক ইএফটিতে ডিসেম্বর মাসের বেতন-ভাতা পাবেন বলে জানিয়েছে অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
শিক্ষকদের দীর্ঘদিনের দাবির প্রেক্ষিতে বেসরকারি স্কুল-কলেজের ৩ লাখ ৮০ হাজার শিক্ষক-কর্মচারীর এমপিও আগামী জানুয়ারি মাস থেকে ইএফটি প্রক্রিয়ায় পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এজন্য শিক্ষক-কর্মচারীদের তথ্য সংগ্রহ ও যাচাই-বাছাই করা হয়েছে। ইফটিতে বেতন দিতে শিক্ষকদের তথ্য যাচাই কমিটির প্রধান এবং অধিদপ্তরের অর্থ ও ক্রয় উইংয়ের পরিচালক অধ্যাপক মো. মোজাক্কার হোসেন চৌধুরী বলেন, “আমরা ১ লাখ ৮৯ হাজার এমপিওভুক্ত শিক্ষক কর্মচারীর তথ্য এনআইডি সার্ভার থেকে যাচাই করে নিশ্চিত হয়েছি। ১ জানুয়ারি থেকে তাদের ডিসেম্বর বেতন-ভাতা ইএফটিতে ছাড় করা হবে।
“এ শিক্ষক-কর্মচারীরা ১ জানুয়ারি ইএফটির মেসেজ পেয়ে যাবেন। আর ২ জানুয়ারি তাদের অ্যাকাউন্টে বেতন-ভাতার টাকা ঢুকবে। আমরা চেষ্টা করছি যেন এদিনই তাদের অ্যাকাউন্টে বেতন-ভাতার টাকা ছাড় করা যায়।” তিনি আরও বলেন, “আরও ১ লাখ শিক্ষক-কর্মচারীর তথ্য এনআইডির সার্ভার থেকে যাচাই হয়ে জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহেই আমাদের হাতে এসে পৌঁছাবে। আমরা তাদের বেতন-ভাতাও জানুয়ারি মাস থেকে ছাড় করব। জানুয়ারি প্রথম সপ্তাহেই তাদের ডিসেম্বর মাসের বেতন-ভাতা ইএফটির মাধ্যমে ছাড় হয়ে যাবে।
“বেসরকারি স্কুল-কলেজের ৩ লাখ ৮০ হাজার শিক্ষক-কর্মচারীর মধ্যে ২ লাখ ৮৯ হাজার শিক্ষক-কর্মচারীর তথ্য আমরা যাচাই করছি। আর ২৭ হাজার শিক্ষক-কর্মচারীর তথ্য আমরা পাইনি। তাদের মধ্যে ডাবল-এমপিও, মৃত্যুবরণ বা চাকরি ছেড়ে দেওয়ারা থাকতে পারেন। আর অন্যান্য শিক্ষক-কর্মচারীর তথ্য পেলেও তাতে ত্রুটি আছে, যেগুলো সংশোধনের প্রক্রিয়া চলছে।”
সরকারি কর্মচারীরা ইএফটিতে বেতন-ভাতা পান। অন্যদিকে এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা সরকারি কোষাগার থেকে ছাড় হলেও তা রাষ্ট্রায়ত্ত আটটি ব্যাংকের মাধ্যমে অনেকটা ‘অ্যানালগ’ পদ্ধতিতে ছাড় হয়। ব্যাংকগুলো মাধ্যমে বেতন-ভাতা ছাড়ের জন্য কয়েক পর্যায়ে অনুমোদনসহ সংশ্লিষ্ট কাজে অনেক ক্ষেত্রেই এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বেতন-ভাতা পেতে দেরি হয়। অনেক সময় পরের মাসের ১০ তারিখের পরও আগের মাসের বেতন-ভাতা জোটে।
বিগত সময়ে ঈদের পরে ঈদ উৎসব ভাতা পাওয়ার মত ‘বিব্রতকর’ পরিস্থিতিতেও পড়তে হয়েছে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের। ফলে তারাও সরকারি কর্মীদের মত মাসের শুরুতে ইএফটির মাধ্যমে বেতন-ভাতা পাওয়ার দাবি জানিয়ে আসছিলেন। এ পরিপ্রেক্ষিতে গত ৫ অক্টোবর বিশ্ব শিক্ষক দিবসে ইএফটিতে বেসরকারি শিক্ষকদের এমপিওর বেতন-ভাতা দেওয়ার ঘোষণা দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
প্রাথমিকভাবে বেসরকারি এমপিওভুক্ত স্কুল-কলেজের ২০৯ জন শিক্ষক-কর্মচারীর অক্টোবর মাসের এমপিও ইএফটিতে ছাড় হয়। এদিকে মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষকদের এমপিও ইএফটিতে বেতন-ভাতা দেওয়ার প্রক্রিয়াও শুরু করেছে মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তর ও কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর।
এজেন্সি প্রতি ন্যূনতম ১০০
হজযাত্রীর কোটা চায় হাব
সানশাইন ডেস্ক: হজযাত্রীদের সেবা নিশ্চিতের পাশাপাশি এজেন্সি ‘বাঁচিয়ে’ রাখতে এবারের হজ মৌসুমে এজেন্সি প্রতি ন্যূনতম ১০০ জন হজযাত্রীর কোটা ঠিক করে দেওয়ার দাবি জানিয়েছে হজ এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-হাব।
তাদের দাবি, একই এজেন্সির মাধ্যমে বেশি সংখ্যক হজযাত্রী পাঠালে কাঙ্ক্ষিত সেবা নিশ্চিত করা সম্ভব হয় না, বরং হজ ব্যবস্থাপনায় বিশৃঙ্খলা দেখা দিতে পারে। হাবের সহ সভাপতি সৈয়দ গোলাম সরওয়ার মঙ্গলবার ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, সৌদি কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এবার এজেন্সি প্রতি সর্বনিম্ন ১০০০ জন হজযাত্রীর সংখ্যা নির্ধারণ করা হয়েছিল। পরে মন্ত্রণালয় আলোচনা করে সেটা কমিয়ে ৫০০ করে।
“এখন এজেন্সি প্রতি ১০০ কোটা রাখলে আমাদের ১৩ শ এজেন্সির মধ্যে অনেকেই কাজ করার সুযোগ পাবে। কিন্তু ৫০০ থাকলে হজযাত্রীদের কাঙ্ক্ষিত সেবা নিশ্চিত করা আদৌ সম্ভব হবে না এবং হজ ব্যবস্থাপনায় চরম বিশৃঙ্খলা দেখা দেবে।” গোলাম সরওয়ার বলেন, “আগে এজেন্সি প্রতি সর্বোচ্চ ৩০০ জন এবং সর্বনিম্ন ১০০ জন হজযাত্রীর পদ্ধতি অব্যাহত ছিল। ফলে হজযাত্রীদের প্রয়োজনীয় সব সেবা নিশ্চিত করা সহজ ও সম্ভব হয়েছে। হজযাত্রীদের কল্যাণে সুষ্ঠু ও সুশৃঙ্খল হজ ব্যবস্থাপনার স্বার্থে আগের মত এ বছর এজেন্সি প্রতি সর্বোচ্চ ২৫০ জন এবং সর্বনিম্ন ১০০ জন হজযাত্রীর চলমান পদ্ধতি অব্যাহত রাখা হজ এজেন্সি মালিকদের প্রাণের দাবি।”
তিনি বলেন, ২০২৪ সালে এজেন্সি প্রতি ৩০০ জন হজযাত্রী নেওয়া বাধ্যবাধকতা থাকায় প্রায় সব এজেন্সি লিড সিস্টেমে ( এক এজেন্সির লোক অন্য এজেন্সির মাধ্যমে পাঠানো) কাজ করতে বাধ্য হয়েছিল। এতে হজযাত্রী এবং এজেন্সি মালিকদের নিজেদের মধ্যে ‘মনোমালিন্য’ চরম পর্যায় পৌঁছেছিল। আর এ বছর এজেন্সি প্রতি সর্বনিম্ন ৫০০ জনের বাধ্যবাধকতা থাকলে পুরো হজ ব্যবস্থাপনাই ‘ভঙ্গুর হওয়ার আশঙ্কা ও চরম অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি হওয়ার’ সম্ভাবনা রয়েছে।
এবার এজেন্সি প্রতি সর্বনিম্ন ১০০ জন ও সর্বোচ্চ ২৫০ জন হজযাত্রী নির্ধারণ এবং প্রত্যেক এজেন্সিকে নিজ নিজ দলের হজযাত্রীদের জন্য বাড়ি ভাড়া করার সুযোগ দিয়ে হজ ব্যবস্থাপনাকে ‘সুষ্ঠু, পরিচ্ছন্ন ও সঙ্কটমুক্ত’ করতে সবার সহযোগিতা চেয়েছেন হাব নেতারা। ২০২৫ সালে বাংলাদেশ থেকে ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জনকে হজ করার সুযোগ দিচ্ছে সৌদি আরব; প্রাথমিক নিবন্ধনের সময় শেষ হলেও সেই কোটা পূরণ হয়নি।
খরচা বেড়ে যাওয়ায় ২০২৪ সালেও প্রায় ৩৩ শতাংশ কোটা পূরণ হয়নি, হজে গিয়েছিলেন ৮৫ হাজার ২৫৭ জন। এবার প্রাথমিক নিবন্ধনই সেরেছেন ৮৩ হাজার ৫২৭ জন, যা চূড়ান্ত নিবন্ধনে আরও কমতে পারে। তার মানে এবার হজযাত্রী কমছে অন্তত ১ হাজার ৭৩০ জন।