শনিবার, ২৫শে জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ১১ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ।
সানশাইন ডেস্ক: রাষ্ট্রবিরোধী আচরণ ও ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম পরিচালনা করার অভিযোগে কুমিল্লা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর ১৫৬ কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। গ্রেপ্তার হয়েছেন পাঁচ জন।
বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ রেখে আন্দোলনের নামে গ্রাহক ভোগান্তি করায় কুমিল্লার চান্দিনায় অবস্থিত এই সমিতির বিরুদ্ধে শুক্রবার দুপুরে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের পক্ষে মামলাটি করা হয়েছে। শুক্রবার রাতে চান্দিনা থানার ওসি মো. নাজমুল হুদা জানান, পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের কুমিল্লার নির্বাহী প্রকৌশলী মিল্টন ঘোষ বাদী হয়ে মামলাটি করেছেন।
মামলায় ছয় জনের নাম উল্লেখ করে কুমিল্লা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর ১০০ থেকে ১৫০ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে। এ ঘটনায় গ্রেপ্তাররা হলেন- কক্সবাজারে পেকুয়া উপজেলার বাইমানা গ্রামের নূরুল আনোয়ারের ছেলে সহিদুল ইসলাম (২৬), চাঁদপুরের মতলব উপজেলার কামানকান্দি মাথাভাঙ্গা গ্রামের আমির হোসেনের ছেলে নূর মোহাম্মদ (২৮), চট্টগ্রামের হাটহাজারি উপজেলার খন্দকিয়া গ্রামের সিকদার চৌধুরীর ছেলে ফয়সাল চৌধুরী (৩৭), নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার পবনপুর তারাবো গ্রামে ফরিদ উদ্দিনের ছেলে তানভীর আহমেদ (৩৩), ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলা সদরের খায়রুল কবিরের ছেলে মিজানুর রহমান সাগর (৩০)। তারা সবাই কুমিল্লা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর কর্মকর্তা ও কর্মচারী।
ওসি নাজমুল হুদা বলেন, বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে আন্দোলন করে কুমিল্লা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এতে লক্ষাধিক গ্রাহক চরম ভোগান্তির শিকার হন। “পরবর্তীতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ আমরা পল্লী বিদ্যুৎ অফিসে গিয়ে তাদের সঙ্গে আলোচনা করে বিদ্যুৎ সংযোগ চালু করি। “কিন্তু ওইদিন সন্ধ্যার পর আবারও তারা দুই ঘণ্টারও বেশি সময় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়ায় এলাকার লোকজন ক্ষিপ্ত হয়ে কুমিল্লা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর কার্যালয় ঘেরাও করে।”
এ সময় পুলিশ ও সেনাবাহিনী যৌথ অভিযান চালিয়ে নাশকতা, রাষ্ট্রবিরোধী কার্যক্রম পরিচালিত করায় ঘটনাস্থল থেকে পাঁচ জনকে আটক করে। পরে শুক্রবার দুপুরে দায়ের হওয়া মামলায় তাদেরকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কুমিল্লা কারাগারে পাঠানো হয় বলে জানান ওসি। তিনি আরও জানান- এ ঘটনায় জড়িত অপর ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
কুমিল্লা জেলায় পল্লী বিদ্যুতের চারটি সমিতির মাধ্যমে ১৭টি উপজেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। বৃহস্পতিবার সবগুলো সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রেখে আন্দোলন করেছিলেন। শুধুমাত্র কুমিল্লা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা একইদিন সন্ধ্যার পর দ্বিতীয় দফায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছিল। এ কারণে তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
তবে জেলার বাকি তিনটি সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে মামলা হয়নি বলে শুক্রবার রাতে সংশ্লিষ্ট থানার ওসিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে। জেলায় কর্মরত পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জানান, বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (বিআরইবি) ও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি (পবিস) একীভূতকরণ এবং অভিন্ন চাকরিবিধি বাস্তবায়নসহ চুক্তিভিত্তিক ও অনিয়মিত কর্মচারীদের স্থায়ী নিয়োগের দাবিতে আন্দোলন করছেন তারা।
এসব দাবি নিয়ে বুধবার বোর্ডের চেয়ারম্যান কাছে গেলে আন্দোলনকারীদের কথা না শুনে উল্টো তাদের কয়েকজনকে বরখাস্ত করাসহ তাদের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনার প্রতিবাদে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের চেয়ারম্যানকে অপসারণ এবং আন্দোলনকারীদের নামে দেওয়া মামলা ও বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহারের দাবিতে বৃহস্পতিবার বিদ্যুৎ সরবরাহ কর্মসূচি পালন করছেন তারা।