ই-পেপার
সর্বশেষ সংবাদ :

মুড়িকাটা পেঁয়াজে লোকসান গুনবে কৃষক

সাইফুল ইসলাম, গোদাগাড়ী: আর্থিক ক্ষতির শঙ্কায় পড়েছে গোদাগাড়ীর পেঁয়াজ চাষিরা। আমদানিকৃত ভারতীয় পেঁয়াজের কারণে চাষকৃত দেশি পেঁয়াজের বাজারে ধস নেমেছে। পেঁয়াজ উৎপাদনের অন্যতম উপজেলা গোদাগাড়ী, বাজারে আসতে শুরু করেছে নতুন মৌসুমের আগাম জাতের মুড়িকাটা পেঁয়াজ।
গোদাগাড়ীর চাষিরা গত বছর মুড়িকাটা পেঁয়াজ চাষ করে লাভবান হলেও এবার হতাশায় ভূগছেন। বেশি দামে বীজ ক্রয়, প্রতিকুল আবহাওয়ার প্রভাবে ফলন কমার আশঙ্কায় রয়েছে। সেই সাথে বাজারে আশানুরুপ দাম না পাওয়া উৎপাদন খরচ তোলা নিয়েও শঙ্কা বাড়ছে কৃষকদের।
এ কারণে সরকারের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে কৃষক শামীম বলেন, এই সময়ে এলসির পেঁয়াজ আসছে। উৎপাদন মৌসুমে আমদানি বন্ধ না করলে কৃষক আর্থিক ক্ষতির মধ্যে পড়বে। কৃষককে বাঁচাতে হলে উৎপাদন মৌসুমে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ করতে হবে।
সরেজমিনে উপজেলার চর ও বরেন্দ্র অঞ্চলে গিয়ে দেখা যায়, কোন কোন মাঠে যত দূর চোখ যায় ততো দূর পর্যন্ত শুধু পেঁয়াজ খেত চোখে পড়ে। পেঁয়াজ গাছ গুলো সবুজ হয়ে রয়েছে আর কদিন পরেই উঠবে এসব পেঁয়াজ। মুড়িকাটা পেঁয়াজ চাষিরা শেষ সময়ে পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছে জমিতে। কেউ পেঁয়াজ খেতে শেষ নিড়ানী দিচ্ছে, কেউ আগাছা পরিস্কার করছে, পানি দিচ্ছে।
গোদাগাড়ীর পৌর এলাকার মহিশালবাড়ি গ্রামের কৃষক শাহাদাত হোসেন বলেন, এ বছর ৬ বিঘা জমিতে রোপণ করেছি মুড়িকাটা পেঁয়াজ। এখন পর্যন্ত আমার খরচ হয়েছে সাড়ে পঁচ লাখ টাকা। দুই দফা বৃষ্টিতে বীজতলা নষ্ট ও অতিমূল্যে বীজ কেনায় এ বছর খরচ হয়েছে প্রায় দ্বিগুণ, ২০ দিন পরে আমার জমির পেঁয়াজ তুলব। বর্তমানে পেঁয়াজের যে দাম এতে লোকসানের আশঙ্কায় আছি আমি।
তিনি বলেন, এবার রোপণ মৌসুমে বীজের দাম ছিল বেশি। ১৬ হাজার টাকা মণ দরে (জিরো সাইজ) পেঁয়াজে কিনে রোপণ করতে হয়েছে। গড়ে এক বিঘায় সাড়ে তিন মণ করে বীজ লেগেছে। শুধু বীজের খরচই হয়েছে বিঘায় ৫৬ হাজার টাকা পর্যন্ত। জমির ইজারা, সার কীটনাশক এবং শ্রমিকের মজুরি মিটিয়ে আরও ৫০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে প্রতি বিঘায়। জমি থেকে পেঁয়াজ তুলতে আরও খরচ হবে ১০ হাজার টাকা। গড়ে এক বিঘা জমির জন্য ১ লাখ ১৬ হাজার টাকা পর্যন্ত খরচ হবে।
চর মানিকচক গ্রামের কৃষক কমাল উদ্দিন বলেন, সার-বীজ কীটনাসকসহ সব কৃষি উপকরণের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় তাদের খরচ বাড়লেও উৎপাদিত পণ্যের দাম বাড়েনি। বৈরী আবহাওয়ায় এবার ফলন কম হওয়ার সম্ভাবনা বেশি, তেমনি বাজারে নতুন পেঁয়াজের দাম খুবই কম। এরপর আবার ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানি হচ্ছে। বর্তমান বাজার মুল্য হিসেব করলে প্রতি বিঘায় প্রায় ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা লোকসান গুণতে হবে। তাই কৃষকদের বাঁচাতে ভরা মৌসুমে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ করলে দেশি পেঁয়াজের দাম কিছুটা বাড়বে।
এদিকে গোদাগাডীর বিভিন্ন হাটবাজারে নতুন মৌসুমের মুড়িকাটা পেঁয়াজ পাওয়া যাচ্ছে। জেলার বিভিন্ন মোকাম থেকে এনে খুচরা বিক্রি করছে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা দরে।
গোদাগাড়ী কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা, মরিয়ম আহম্মেদ বলেন, এবছর উপজেলায় ৭৫০ হেক্টর জমিতে মুড়িকাটা পেঁয়াজ আবাদ হয়েছে। মুড়িকাটা পেঁয়াজ রোপনের সময় অতিরিক্ত বৃষ্টির কারণে আবাদ পিছিয়ে যাওয়ায় ফলন কিছুটা কম হবে। আর বিদেশি পেঁয়াজ আমদানির কারণে পেঁয়াজের দাম সব সময় উঠানামা করে। এখন যে দামটা পাচ্ছে চাষিরা এর থেকে একটু বেশি হলে কৃষকেরা লাভবান হতো। তারপরও কৃষক আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হবে না বলে আশা করেন।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহীতে মুড়িকাটা পেঁয়াজের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৭ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে। এর বিপরীতে চাষ হয়েছে ১১ হাজার ২২৫ সেক্টর জমিতে। সবে পেঁয়াজ উঠতে শুরু করেছে।


প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২৯, ২০২৪ | সময়: ৫:০০ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ