নিত্যপণ্যের বাজারে উচ্চমূল্যের দাপট

নুরুজ্জামান, বাঘা: বাঘার আমোদপুর গ্রামের কৃষক রবিউল ইসলাম। বাজার থেকে ফিরে গ্রামে এসে কয়েকজন ব্যক্তিকে উদ্দেশ্য কর বললেন, ‘আর বইলেন না ভাই, কি আর বলবো? দিনদিন বাজারের যা অবস্থা যাচ্ছে, মনে হচ্ছে এবার না খেয়েই দিন কাটাতে হবে। কিন্তু না খেয়ে কি থাকা যায় বলেন? বাচ্চাগুলারে কতদিন মাংস-মাংশ খাওয়াইতে পারি না। এখন সবজির দামও যা বেড়েছে, সেটা কিনতে হিম-সিম খেয়ে যাচ্ছি।
শুধু রবিউল ইসলাম নন, এমন অবস্থায় পড়তে হচ্ছে মধ্যবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্ত সহ স্বল্প আয়ের মানুষদের। তারা বলছেন, কাঁচা বাজারে আগুন এখনো থামেনি, সবকিছুর দাম ঊর্ধ্বমুখী। ভেবে ছিলাম শীতকালীন আগাম শাক-সবজি বাজারের এলে কিছুটা রক্ষা পাব। কেন্তু সেটা আর হচ্ছে না। এখন বাজারে সকল পন্যের দাম নাগালের বাইরে। কাঁচা মরিচ থেকে শুরু করে পেঁয়াজ, রসুন, গাজর, আলু সব কিছুর বাজার ঊর্ধ্বমুখী এবং এর সঙ্গে অন্যান্য শাক-সবজির দামও চড়া। শীত মৌসুম শুরুর আগেই হঠাৎ করে সকল প্রকার শাক-সবজির দাম এতোটা বেড়েছে যা অতীতের সব রেকর্ড ভঙ্গ করেছে।
বাঘার সুশীল সমাজের লোকজন বলছেন, নিত্যপণ্যের বাজারে দামের উত্তাপে ক্রেতা সাধারণ পুড়ে ছাড়খার হচ্ছে। এতে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত আয়ের মানুষের মধ্যে নাভিশ্বাস দেখা দিয়েছে। অধিকাংশ পরিবারে একবেলা আমিষ জুটছে না। প্রতি শীত মৌসুমে বাঘা থেকে অন্য এলাকায় সবজি আমদানি করা হতো। কিন্তু এবার চরাঞ্চলে বন্যা হওয়ায় আগের ঐ দৃশ্য এখন আর চোখে পড়ছে না।
সরেজমিন বৃহস্পতিবার উপজেলার সদরে আবস্থিত সবচয়ে বড় পাইকারির বাঘা পৌর বাজার এবং শনিবার আড়ানী পৌর বাজারে গিয়ে লক্ষ্য করা গেছে, গরিবের প্রোটিন হিসেবে পরিচিত ডিম সরকারের বেঁধে দেওয়া প্রতিপিস ১১ টাকা ৮৭ পয়সার স্থলে ১৩ টাকা ৭৫ পয়সা দরে বিক্রি করা হচ্ছে। শাক-সবজি গত সপ্তাহের চেয়ে কেজিতে ১-২ টাকা কমে বিক্রি হলেও আলু ৭০ টাকা, পটল ৪৫, কচু ৭০, বেগুন ৬০, লাউ একপিচ ৫০, ফুল কফি ৮০ বাধা কফি ৬০ সিম ৮০ পেঁপে ৩০ গাজর ২০০ কাঁচা মরিজ ১৩০, পেঁয়াজ ১৪০, রসুন, ২৮০, মিষ্টি কুমড়া, ৫০ করলা ৮০, ধুমা ৩০-ঢেরস ৮০ টাকা, মূলা ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। সকল পণ্যের দাম পুর্বের যে কোন সময়ের চেয়ে অনেক বেশি। এতে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত আয়ের মানুষের মধ্যে নাভিশ্বাস দেখা দিয়েছে। অধিকাংশ পরিবারে একবেলা আমিষ জুটছে না বহু সংখ্যক পরিবারে।
অপর দিকে চালের বাজারে আগের দামেই বেচাকেনা হতে দেখা যায়। বিআর-২৮ চাল মানভেদে ৫৪ থেকে ৫৮, রঞ্জিত ৫৬ থেকে ৫৮, কাটারিভোগ ৬৮-৭০, মিনিকেট ৭০ এবং নাজিরশাইল চাল প্রতিকেজি ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এদিকে ব্রয়লার মুরগি বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে। খুচরা বাজারে ডিম প্রতি হালি বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা এবং গরুর মাংশ বিক্রী হচ্ছে ৭০০ টাকা কেজি।
বাঘা হাটের পাইকারি সকল প্রকার সবজি বিক্রেতা মানিক মিয়া বলেন, গ্রামের বাজারে এখন পর্যন্ত যে কোন কাঁচা পণ্য যত কম মুল্যে পাওয়া যাচ্ছে শহরে সেটি কোন ভাবেই সম্ভব হচ্ছে না। সেখানে সকল সবজির দাম অনেক বেশী। এর কারণ হিসাবে তিনি বলেন, এ অঞ্চলের মানুষ সবাই কম-শেসি সবজি নিজ বাড়ির আশে-পাশে পতিত জমিতে চষাবাদ করে খাকেন। কিন্তু শহরে সে ব্যবস্থা নেই। এ কারণে সেখানে সকল পণ্যের দাম মফস্বল এলাকার চেয়ে অনেক বেশি। তার মতে, কিছু অসাধু ব্যবসায়ী রয়েছেন যারা ক্রেতা বুঝে দাম বেশি নেই। এ জন্য মাঝে মধ্যে বাজার মনিটরিং খুবই প্রয়োজন।
এ বিষয়ে উপজেলা সহকারী কমিশনরি (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সাবিহা সুলতানা ডলি বলেন, সরকার পরিবর্তনের পর নিজের অফিস সহ একটি পৌর সভা এবং দুটি ইউনিয়ন পরিষদ দেখ-ভালের দায়িত্ব আমার উপরে অর্পণ করা হয়েছে। তারপরও আমি খুব আরলি বাজার পরিদর্শনের চেষ্টা করবো।


প্রকাশিত: নভেম্বর ১২, ২০২৪ | সময়: ৬:২৩ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ