শনিবার, ৮ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ২৫শে মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ।
সানশাইন ডেস্ক : দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী সশস্ত্র যুদ্ধ শেষে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাঙালি জাতি পায় কাঙ্খিত মুক্তিযুদ্ধে বহুপ্রত্যাশিত বিজয়। এই বিজয়ের মধ্য দিয়ে পূর্ববঙ্গের আপামর জনতা পৃথিবীর মানচিত্রে জন্ম দেয় বাংলাদেশ নামে নতুন এক রাষ্ট্রের।
হাজার হাজার মানুষের ‘জয় বাংলা’ ধ্বনিতে ঢাকায় আবেগপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টি হয়। পরাজিত পাকিস্তান সেনাবাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল আমির আবদুল্লাহ খান নিয়াজি মুক্তি বাহিনী ও ভারতীয় বাহিনীর সমন্বয়ে গড়া যৌথ বাহিনীর প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরার কাছে অস্ত্র ও সেনা সমর্পণ করে আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পণ দলিলে স্বাক্ষর করেন। মুক্তি বাহিনীর প্রতিনিধিত্ব করেন বাংলাদেশ বাহিনীর উপপ্রধান গ্রুপ ক্যাপ্টেন এ কে খন্দকার। বাংলাদেশ বাহিনী ও মুক্তি বাহিনীর পক্ষে আরও ছিলেন এস ফোর্সের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল কে এম সফিউল্লাহ, ২ নম্বর সেক্টরের অধিনায়ক মেজর এ টি এম হায়দার, কাদের সিদ্দিকীসহ অনেকে।
এর আগে নিয়াজির নির্দেশে পাকিস্তানি বাহিনী ভোর পাঁচটা থেকে যুদ্ধবিরতি শুরু করে। সকাল সাড়ে আটটা নাগাদ ভারতীয় বাহিনীর ডিভিশনাল অধিনায়ক মেজর জেনারেল গন্দর্ভ সিং নাগরাকে নিয়ে একটি সামরিক জিপ ঢাকার মিরপুর সেতুর কাছে এসে থামে। নিয়াজির জন্য নাগরার বার্তা নিয়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় হেড কোয়ার্টারের দিকে সাদা পতাকা উড়িয়ে একটি জিপে রওনা দেন ভারতীয় ও বাংলাদেশ বাহিনীর দুজন সেনা কর্মকর্তা। বার্তাটিতে লেখা ছিল, ‘প্রিয় আবদুল্লাহ, আমি এখন মিরপুর ব্রিজে। আপনার প্রতিনিধি পাঠান।’
এর আগেই নিয়াজি যুদ্ধবিরতি ও অস্ত্র সংবরণের কথা আনুষ্ঠানিকভাবে ভারতকে জানানোর জন্য ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের কনসাল অফিসে নিয়োজিত সামরিক অ্যাটাশেকে অনুরোধ করেন। দিল্লির যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসের মাধ্যমে ভারত সরকারকে তা জানানো হয়। বেলা ১১টার দিকে যৌথ বাহিনীর দুই প্রতিনিধি নিয়াজির হেডকোয়ার্টার থেকে ফিরে আসেন। নিয়াজির প্রতিনিধি হিসেবে আত্মসমর্পণের আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব নিয়ে আসেন মেজর জেনারেল জামশেদ। দুপুর ১২টার দিকে তাঁর সঙ্গে নাগরা নিয়াজির অফিসে পৌঁছান। এরপর শুরু হয় আত্মসমর্পণের শর্তাবলি নিয়ে কথাবার্তা। বেলা একটা নাগাদ কলকাতা থেকে ঢাকায় এসে পৌঁছান ভারতীয় বাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডের চিফ অব স্টাফ মেজর জেনারেল জে এফ আর জ্যাকব। ততক্ষণে যৌথ বাহিনী মিরপুর সেতু পেরিয়ে ঢাকায় ঢুকতে শুরু করেছে।