রবিবার, ৮ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২৩শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ।
নুরুজ্জামান, বাঘা:
বৈষম্য-বিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও গণঅভ্যুত্থানের পর ভিভিন্ন রকম সংস্কার চাপে পিছিয়ে যাচ্ছে ইউপি নির্বাচন।সম্ভাব্য নির্বাচনের আয়োজন সময় দ্রুত ফুরিয়ে যাওয়ার বিপরীতে আয়োজনের প্রস্তুতি ধীরগতি এমনটি ইঙ্গিত দিয়েছেন নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তবে সরকার পরিবর্তনের পর থেকে কাঙ্খিত সেবা পাচ্ছে না ইউনিয়নে সেবা নিতে আসা মানুষ। এর ফলে চরম বিপাকে রয়েছেন তাঁরা। যার ব্যত্বয় ঘটেছে রাজশাহীর বাঘা উপজেলাতেও। এ উপজেলায় ৭টি ইউনিয়ন পরিষদের মধ্যে চারটি ইউনিয়ন পরিষদে চলতি মাসে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার সময় নির্ধালণ ছিল বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেন।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, ৫ আগস্টের পর থেকে সারা দেশে ১ হাজার ৪১৬ জন ইউপি চেয়ারম্যান কার্যালয়ে অনুপস্থিত। যা মোট ইউনিয়ন পরিষদের এক-তৃতীয়াংশ। তাঁদের বেশির ভাগের নামে হত্যা-সহ বিভিন্ন রকম মামলা হয়েছে। তাঁরা গ্রেফতার আতঙ্কে আছেন। আবার কেউ কেউ নিজেদের ওপর হামলা হবে, এমন আশঙ্কা থেকে কার্যালয়ে যাচ্ছেন না। কিংবা গ্রেফতার আতঙ্কে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। এর ফলে ভোগান্তির শিকার হচ্ছে জনগণ ।
স্থানীয় সরকারের একজন নির্বাচন কর্মকর্তা জানান, দেশে এখন ইউনিয়ন পরিষদ আছে ৪ হাজার ৫৮০টি। এর মধ্যে ৩ হাজার ১৬৪ জন চেয়ারম্যান নিয়মিত অফিস করছেন। তবে কত সংখ্যক ইউপি সদস্য বা মেম্বার অনুপস্থিত, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। এমন বাস্তবতায় শুধু দেড় হাজার নয়, সাড়ে ৪ হাজার ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বারকেই অপসারণের চিন্তা ভাবনা করছেন অন্তর্বর্তী কালিন সরকার।
রাজশাহীর বাঘা উপজেলায় ৭ টি ইউনিয়ন পরিষদ রয়েছে। এরমধ্যে ৬ জন চেয়ারম্যান আওয়ামীলীগ সমর্থীত। বাঁকি একজন বাজুবাঘা ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি এড: ফিরোজ আহাম্মেদ রঞ্জু জানান, আমাদের উপজেলায় ২০১৯ সালের ১৪ অক্টোবর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এরপর আমরা ২০ নভেম্বর শফত গ্রহন করি। সেই ধারাবাহিকতায় চলতি মাসে ভোট হওয়ার কথা ছিল । কিন্তু এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে সরকারি কোন সিদ্ধান্ত কিংবা পরিপত্র আসেনি।
বাঘার মনিগ্রাম ইউপি চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম বলেন ,স্থানীয় সরকার অধিনস্ত য়ে কোন নির্বাচনের ৯০ দিন আগে তফসিল ঘোষনা করার নিয়ম রয়েছে। এই ফাঁকে মনোনয়ন ফরম উত্তোলন, হাল নাগাদ ভোটার তালিকা সম্পৃক্ত করণ, মনোনয় জমা, যাচাই-বাছাই, প্রত্যাহার ও প্রতিক বরাদ্ধ সহ অনেক কাজে ব্যস্ত হয়ে যান নির্বাচন অধিদপ্তর । কিন্তু বাঘায় ইউপি নির্বাচন নিয়ে এখন পর্যন্ত কোন তৎপরতা নেই। কবে নাগাদ অনুমতি আসবে এটাও তারা বলতে পারছেন না। ইউনিয়ন চারটি হলো, বাজু বাঘা, গড় গড়ি, মনিগ্রাম ও পাকুরিয়া।
এ নিয়ে স্থানীয় জনসাধারণ ও অভিঙ্গ মহলের উক্তি, আগে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তার পরে পর্যায় ক্রমে অন্যান্য নির্বাচন হবে এমনটি আমরা আসা করছি।তবে সকল দলের অংশ গ্রহনের মাধ্যমে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে রাজশাহী অঞ্চলের বিভিন্ন ইউনিয়নে বিএনপি সমর্থীত প্রার্থীরা বেশি বিজয়ী হবেন বলে তারা মন্তব্য করেন।
এদিকে নাম প্রকাশ না করার সর্তে একজন ইউনিয়ন পরিষদের সচিব জানান, প্রতিটা ইউনিয়ন পরিষদ থেকে জন্ম নিবন্ধন, ওয়ারিশন সনদ, ট্রেড লইসেন্স, গ্রাম আদালত, বিভিন্ন উন্নয়ন মূলক কাজ, সামাজিক বেষ্টনি (এ.ডি.পি)ট্রেস্ট রিলিপ (টি.আর) কাবিখা এবং (এল.জি.এস.পি) সহ নানা মুখি উন্নয়ন কাজ বাস্তবায়ন হয়ে থাকে। তবে গত ৩ মাসে এ অঞ্চলের মানুষ ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে কোন প্রকার সেবা পাচ্ছেনা বলে এলাকাবাসীদের নানা অভিযোগ রয়েছে।
সার্বিক বিষয়ে স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ তোফায়েল আহমেদ এক সাক্ষাতকারে বলেছেন, প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া ঠিক হবে না জানিয়ে যেসব ইউনিয়ন পরিষদে চেয়ারম্যান অনুপস্থিত, সরকারের উচিত হবে প্রথমে তাঁদের নোটিশ দেওয়া। একটা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তাঁদের পরিষদে উপস্থিত হওয়ার সময় বেঁধে দেওয়া। অত:পর এ সময়ের মধ্যে তারা না এলে আসন শূন্য ঘোষণা করা। তারপর সদস্যদের মধ্য থেকে একজনকে চেয়ারম্যান নিয়োগ দেওয়া যেতে পারে। অথবা প্রতিটি এলাকায় সর্বজন বিদিত কাউকে চেয়ারম্যান হিসেবে বসানো যেতে পারে।
সার্বিক বিষয়ে বাঘা উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও সহকারী রির্টানিং অফিসার মোসা: শাম্মী আক্তার বলেন, ৫ আগষ্ট পরবর্তী পরিস্থিতিতে উপর থেকে কোন সিদ্ধান্ত না আসায় আমরা ইউপি নির্বাচন সংক্রান্তে কোন মন্তব্য করতে পারছি না। এটা সেন্টালের সিদ্ধান্ত।