সোমবার, ১৭ই মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ৩রা চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ।
মিজানুর রহমান,চারঘাট:
রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার বাদুড়িয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বাবর আলীর বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক বাবর আলী বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত। অর্থ আত্মসাত, কর্মচারী নিয়োগে অনিয়ম,বিদ্যালয়ে অনুপস্থিতি সহ বিভিন্ন অনিয়ম ও দুনীতির অভিযোগে চারঘাট উপজেলা নির্বাহী অফিসারের (ইউএনও) কাছে পৃথক পৃথক ভাবে লিখিত অভিযোগ করেছেন বিদ্যালয়টির সাবেক শিক্ষার্থীসহ কয়েকজন এলাকাবাসী। এ ঘটনায় গঠন করা হয়েছে ৩ সদস্য বিশিষ্ট দুটি তদন্ত কমিটি। ইতিমধ্যে প্রধান শিক্ষকের অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে মাঠে নেমেছেন তদন্ত কমিটির সদস্যরা। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সানজিদা সুলতানা।
অভিযোগে জানা যায়, ১৯৬৬ সালে স্থাপিত ঐতিহ্যবাহি বাদুড়িয়া উচ্চ বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক আওয়ামীলীগের ক্ষমতাকালে বিদ্যালয়টিকে টাকা কামানোর মেশিনে পরিনত করেছিলেন। তিনি ইউসুফপুর ইউনিয়ন আওয়ামীলেিগর সাবেক সহসভাপতি হিসেবে দায়িত্বে থাকার কারনে ক্ষমতার অপব্যবহার করে অধিকাংশ সময় বিদ্যালয়ে ছিলেন অনুপস্থিত। এ ছাড়াও তিনি ২০০৭ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ২০৪ মাসে বিদ্যালয়টির নিজস্ব ১২টি দোকান ঘর মাসিক ২০০ টাকা করে মোট ৪ লক্ষ ৮৯ হাজার ৬০০ টাকা ভাড়া আদায় করা টাকা বিদ্যালয় ফান্ডে জমা না দিয়ে পুরো টাকায় আত্মসাত করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। অন্য দিকে একটি আমের বাগান থেকে ৩ বছর অন্তর অন্তর চুক্তিতে গত ১৭ বছরে তিনি প্রায় ৪ লাখ টাকা বিদ্যালয় ফান্ডে জমা না দিয়ে পুরো টাকায় আত্মসাত করেছেন বলে অভিযোগকারীরা অভিযোগ করেছেন।
এছাড়াও সম্পুর্ন নিয়ম নীতি উপেক্ষা করে মাত্র ৪ মাস আগে ৪ জন কর্মচারীদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা নিয়ে নিয়োগ দিয়েছেন। ওই চারজন কর্মচারীদের কাছ ৭ লাখ থেকে ১১ লাখ পর্যন্ত টাকা আদায় করে পুরো টাকায় গায়েব করেছেন প্রধান শিক্ষক বাবর আলী। বিভিন্ন সময়ে জেলা পরিষদ থেকে উন্নয়নের নামে আনা টাকার কোন হিসেবে না দিয়ে পুরো টাকায় তিনি নিজের পকেটে ভরেছেন বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ।
এ সব বিষয়ে গত সোমবার উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ফয়সাল ফেরদৌসের নেতত্বে গঠিত ৩ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি সরজমিনে তদন্তে গেলে শিক্ষক বাবর আলীর বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগে উল্লেখিত টাকা আদায়ের কথা শিকার করলেও টাকা খরচের কোন লিখিত ডকোমেন্ট দেখাতে পারেনননি অভিযুক্ত বাবর আলী বলে একটি সুত্রের দাবি।
এ বিষয়ে তদন্ত কমিটির প্রধান উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ফয়সাল ফেরদৌস বলেন, ইতিমধ্যে তদন্ত কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। সম্পুর্ন নিরপেক্ষতার সঙ্গে তদন্ত করা হচ্ছে। প্রকৃত ঘটনায় তুলে ধরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়া হবে।
এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বাবর আলী বলেন, দোকান ঘর থেকে আদায়কৃত ভাড়া অফিসসহ বিভিন্ন কাজে ব্যায় করা হয়েছে। সম্পুর্ন নিয়ম মেনেই কর্মচারী নিয়োগ করা হয়েছে। এখানে আমার সঙ্গে আর্থিক লেনদেন হয়নি। সরকার পরিবর্তনের পর নিরাপত্তাহীনতার কারনে বিদ্যালয়ে উপস্থিত হতে পারিনি। তবে আমার সুনাম নষ্ট করতে এসব অভিযোগ করা হয়েছে। যার কোনোটিরই ভিত্তি নেই।
চারঘাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার সানজিদা সুলতানা বলেন, প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে কয়েকটি অভিযোগ পেয়েছি। সে বিষয়ে ৩ সদস্য বিশিষ্ট দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর সংশ্লিষ্ট বিভাগে তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করা হবে বলে জানান তিনি।
সানশািইন / শামি