সর্বশেষ সংবাদ :

বড়াল দখলমুক্ত করার উদ্যোগ নেই

অহিদুল হক, বড়াইগ্রাম: নাটোরের বড়াইগ্রামে বড়াল নদীর অবৈধ দখল উচ্ছেদে কোন উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে না। কোন অভিযান না থাকায় প্রভাবশালীরা দেদারছে নদী দখল করে নিচ্ছে। এভাবে দুই পাশ দখলে বড়াল এখন সরু খালে পরিণত হয়েছে। এতে বর্ষাকালে নদী ভরাট হয়ে পানি উপচে বনপাড়া পৌরসভাসহ আশেপাশের এলাকার বাড়িঘরে ঢুকে পড়ে। ফলে দুর্ভোগে পড়েন এসব এলাকার বাসিন্দারা।
জানা গেছে, রাজশাহীর চারঘাটে পদ্মার শাখা হিসাবে উৎপন্ন হয়ে দুইশ’ ২০ কি.মি দীর্ঘ বড়াল নদী পুঠিয়া, বাগাতিপাড়া, বড়াইগ্রাম, চাটমোহর, ভাঙ্গুড়া ও ফরিদপুর উপজেলার মধ্যদিয়ে বাঘাবাড়ি হয়ে হুরাসাগাগরের বুকে মিশে নাকালিয়া এলাকায় যমুনায় পড়েছে। ১৯৮১-৮২ অর্থবছরে পানি উন্নয়ন বোর্ড চারঘাটে বড়ালের উৎস্য মুখে ৮ ফুট উচ্চতা ও ২০ ফুট দৈর্ঘ্যরে তিনটি গেটবিশিষ্ট মাত্র ৫ হাজার কিউসেক পানি ডিসচার্জ ক্ষমতাসম্পন্ন রেগুলেটর (বাঁধ) নির্মাণ করে।
এদিকে, বড়াইগ্রামের ধামানিয়াপাড়া ও রয়না মোড়ে বক্স কালভার্ট, চাটমোহরের নুননগরে সøুইসগেট এবং নতুন বাজার, বোথর ও রামনগরে নদীর বুক চীরে রাস্তা করায় পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে যায়। এ সুযোগে ভূমিদস্যুরা নদীর দুপারে মাটি ভরাট করে দখল করে নেয়। আর এখন দখলে বড়াল হয়ে উঠেছে সরু নালা।
এ অবস্থা থেকে উত্তরণে ২০১০ সালে নদী খননের নামে খনন করা মাটি নদীতেই স্তূপ করে রাখার কারণে রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নেয়া ১৩ কোটি টাকার প্রকল্প কোনো কাজে আসেনি। পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, ১৯৯৪-৯৫ অর্থবছরে পানি উন্নয়ন বোর্ড ‘বড়াল বেসিন প্রকল্প’ নামে বিভিন্ন অবকাঠামোসহ নদী খনন কাজ শুরু করে।
প্রকল্পটির কাজ শেষ হয় ২০০৪-০৫ অর্থবছরে। এই প্রকল্পের আওতায় বিভিন্ন রেগুলেটর, অবকাঠামো, খাল ও নদী পুনঃখননের জন্য জমি অধিগ্রহণ করা হয়। ২০১০-১১ অর্থবছরে ১৫ দশমিক ২০ হেক্টর জমি অধিগ্রহণ করে মূল্য বাবদ ৭৬ লাখ ৪৪ হাজার টাকা ভূমি মালিকদের পরিশোধ করা হয়। তার পরেও নদী তীরবর্তী এলাকা দখলমুক্ত করা সম্ভব হয়নি।
স্থানীয়রা জানান, বড়াইগ্রামের বনপাড়া পৌর এলাকায় নদীর ৫ কিলোমিটার এলাকার প্রায় পুরোটাই দখল করে নেয়ায় বড়ালের এ অংশ এখন সরু খালে পরিণত হয়েছে। নদীর দুই পাড় দখল করে আবাসন প্রকল্প, বাড়িঘর, এমনকি সরকারী অফিস-আদালতও গড়ে উঠেছে। এক সময়ে যে নদীতে বড় বড় নৌকা চলতো, বর্তমানে সে নদী পুরোদস্তুর ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে।
এসব বিষয়ে প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় দিন দিন বড়াল দখল হয়েই যাচ্ছে। সরু খালের মতো এখনও যেটুকু আছে, তা রক্ষারও কোন উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে না। এতে বর্ষাকালে পৌর এলাকার ড্রেনের পানি নদীতে নামার পরিবর্তে উল্টো নদীর পঁচা পানি ড্রেনে ঢুকে পৌর এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি করে। এতে পৌর বাসিন্দারা বর্ষাকালে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন।
স্কুল শিক্ষক নজরুল ইসলাম বলেন, পৌর এলাকায় দখলের ফলে নদী এখন খাল হয়ে গেছে। বর্ষাকালে একটু ভারী বৃষ্টি হলেই এটি ভরাট হয়ে যায়। ফলে বৃষ্টির পানি অপসারণের সুযোগ না থাকায় পৌরসভার নদী তীরবর্তী এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে বাড়িঘরে পানি ঢুকে পড়ে। তখন দুর্ভোগের অন্ত থাকে না।
স্থানীয় উদ্যোক্তা ফারুক হোসেন আপন জানান, অবৈধ দখলের কবলে পড়ে বড়াল নদী মরা খালে পরিণত হয়েছে। একই সঙ্গে নদীর বুকে বাড়িঘর তোলায় বনপাড়া পৌর এলাকাসহ বিভিন্ন জায়গায় নদী এখন হারিয়ে যেতে বসেছে। এখনই সরকারি উদ্যোগ গ্রহণ করে নদীটি পুনঃখনন করা না হলে এ নদীই এক দিন হারিয়ে যাবে মানচিত্র থেকে।
সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও বনপাড়া পৌর প্রশাসক আশরাফুল ইসলাম বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসন ও বড়াল নদীর পানি ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ২০২৩-২০২৪ অর্থ বছরে পৌরসভার উদ্যোগে ইগডঝঝচ প্রকল্পের আওতায় নদীর আট কিলোমিটার এলাকা খননের উদ্যোগ নেয়া হয়। এক কোটি ৭৯ লাখ টাকা ব্যয়ে কাজটি শুরু হলেও বর্ষা মৌসুমে তা বন্ধ রাখতে হয়। আশা করছি আসন্ন ডিসেম্বর মাসে কাজ আবার শুরু করে ২০২৫ সালের জানুয়ারীর মধ্যে শেষ হবে ইনশাল্লাহ।


প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৭, ২০২৪ | সময়: ৬:০০ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ