শনিবার, ৮ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ২৫শে মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ।
স্টাফ রিপোর্টার: প্রতিদিন দুই ঘণ্টা করে ৮৫ ডেসিবেল শব্দ যদি কোন ব্যক্তির কানে প্রবেশ করে তাহলে তাহলে ধীরে ধীরে শ্রবণশক্তি নষ্ট হবে। ১২০ ডেসিবেল শব্দ শোনার সাথে সাথেই কান নষ্ট করে দিতে পারে। রাজশাহী মহানগরীতে সর্বোচ্চ শব্দের পরিমান পাওয়া গেছে ৯৬ দশমিক ৩০ ডেসিবেল। এ অর্থ দাঁড়ায় রাজশাহী মহানগরীর কিছু এলাকার মানুষ চরম স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে বসবাস করছে।
ইউএনইপি এর ২০২২ সালের এক রিপোর্টে ঢাকাকে বিশ্বের প্রথম শব্দ দূষণকারী শহর হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। রাজশাহীকে বিশ্বের চতুর্থ শব্দ দূষণকারী শহর হিসেবে দেখায়। যেখানে রাজশাহীতে শব্দের পরিমান দেখানো হয় ১০৩ ডেসিবেল। এই রিপোর্টের পরিপ্রেক্ষিতে রাজশাহীর বরেন্দ্র পরিবেশ উন্নয়ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা শহরের পাঁচটি জনবহুল স্থানে দিনের বেলায় শব্দের মান নির্ণয় করে।
এতে সর্বোচ্চ গড় শব্দ পাওয়া যায় নগরীর রেইলগেটে ৯৬ দশমিক ৩০ ডেসিবেল এবং দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৯৬ দশমিক ১০ ডেসিবেল নগরীর লক্ষিপুর মোড়ে। তালাইমারী মোড়, বিসিক মঠ পুকুর ও সাহেব বাজার জিরো পয়েন্ট এলাকায় শব্দের মান পাওয়া যায় যথাক্রমে ৮৮ দশমিক ৮০ ডেসিবেল, ৭৬ ডেসিবেল এবং ৯০ দশমিক ৫০ ডেসিবেল।
মানুষ সাধারণত সর্বোচ্চ ১৪০ ডেসিবেল শব্দ সহ্য করতে পারে, ১৫০ ডেসিবেল কানের পর্দা ফাটিয়ে দিতে পারে এবং ১৮০ থেকে ২০০ ডেসিবেল মৃত্যু ঘটাতে পারে।
বিধিমালা অনুযায়ী আবাসিক এলাকায় রাত নটা থেকে ভোর ছটা পর্যন্ত শব্দের মাত্রা ৪৫ ডেসিবেল এবং দিনের অন্য সময়ে ৫৫ ডেসিবেল অতিক্রম করতে পারবে না। বাণিজ্যিক এলাকায় তা যথাক্রমে ৬০ ও ৭০ ডেসিবেল। হাসপাতাল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, অফিস-আদালতের আশপাশে ১০০ মিটার পর্যন্ত নীরব এলাকা হিসেবে ঘোষণা করা রয়েছে। সেখানে রাতে ৪০ ও দিনে ৫০ ডেসিবেল শব্দ মাত্রা নির্ধারণ করে দেয়া আছে।
প্রাপ্ত ফলাফলের উপর ভিত্তি করে শব্দ দূষণের মূল কারণ ও এর সম্ভাব্য প্রতিকারের বিষয়ে সংস্থাটি অনুসন্ধান করে। এতে দেখা যায়, প্রয়োজনের অতিরিক্ত ব্যাটারি চালিত অটো এবং অটো রিকশার উপস্থিত ছিল। অধিকাংশ যানবাহন অযথা হর্ন বাজাতে থাকে। এগুলো মূলত টিটি হর্ন ব্যবহার করে। এদিকে, নগরীর তালাইমারী ও রেলগেটে এলাকায় বাস গুলোকে অযথা যত্রতত্র হর্ন বাজাতে দেখা যায়।
বর্তমান নগরায়নের যুগে শব্দ দূষণ দিন দিন প্রকট হয়ে উঠছে, যা জনসাধারণের স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলছে। মাত্রাতিরিক্ত শব্দের জন্য মানুষের শ্রবণ শক্তি হ্রাস পায়, মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়, ঘুম অনিয়মিত হয়, রক্ত চাপ বাড়িয়ে দেয়, হার্টের ক্ষতি করে, এমনকি দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও হ্রাস পেতে পারে।
প্রতিকারের বিষয়ে সংস্থাটি বলছে, অটো রিক্সা গুলোতে ভেপু হর্ন বাধ্যতামূলক করা উচিত, যেন অন্য কোনো হর্ন ব্যবহার করতে না পারে। একই সাথে অটো রিক্সা আর রিক্সা গুলো নির্দিষ্ট লেন ব্যবহার করলে এবং বাস গুলো যত্রতত্র না দাঁড়ালে অন্য গাড়ি গুলোকে অহেতুক হর্ন দেয়া লাগে না। শহরের মধ্যে গতি সীমাও নির্দিষ্ট করলে এর পরোক্ষ প্রভাব শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণ এর উপর পড়বে। শব্দ দূষণের প্রভাব শুধু মানুষের উপর না, প্রতিটি পশু-পাখির উপর পরে। গাছ শব্দের প্রতিবন্ধকতা হিসেবে যথেষ্ট কার্যকর। আমের শহর রাজশাহীতে আম-জাম জাতীয় ফলের গাছ, নিম, সজনে গাছ লাগানো যেতে পারে; যেগুলো বড় হলে শব্দ ও বায়ু দূষণ রোধে কার্যকরী ভূমিকা রাখবে। সজনে গাছ বায়ু থেকে কার্বন ডাই অক্সাইড গ্রহণ করে অক্সিজেন নির্গমনে কার্যকর গাছ গুলোর মধ্যে অন্যতম।
উক্ত পরীক্ষায় নেতৃত্ব দেয় প্রকৌশলী জাকির হোসেন খান (পি.এইচ.ডি.)। উনাকে সহযোগিতা করেন ড. অলি আহমেদ, ওবায়দুল্লাহ, শামসুর রাহমান শরীফ, কলি আহমেদ প্রমুখ।