রবিবার, ৮ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২৩শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ।
আসাদুজ্জামান মিঠু: রাজশাহীসহ বরেন্দ্রের মাঠগুলোতে যতদুর চোখ যায় চারিদিকে সোনালী ফসলের সমারোহ। বরেন্দ্র অঞ্চল যেন সোনালী রঙে সেজেছে। সবুজ পাতার ফাঁকে ফাঁকে দুলছে কৃষকের সোনালী স্বপ্ন। নতুন ধানের ঘ্রাণে ভরে উঠছে কৃষকের মন প্রাণ। সেই সঙ্গে রঙিন হয়ে উঠছে প্রান্তিক কৃষকের স্বপ্ন। মাঠজুড়ে এখন সোনালী স্বপ্নের হাতছানি।
চলতি বছর বর্ষার আগেই বৃষ্টি শুরু হয়েছিল। অগ্রিম বৃষ্টি পেয়ে আমন চাষে মাঠে নেমে পড়েছিলেন কৃষকরা। তাই এবার একটু আগাম ধান ঘরে উঠবে কৃষকের। চলতি কার্তিক মাসের মাঝামাঝি থেকে বরেন্দ্র অঞ্চলের অল্প পরিসরে সোনার ধান কাটা শুরু করছেন। অগ্রহায়ণ মাস পড়লেই পুরোদমে আমন কাটা-মাড়াই শুরু করবে বরেন্দ্র অঞ্চলের কৃষকেরা।
এর আগে আমন রোপনের শুরু থেকেই নানান রোগ বালাই ও ইঁদুরের অত্যাচার কৃষকদের কিছুটা বেগ পেতে হয়েছে। অবশেষে সকল প্রতিকূলতা কাটিয়ে উঠেছেন বরেন্দ্র অঞ্চলের কৃষকেরা। এখন ফলন ভাল হবে এমন স্বপ্ন নিয়ে নতুন করে আশাই বুক বেঁধেছেন এ অঞ্চলের চাষিরা।
মাঠ পর্যায়ের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা জানান, চলতি বছর আবহাওয়া অনুকূল থাকায় অন্যসব বছরের চেয়ে চলতি বছর আমন ধান ভাল হয়েছে। এ অঞ্চলে এক শতক জমিও ফাঁকা নেই। আমনের শুরু থেকে ঘন ঘন বৃষ্টিপাত হওয়া এবার প্রকৃতিগত ভাবে চাষিদের সেচের সব চাহিদা মিটেছে। প্রচুর পরিমাণে ধান চাষ হয়েছে।
রাজশাহীসহ উত্তরাঞ্চলে সর্বত্রই এখন আমনে পাক ধরে সোনালী রঙে রঙিন হয়ে উঠেছে। আর মাত্র ১৩ দির পরেই অগ্রায়ণ মাস পড়বে। তখন পুরোদমে আমন কাটা-মাড়ায়ের ধুম পড়ে যাবে। এতে দেশে খাদ্য ঘার্তি পূরণে সহয়ক হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
বরেন্দ্রের কৃষকেরা জানান, পুরো মাঠ এখন সোনালী রঙে সেজেছে। মাঠে গেলে বাতাসের দোলে সোনালী ধানের সুগন্ধীতে মন প্রাণ জুড়িয়ে যাচ্ছে। অন্য যে কোন বছরের চেয়ে চলতি বছর ধানের মাথা ভাল আছে। তাই বাম্পার ফলন হবে বলে আশা করা হচ্ছে। বর্তমানে বাজারে আমনের ভাল দাম আছে।
রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরে তথ্য মতে, চলতি মৌসুমে রাজশাহী জেলায় আমনের লক্ষ্য মাত্রা ধরা হয়েছে ৭০ হাজার ২২৪ হেক্টর জমিতে। চাষাবাদ হয়েছে ৭৩ হাজার ৫২৩ হেক্টর জমিতে। এছাড়াও রাজশাহী অঞ্চলের রাজশাহী, নওগাঁ, নাটোর ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় আমন চাষাবাদ হয়েছে আরো ৪ লাখ ১০ হাজার হেক্টরের উপরে।
বরেন্দ্র ভূমির রাজশাহী অঞ্চলের চার জেলায় ৪ লাখ ৭ হাজার ৩৫৯ হেক্টর জমি থেকে ১৩ লাখ ১৮ হাজার ৫৯৮ টন আমন ফলনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।
কৃষি বিভাগ সুত্রে আরো জানা গেছে, দেশের মধ্যে সর্বাধিক ১ লাখ ৯৫ হাজার ৭৮ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে উত্তরের নওগাঁ জেলায়। দেশের শস্যভান্ডার খ্যাত লালমাটির বরেন্দ্র ভূমির নওগাঁ জেলাতেই এবার সর্বোচ্চ ৬ লাখ ৫৬৯ টন আমন ধান পাওয়ার আশা কৃষি বিভাগের।
এদিকে রাজশাহীর বরেন্দ্র ভূমি তানোর, চাঁপাইনবাবগঞ্জের আমনুরা ঝিলিম নাচোল, নওগাঁর নিযামতপুর এলাকার গত কয়েকদিনে ঘুরে দেখাগেছে সবুজপাতার ফাঁকে ফাঁকে সোনালী শীষ উঁকি দিচ্ছে। কোন কোন মাঠ পুরোটাই সোনালী রঙ ধরেছে।
রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার চানন্দালায় গ্রামের আদর্শ কৃষক মানিক জানান, চলতি মৌসুমে ২০ বিঘা জমিতে লাল স্বর্ণা জাতের ধান চাষাবাদ করেছেন। বর্তমানে তার ক্ষেতের ধান পাক ধরেছে। গতকাল শনিবার হতে ধান কাটা শুরু হয়েছে।
তানোর উপজেলার পাঁচন্দর গ্রামের কৃষক মনসুর রহমান জানান, চলতি মৌসুমে ৩ বিঘাতে আমন চাষাবাদ করেছেন। আমনের মাঝামাঝি সময়ে পোকা ও ইঁদুরের অত্যাচার ছিল। তবুও সমস্যা নেই, কারণ অন্যসব বছরের চেয়ে এবার আমন ধানের শীষ ভাল আছে। দুইদিন আগে ধান কাটা হয়েছে। ফলে বাম্পার ফলন হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
তানোর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাইফুল্লাহ আহম্মেদ জানান, আমনের শুরু থেকেই চলতি বছর ঘন ঘন বৃষ্টি হওয়া কারণে বরেন্দ্র ভূমির উঁচু নিচু এক শতকও জমি ফাঁকা নেই বরেন্দ্র অঞ্চলে। আমন চাষাবাদে কৃষকদের সকল প্রকার সহযোগিতা করেছেন কৃষি সম্প্রাসারণ অধিদপ্তর। মাঠে এখন সোনালী রঙ ধরেছে আমনে।
সাইফুল্লাহ আহম্মেদ বলেন, এবার বরেন্দ্রের মাঠে পানি সাশ্রয়ী ও উচ্চ ফলনসীল অনেক জাতের ধান চাষ হয়েছে। এখন মাঠে মাঠে ধানের পাক ধরেছে। কিছু কিছু কৃষক অল্প পরিসরে ধান কাটা শুরুও করেছেন। অন্য যে কোন বছরের চেয়ে এবার ফলন বেশি হবে বলে আশা করা হচ্ছে।