মঙ্গলবার, ১৮ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ৫ই ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ।
স্টাফ রিপোর্টার: বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকে শুক্রবার সকাল ৮টা পর্যন্ত সারাদেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। একই সঙ্গে এই সময়ে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন আরও ৪৬৬ জন। ওই সময়ের মধ্যে রাজশাহীতে নতুন রোগি ভর্তি হয়েছে ৯ জন। তার আগের দিন, বুধবার সকাল ৮টা থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত (একদিনে) ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে আরো ৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। একই সঙ্গে এই সময়ে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন আরও ১ হাজার ২০৯ জন। এরমধ্যে রাজশাহী বিভাগে ভর্তি হয়েছে ৭১ জন রোগি। বাস্তব চিত্রটা যখন এমন ভয়াবহ তখন মশা নিধন নিয়ে রাজশাহীর কার্যক্রম কচ্ছপ গতি। আগের বছরের তুলনায় মশার উপদ্রব এবার বেশি। সেই সঙ্গে নগরীর বিভিন্ন জায়গায় পরিক্ষা করে পাওয়া যাচ্ছে লাভাও। সাধারণ মানুষ রাজশাহী সিটি এলাকায় মশক নিধন কার্যক্রমকে গতিশীল করার আহ্বান জানিয়েছেন।
রাজশাহীতে চলছে ডেঙ্গুর ভরা মৌসুম। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে প্রতিদিনই বাড়ছে ডেঙ্গু রোগির সংখ্যা। এমন পরিস্থিতিতে রাজশাহী সিটি করপোরেশন এলাকায় চোখে পড়ে না মশন নিধন কার্যক্রম। সিটি করপোরেশনের তথ্যমতে, প্রতি বছর ৫৪ লাখ ৮০ হাজার টাকার লার্ভিসাইড ও ১৮ লাখ ৪৮ হাজার টাকার অ্যাডাল্টি সাইড কিনতে হয় রাসিককে। এসব প্রয়োগ ও কেরোসিন ডিজেল মিলে গড়ে প্রতিবছর মশা মারতেই রাসিকের খরচ হয় এক কোটি টাকা। কিন্তু বর্তমান সময়ে খুব সীমিত অষুধ আছে সিটি করপোরেশনের হাতে। বর্তমানে মজুত আছে ১০০ লিটার লার্ভিসাইড ও ২০০ লিটার অ্যাডাল্টি সাইড। তা নিয়েই আপাতত মশক নিধনের যুদ্ধ চালিয়ে যেতে হবে। তবে অষুধ কেনার জন্য যে বরাদ্দ সিটি করপোরেশন থেকে চাওয়া হয়েছে তা পাওয়া গেছে। দ্রুত সময়ের মধ্যেই মশক নিধনের অষুধগুলো কেনা হবে বলে জানিয়েছে রাসিক কর্তৃপক্ষ।
রাজশাহী বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের তথ্যমতে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ২ হাজার ৮৯৪ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন। এদের মধ্যে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ২৪০ জন। শুধুমাত্র রামেক হাসপাতালেই ভর্তি আছেন ৭০ জন। এবছর ডেঙ্গু আক্রান্ত পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। তার মধ্যে দুজনই রামেক হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন।
রাজশাহী বিভাগীয় স্বাস্থ্য উপ-পরিচালক ডা. মো. হাবিবুর রহমান বলেন, গত বছরের চেয়ে এবার মশার উপস্থিতি বেশি পাওয়া গেছে। স্থানীয়ভাবে পরীক্ষার মাধ্যমে ডেঙ্গুর লার্ভাও পাওয়া গেছে। এবছর অন্য বছরের চেয়ে রোগীর সংখ্যা বেশি।
নগরীর নওদাপাড়া ছায়ানীড় এলাকার বাসিন্দা আমজাদ হোসেন বলেন, দিনরাত মশা। চারিদিকে যেখানে ডেঙ্গু ছড়াচ্ছে তাতে বেশ আতঙ্কিত লাগে। মশক নিধন কার্যক্রমটা দ্রুত সময়ের মধ্যেই বাড়ানো প্রয়োজন।
নগরীর উপশহর এলাকার তুহিন জানান, কয়েল জ্বালিয়েও মশা দুর করা যাচ্ছে না। এ সময়টা দুর্যোগের সময়। সিটি করপোরেশনকে এগিয়ে আসা দরকার।
এ বিষয়ে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা শেখ মো. মামুন বলেন, আমাদের চাহিদা মতো ওষুধ নাই। মাত্র সাতদিন আমার অ্যাডাল্টি সাইড প্রয়োগ করতে পারবো। এজন্য এবার আমার ওষুধ প্রয়োগ করতে পারিনি। সামনে ব্রিডিং মৌসুমে এটি প্রয়োগ করা হবে। লার্ভিসাইট আমরা প্রয়োগ করছি। এটিও ডিসেম্বর পর্যন্ত চালাতে পারবো। এরপর আমাদের ওষুধ নেই।
এ বিষয়ে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের প্রশাসক ও বিভাগীয় কমিশনার দেওয়ান মো. হুমায়ন কবির বলেন, আমাদের ডিসেম্বর পর্যন্ত ওষুধ আছে। আমরা সরকারের কাছে আবেদন করছি। এসব ওষুধ কিনতে এক কোটি ৪৩ লাখ টাকা পেয়েছি। এখন আমরা দরপত্র দেবো এবং দ্রুতই ওষুধ কিনে নেবো।