সর্বশেষ সংবাদ :

উত্তরাঞ্চলে ঝেঁকে বসেছে শীত

আব্দুল বাতেন ও স্টাফ রিপোর্টার, নওগাঁ: কুয়াশায় আচ্ছন্ন হয়ে রয়েছে পদ্মা পাড়ের রাজশাহী। রাতের আড়মোড়া ভেঙে সবাই যখন চোখ মেলেছে ভোরের আলো তখনও ফোটেনি। সোমবার (৯ ডিসেম্বর) ভোর সাড়ে ৬ টার পর রাজশাহীতে সূর্যোদয় হয়েছে। তবে সারাদিনই গড়িয়ে গেলেও সূর্যের দেখা মেলেনি। এখনও ঘন কুয়াশার চাদরে মুড়ি দিয়ে আছে পুরো রাজশাহী। ফলে দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা এবং সর্বনিম্ন তাপমাত্রার ব্যবধান কমে এসেছে। আর এ কারণেই বেড়েছে শীতের দাপট। রাজশাহী ছাড়াও আশেপাশের জেলাগুলোতেও ঝেঁকে বসেছে শীত।
নিম্নআয়ের মানুষ রয়েছে চরম দুর্ভোগে। ক্ষতি হচ্ছে ফসলের। হাসপাতালগুলোতে বাড়ছে শীতজনিত রোগবালাই। ঘনকুয়াশা আর হিমেল বাতাসে দুর্ভোগে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। বিশেষ করে বেকায়দায় পড়ছেন খেটে খাওয়া নিম্নআয়ের লোকজন।
রাজশাহী আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, সোমবার (৯ ডিসেম্বর) দিনের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১২.৩ ডিগ্রী সেলসিয়াস। সকাল ৯ টায় তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১৭ ডিগ্রী সেলসিয়াস, ১০ টায় ১৭.৬ ডিগ্রী সেলসিয়াস বেলা ১১ টায় ১৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস। সারাদিনেও সূর্যের দেখা মেলেনি। রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের সহকারি আনোয়ারা খাতুন জানান, আজ (সোমবার) সূর্য না উঠার সম্ভাবনা রয়েছে।
রাজশাহীর আশেপাশের জেলা শহর ও মফস্বলে শীতে জবুথবু অবস্থা। ঘন কুয়াশার চাঁদরে ঢাকা পড়েছে রাজশাহীসহ উত্তরের জনপদ। সবচেয়ে বেশি কষ্টে আছে দরিদ্র ও খেটে খাওয়া মানুষ। এছাড়া বয়স্ক এবং শিশুরাও এই শীতে ব্যাপক ঝুঁকিতে আছে।
পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় কয়েকদিন থেকে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৯.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উঠানামা করছে। নওগাঁয় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ঘরে থাকছে। দিনাজপুর, রংপুর, জয়পুরহাট জেলার পরিস্থিতিও একই।
তাপমাত্রা ১০ থেকে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকলে তাকে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বলা হয়। আর যদি ৮ থেকে ৬ ডিগ্রির মধ্যে থাকে তাহলে তা মাঝারি এবং ৬ ডিগ্রির নিচে নেমে গেলে তাকে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ বলা হয়। আবহাওয়া অফিস জানিয়ে চলতি মাসে ২ থেকে ৩টি শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাবে। এর মধ্যে একটি তীব্র শৈত্যপ্রবাহ থাকবে। শুধু তাই নয়, জানুয়ারি মাসে স্বাভাবিক যে তাপমাত্রা থাকে, এবার তার চেয়েও কমে যেতে পারে।
নওগাঁর বদলগাছী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, ‘সোমবার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১২ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগে রোববার তাপমাত্রা রেকর্ড ছিল ১০ দশমিক ৬ এবং শনিবার ছিল ৯ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গত দুই দিনের তুলনায় আজ তাপমাত্রা কিছুটা বেড়েছে।’
নওগাঁর জেলা প্রশাসন মোহাম্মদ আব্দুল আউয়াল বলেন, ‘বর্তমানে শীত ও কুয়াশার প্রকোপ বেড়েছে। আমরা ইতিমধ্যে শীতার্ত মানুষের সাহায্যের উদ্যোগ নিয়েছি। বরাদ্দ পেলেই শীতবস্ত্র বিতরণ শুরু হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এ ছাড়া স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এবং সমাজের সামর্থ্যবান ব্যক্তিদের শীতার্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর অনুরোধ জানাচ্ছি।’
আবহাওয়া অফিস আরো জানায়, দেশের শীতলতম মাস জানুয়ারি। পুরো মাসেই শীতের অনুভূতি বেশি থাকবে। এদিকে, উত্তরের জেলাগুলোতে প্রায় দুপুর পর্যন্ত ঘন কুয়াশা থাকা থাকছে। সড়ক ও মহাসড়ক থেকে শুরু করে শহরেও দিনের বেলা যান চলাচল করছে হেডলাইট জ্বালিয়ে। ঘন কুয়াশা আর তীব্র শীতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা।
এদিকে সূর্যের দেখা না মেলায়, রাস্তাঘাটে লোকজনের সমাগম দেখা গেছে। কুয়াশা ও সূর্যের লুকোচুরির সাথে সাথে মৃদু বাতাস বইতে থাকায় শিশু ও বৃদ্ধদের বাইরে তেমন দেখা যায়নি। অপর দিকে কর্মজীবি ও স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীদের চাদর, শুয়েটার, মাফলারসহ মোটা কাপড় পরিধান করে বের হতে দেখা গেছে।
শহর ও হাট-বাজারে লোকজনের উপস্থিতি কমে আসায় প্রয়োজনীয় যাত্রী না পেয়ে অর্থ কষ্টে পড়েছে রিকশা, ব্যাটারী চালিত অটোচালকেরা। শীতে ক্ষতি হচ্ছে ফসলের।
এদিকে শীতের তীব্রতা বৃদ্ধি পাবার সাথে সাথে নিউমোনিয়া, কোল্ড ডায়রিয়া, শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন রোগ বালাই বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে শিশুরা ভাইরাস জ্বর আর নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।ফলে শীতের শুরু থেকেই সাবধানতা অবলম্বন করতে বলছেন চিকিৎসকরা।
নওগাঁর স্টাফ রিপোর্টার তার পাঠানো প্রতিবেদনে জানিয়েছেন, ঘন কুয়াশার চাদরে ঢেকে আছে নওগাঁর পথঘাট। কুয়াশার কারণে সড়কে হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করেছে যানবাহনগুলো। সোমবার সারাদিন দেখা মিলেনি সূর্যের। ।ে এরআসামবার সকাল ৯টায় জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১২ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসগে গত দুই ধরে এই জেলায় দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল। গত দুই দিনের তুলনায় আজ তাপমাত্রা বাড়লেও কুয়াশা আর হিমেল বাতাসে অব্যাহত রয়েছে শীতের তীব্রতা।
স্থানীয়রা জানান, কয়েক দিন ধরেই সন্ধ্যার পর শীতের প্রকোপ একটু বেশি থাকছে। রাত থেকে ভোর পর্যন্ত কুয়াশায় আচ্ছন্ন থাকলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দ্রুতই কুয়াশা ভেদ করে দেখা মিলেছে সূর্যের। তবে আজ বেলা গড়ানোর পরও কুয়াশায় কাটছে না। বৃষ্টির মতো ঝির ঝির করে ঝড়ছে কুয়াশা। সেই সঙ্গে উত্তরের হিমেল বাতাস যোগ হওযায় শীতের তীব্রতা বাড়ছে। এতে দিনমজুর, কৃষি শ্রমিকসহ খেটে খাওয়া মানুষের দুর্ভোগ দেখা দিয়েছে।
সদর উপজেলার ঠাংভাঙ্গা মোড়ে এলাকার আফছার আলী বলেন, গত দুই থেকে খুব ঠান্ডা পড়েছে। তবে সকাল ৮টা ৯টার দিকে সূর্য উঠলেও আজকে সূর্যের দেখা নাই। বৃষ্টির মতো ঝির ঝির করে কুয়াশা পড়ছে। শুরুতেই যদি এত ঠান্ডা পড়ে তাহলে সামনের দিনে তো আরও বেশি ঠান্ডা হবে। এমনিতেই ঠান্ডায় কোন কিছু করা যাচ্ছে না। হাত-পা নিস্তেজ হয়ে যায়।
নওগাঁর বদলগাছী কৃষি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের কর্মকর্তা মিজানুর রহমান জানান, আজ সকাল ৯টায় জেলায় ১২ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। গেলো ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে এ জেলার তাপমাত্রা বেড়েছে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। উত্তর দিক থেকে বয়ে আসা হিমেল হাওয়া শীতের তাপমাত্রা আগামীতে বৃদ্ধি পেতে পারে বলেও জানান তিনি।


প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১০, ২০২৪ | সময়: ৬:৩৪ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ