বৃহস্পতিবার, ২৭শে মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ১৩ই চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ।
স্টাফ রিপোর্টার, বাঘা: রাজশাহীর বাঘা সীমান্ত এলাকায় ইমো প্রতারক ও বিকাশ হ্যাকার-সহ মাদক প্রতিরোধে মানব বন্ধন করা হয়েছে। বাঘা বাসীর ব্যানারে উপজেলা বিএনপির একটি গ্রুপ সম্প্রতি এই মানব বন্ধন করেন। এই মানব বন্ধনে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন বাঘার সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দ।
এলাকার লোকজন জানান, বাঘা সীমান্তবর্তী উপজেলা হওয়ার কারনে এখনে বহ আগ থেকে মাদকের কারবার চলে আসছে। তবে গত কয়েক বছর থেকে নতুন ভাবে যুক্ত হয়েছে ইমো ও বিকাশ হ্যাকারদের দৌরাত্ম। এখন এ অঞ্চলের হ্যাকাররা নতুন কৌশল অবলম্বন করে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। এক সময় হ্যাকাররা ফাঁকা জায়গার জন্য স্কুল-কলেজের মাঠ ব্যবহার করলেও এখন তাদের দেখা মিলছে এলাকা ভিত্তিক ফ্ল্যাট বাড়ির ছাদে। তবে একটানা সর্বোচ্চ তিন থেকে চারদিন পর-পর এরা স্থান পরিবর্তন করে বলে জানান প্রত্যক্ষ দর্শীরা।
এ বিষয়ে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার লোকজন জানান, বর্তমান ডিজিটাল প্রযুক্তির যুগে ভিসা ও মাস্টার কার্ড ব্যবহার করে পৃথিবীর যে কোনো দেশে ইলেকট্রনিক পেমেন্ট, কেনাকাটা, এটিএম বুথ থেকে টাকা উত্তোলন ও মোবাইল রিচার্জ সহ বিভিন্ন কাজ করা যায় অনায়াসে। এই কার্ড ব্যবহার করে বিকাশ অ্যাকাউন্টে টাকাও লোড করা যায়। আর এই সুযোগটিকে কাজে লাগিয়ে প্রতিনিয়ত বিকাশ ব্যবহারকারীদের অ্যাকাউন্ট হ্যাক করে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে একটি প্রতারক চক্র।
স্থানীয় লোকজন জানান, ইমো এবং বিকাশ হ্যাকের সাথে সম্পৃক্ত এই চক্রটির অধিকাংশ জন মাদকের সাথে সম্পৃক্ত। এ দিক থেকে বাঘা সীমান্তবর্তী উপজেলা হওয়ায় এখানে মাদকের প্রবনতা অনেক বেশি। বিশেষ করে উপজেলার আলাইপুর, কিশোরপুর, গোকুলপুর, পাকুড়িয়া, চাঁনপুর,খানপুর ও মীরগঞ্জ সহ পাশ্ববর্তী লালপুর উপজেলার দুড়দুড়িয়া এবং মনিরহারপুর এলাকায় ছেয়ে গেছে এদের দৌরাত্ন্য ও উৎপীড়ন।
তারা আরো জানান, বিগত সময়গুলোতে উঠতি বয়সী হ্যাকার যুবকদের দেখা মিলতো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মাঠ কিংবা ফাঁকা নিরিবিলি কোন এলাকায়। কিন্তু বর্তমানে তারা কৌশল পরিবর্তন করেছে। এখন এদের দেখা মিলছে এলাকা ভিত্তিক ফ্ল্যাট বাড়ি কিংবা তার ছাদে।
রাজশাহী ডিবি পুলিশের একজন মুখপাত্র জানান, এ চক্রটি চার ধাপে প্রতারণা করে। প্রথমে একটি গ্রুপ বিকাশের দোকানে ক্যাশ ইন রেজিস্ট্রারের ছবি তুলে পাঠিয়ে দেয় মূল হ্যাকারদের কাছে। দ্বিতীয় ধাপে হ্যাকার ছবি দেখে বিকাশ দোকানদার সেজে ভিকটিমকে ফোন দেয়। পরের ধাপ বিকাশের কল সেন্টারের নম্বর ক্লোন করে ফোন দেওয়া হয়। কথিত কল সেন্টার থেকে ভিকটিমকে ওটিপি বা ওয়ান টিম পাসওয়ার্ড পাঠান এবং কৌশলে প্রেরিত ওটিপি ভিকটিমদের কাছে জানতে চায়। অনেকেই প্রতারিত হয়ে ওটিপি দিয়ে দেন। যারা দিতে না চান তাদেরকে একটি অংকের মাধ্যমে ধাঁধায় ফেলে হাতিয়ে নেয়া হয় গোপন পিন নম্বর। এভাবে অর্থ হাতিয়ে নেয় হ্যাকাররা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাঘা সীমান্ত এলাকার দুজন স্কুল শিক্ষক জানান, রাজশাহীর বাঘায় ইমো-বিকাশ হ্যাকারদের ফাঁদে পড়ে প্রতারিত হচ্ছে শত-শত মানুষ। একদল সংঘবদ্ধ সিন্ডিকেট ফেসবুকের জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে প্রতিনিয়তই প্রতারিত করছেন সাধারণ মানুষকে। বিশেষ করে ফেসবুকে লাইভ ভিডিও সুবিধা চালু হবার পর এই প্রতারণায় এসেছে নতুন মাত্রা। এখন সরাসরি লাইভ ভিডিওতে বিকাশ নেয়ার মাধ্যমে শুরু হচ্ছে ইমো প্রতারণা।
এ ছাড়াও হোয়াটসএ্যাপে ফোন সেক্সের আহবান জানানো হচ্ছে, কিন্তু শর্ত হলো একটাই-আগে বিকাশ, তবেই মিলবে ইমোর নম্বর, নতুবা নয়। আর এসব অফারে প্রতিনিয়ত বিকাশে টাকা পাঠিয়ে প্রতারিত হচ্ছে প্রবাসে থাকা ফেসবুক ব্যবহারকারীরা।
এদিকে এ সকল বিকাশ হ্যাকার-ইমো কারবারী ও মাদক বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে উদ্বেগ প্রকাশ করে এসব অন্যায়কারীদের বিরুদ্ধে জনসাধারণ এবং আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে সোচ্চার হওয়ার জন্য বাঘাবাসির ব্যানারে মানববন্ধন ও তাদের গ্রেফতার করার দাবি জানিয়েছেন উপজেলা বিএনপির একটি গ্রুপ। এতে অংশ গ্রহন করেন সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লা আল মামুন, মনিগ্রাম ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি ও উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি মজিবুর রহমান জুয়েল, উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও জেলা কৃষক দলের যুগ্ম আহবায়ক জাহিদুল ইসলাম স্বপন, উপজেলা কৃষক দলের সদস্য সচিব মোহাম্মদ হিটলার মন্ডল, চকরাজাপুর ইউনিয়নের সাবেক সদস্য মোহাম্মদ রেজাউল করিম, চকরাজাপুর ইউনিয়ন বিএনপি নেতা সায়েম শিকদার, খন্দকার সুপার মার্কেটের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম সেন্টু ও যুবদল নেতা পিয়স সহ আরো অনেকে।
বাঘা থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আবু সিদ্দিক জানান, বিকাশ থেকে টাকা বের করাটা হ্যাকিং নয়, এটা এক ধরনের ডাকাতি। আমরা এটি নির্মুল করতে চাই। তিনি বলেন, আমি এ থানায় নতুন যোগদান করেছি। কোন প্রকার অন্যায় কাজের সাথে আমার আপোশ নেই। শুধুমাত্র সময়ের অপেক্ষা। সময় সাপেক্ষে সবকিছু নির্মুল করার চেষ্টা করবো। তবে এ সকল অপরাধীদের আটক করতে জনসাধারণের কাছে সহায়তা প্রত্যাশা করেছেন তিনি।