রবিবার, ২৬শে জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ১২ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ।
সানশাইন ডেস্ক: জুলাই-অগাস্টের খুনিদের পুনর্বাসনের কেউ চেষ্টা করলে তাদের প্রতিহত করতে আবার জীবন দিতে প্রস্তুত থাকার কথা জানিয়েছেন জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক সারজিস আলম।
তিনি বলেছেন, “৫ অগাস্টের পূর্বে আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে জীবন দেওয়ার জন্য প্রস্তুত ছিলাম, আমরা এখনো সেই খুনিদের বিচার নিশ্চিত করার জন্য এবং তাদের সকল প্রকার পুনর্বাসনের বিরুদ্ধে আমরা জীবন দেওয়ার জন্য প্রস্তুত আছি।” শনিবার দুপুরে চট্টগ্রাম নগরীর পিটিআই অডিটোরিয়ামে শহীদ পরিবারকে আর্থিক সহায়তা প্রদান অনুষ্ঠানের ফাঁকে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন। অনুষ্ঠানে চট্টগ্রাম বিভাগের ১০৫ শহীদের প্রত্যেক পরিবারকে পাঁচ লাখ টাকার চেক দেওয়া হয়।
‘শহীদ পরিবারের পাশে বাংলাদেশ’ শিরোনামে অনুষ্ঠানে স্বজনহারারা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের কাছে পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। এসময় জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক সারজিস আলম তাদের সান্ত্বনা দেন। অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তব্যে জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক সারজিস আলম বলেন, “আমরা যতই সান্ত্বনা দিই, আর্থিক সহযোগিতা দিই, একজন সন্তানের অভাব, একজন জীবনসঙ্গীর অভাব, একজন ভাইয়ের অভাব- কোনোদিনও পূরণ করতে পারব না।
“এই যে এত বড় হত্যাকাণ্ড- তার পরও এই বাংলাদেশে ওই খুনিদের নাম আবার উচ্চারিত হয়। তাদের রাজনৈতিক অধিকার নিয়ে আবার কথা বলা হয়। এরা একেকজন প্যাথলজিক্যাল কিলার। বিগত ১৬ বছরে তারা বাংলাদেশের মানুষকে নানাভাবে খুন করেছে।” জাতীয় নাগরিক কমিটির এই সদস্য বলেন, “নতুন করে এই বাংলাদেশে ওই পোশাক পরে কিছু পুলিশ সদস্য আবার একটি দলের হয়ে কাজ করছে। দয়া করে ওই পোশাকটা খুলে রেখে চলে যান। আমরা যেহেতু জীবন দিতে শিখে গিয়েছি।
“আপনাদের স্পষ্ট করে বলি, এই দেশে কোনো দালাল ও তোষামোদকারীর আর জায়গা হবে না। শহীদ ভাইদের নিয়ে এখনো মামলা ব্যবসা হচ্ছে। আমরা আর এগুলো দেখতে চাই না।” আন্দোলনে স্বজন হারানোদের উদ্দেশে সারজিস বলেন, “আপনাদের শক্ত হতে হবে। এই খুনগুলোর বিচার বাংলাদেশে নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত আমরা কথা বলে যাব। যে কেউ যদি আপনাদের নিয়ে ছেলেখেলা করার চেষ্টা করে- কোনো প্রমাণ পেলে তার বিরুদ্ধে আমরা বাংলাদেশে যুদ্ধ ঘোষণা করব।
“আপনাদের যেকোনো সহযোগিতার জন্য পুরো বাংলাদেশ আপনাদের পাশে দাঁড়াতে প্রস্তুত। এখন পর্যন্ত হয়ত সেভাবে পাশে দাঁড়াতে পারিনি। যেকোনো প্রয়োজনে শুধু আমাদের জানাবেন। জীবনের মায়া আমরা অনেক আগে ভুলে গিয়েছি।” তিনি বলেন, “পুলিশের গুলির সামনে জুলাই-অগাস্টে আমাদের অনেকে বুক পেতেছিল। আপনাদের যা কিছু প্রয়োজন, সবকিছু দিয়ে আপনাদের পাশে থাকব। “কেউ যদি খুনি হাসিনার এজেন্ট হিসেবে কাজ করে, আমরা একসাথে নেমে আবার তাদের প্রতিহত করব।”
চেক বিতরণের আগে সারজিস আলম বলেন, “দেড় থেকে দুই বছর বয়স হবে, সেই শিশু আমাকে বলছে- ‘আমার ভাই কোথায়?’ একজন বাবা একটা ছবি দেখালেন, তার সন্তানের পেটে গুলি করা হয়েছে। আমরা হাজার চেষ্টা করি ইমোশন চেপে রাখার, পারি না। “আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি অনুরোধ, যারা এগুলোর সাথে সম্পৃক্ত ছিল, প্রমাণের ভিত্তিতে তাদের বিচার নিশ্চিত করুন। দিন শেষে পদ-পদবি কিছু থাকবে না। নিজের প্রতি সৎ থাকার চেয়ে শান্তির কিছু হতে পারে না।”
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার জিয়াউদ্দীন, পুলিশ সুপার রায়হান উদ্দিন খান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক আব্দুল কাদের, রাসেল আহমেদ, খান তালাত মাহমুদ রাফি ও জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সদস্য তাসনিম জারা। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক অং সুই প্রূ মারমা, চট্টগ্রাম রেঞ্জের এডিশনাল ডিআইজি সঞ্জয় সরকার, জেলার সিভিল সার্জন ডা. জাহাঙ্গীর আলম এবং অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুজ্জামান।