সোমবার, ৪ঠা নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১৯শে কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ।
নুরুজ্জামান, বাঘা:
বাংলাদেশ সরকারের কারিগরি ও মাদ্রাসা বোর্ডের যুগ্ন সচিব শ্রী রথীন্দ্রনাথ দত্ত। তিনি প্রতি বছর শারদীয় দুর্গা উৎসবে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে নিজ গৃহে ফিরেন। যার ব্যত্বয় ঘটেনি এবারও। সেই সাথে সকল সম্প্রদায়ের মানুষকে দিয়ে থাকেন নতুন কাপড় সহ-মনের অকৃত্রিম ভালোবাসা।
রথীন্দ্রনাথ প্রায়স বলে থাকেন, আমার জীবনে রাজনীতি করার কোন বিলাশ নেই। আমি আমার কর্মময় জীবন থেকে এলাকার মানুষকে সেবা করতে চাই। আমার কাছে দেশের সকল মানুষ সমান। আমার ধর্ম মানবতা। তাঁর এ কথায় শুধু সনাতন ধর্মাবলম্বী নয়, সকল সম্প্রদায়ের মানুষের কাছে রয়েছে চরম গ্রহণ যোগ্যতা, সক্ষতা ও ভ্রাতৃত্ববোধ।
বাঘার কৃতি সন্তান ও সকলের গর্ব রথীন্দ্রনাথ প্রতিবারের ন্যায় এবারও বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রধান এবং সবচেয়ে বর্ণাঢ্য ধর্মীয়, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে নিজ গ্রাম, বাঘা উপজেলার নারায়পুরে এসছেন। তাঁর বাড়ীর পাশেই অনুষ্ঠিত হচ্ছে উপজেলা কেন্দ্রীয় শারদীয় দুর্গা উৎসব।
সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা গেছে, বাঙালি হিন্দুর সর্ব প্রধান এবং সবচেয়ে বর্ণাঢ্য ধর্মীয়, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। গত ৯ অক্টোবর মহাষষ্ঠী পূজার মধ্য দিয়ে দুর্গাপূজা শুরু হয়েছে। আগামী ১৩ অক্টোবর মহাদশমীর মধ্য দিয়ে শেষ হবে। তবে হিন্দু সম্প্রদায়ের অনেকেই দাবি করেছেন, ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পট-পরিবর্তনের পর, এক ধরনের শঙ্কা ও ভয়ের আবহেই এবার দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
হিন্দু সম্প্রদায়ে ধর্মীয় ভাবে শারদীয় দুর্গোৎসবকে অকাল বোধন বলা হয়। অর্থাৎ অকালে দেবীদুর্গাকে জাগানো হয়। হিন্দু শাস্ত্রমতে, পুরো বছরকে উত্তরায়ন এবং দক্ষিণায়ন এই দুটি কালে ভাগ করা হয়। মাঘ থেকে আষাঢ় পর্যন্ত উত্তরায়ন এবং শ্রাবণ থেকে পৌষ মাস পর্যন্ত সময়কে দক্ষিণায়ন কাল হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। উত্তরায়ন কালে দেবদেবীদের জাগ্রত কাল এবং দক্ষিণায়নে দেবদেবীর নিদ্রাকাল। শ্রী রামচন্দ্র মহাশয়, যুদ্ধের প্রয়োজনে অকালে দেবীকে বোধন অর্থাৎ স্তব-স্তুতির মাধ্যমে জাগরণ ঘটিয়ে দুর্গাপূজা করে ছিলেন। এ কারণে শারদীয় দুর্গাপূজাকে অকাল বোধন বলা হয়। দেখা যায় দেবীকে নিদ্রা থেকে জাগানোর জন্য বেলতলায় মহাদেবের স্তবকের অনুমতি নিয়ে বোধন ঘটাতে হয়।
হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন বলেন, আমরা দুর্গাপূজা বললেও আসলে এই পূজা কেবল দুর্গার একার নয়। সঙ্গে আরও অনেকেই আছেন। দুর্গা আসেন সবাইকে নিয়েই। ভালো-মন্দ, শত্রু-মিত্র, গাছ-প্রাণী সঙ্গে নিয়েই চলে দুর্গা উৎসব। চালচিত্রে শিব আছেন, তো পায়ের নিচে অসুর। কলাগাছ বউতো পেঁচা, হাঁস, ইঁদুর, ময়ূর বাহন। হাসি-কান্না, সুজন-দুর্জন, পশুপক্ষী-উদ্ভিদ সমাহারে আমাদের জীবনপথ চলাটাকেই সহজ করে চিনিয়ে দিতে চান। দেবদেবী মানুষের কল্পনা মাত্র। নিজের কল্যাণ কামনায় এবং অপশক্তি বোধে মানুষ যুগে যুগে নানা দেবদেবীর কল্পনা করেছে। এই কল্পনার রূপটিই ধরা পড়ে দুর্গা পরিবারের চিত্র দেখলে।
দুর্গা পরিবারের চিত্রের দিকে তাকালে দেখা যায়, মা দুর্গা মহিষাসুরের সঙ্গে ধুন্ধুমার লড়াই করছেন, অথচ তার ছেলে-মেয়েরা নিতান্ত উদাসীন ভাবে পাশে দাঁড়িয়ে। সুদর্শন কার্তিক তার অস্ত্র তোলেন না, গণেশের মুখে তো একটা হাসির আভাস, লক্ষী নিজের ঝাঁপিটা আরও শক্ত করে চেপে ধরেন, সরস্বতীও বীণা হাতে দিব্যি দাঁড়িয়ে থাকেন। তবে এই অদ্ভুত দৃশ্যের অর্থ বুঝতে হলে ইতিহাসের পাতায় নজর দিতে হবে।
বাঘার বিশিষ্ট সমাজ সেবক ও পূজা উৎযাপন কমিটির সভাপতি শ্রী অশীত কুমার ওরুপে বাকু পান্ডে বলেন, আমরা যেমন ঘর-সংসার, স্বামী-সন্তান, আত্মীয়-পরিজন ছাড়া কোনো কিছু চিন্তা করতে পারি না, তেমনি দুর্গার ক্ষেত্রেও এমনটি দেখতে পেয়েছি। অলৌকিক দুর্গা আমাদের মাঝে দেখাদেন স্ব-পরিবারে। আমারা যেটা মনে করে থাকি, তা হলো-ধর্ম যার-যার। তবে উৎসব সবার। তাঁর দৃষ্টিতে, সারাদেশে আমাদের সম্প্রদায়ের অনেক উচ্চ পর্যায়ের কৃতি সন্তান রয়েছে। তবে ধর্মীয় উৎসবে সবাই ঘরমুখি হয় না এবং সকল সস্প্রদায়ের অসহায়-দুস্থদের মাঝে নতুন পোশাক শাড়ি, লুঙ্গী ও গেঞ্জী উপহার দেননা। রথীনদ্রনাথ প্রকৃত অর্থে এ অঞ্চলের একজন গর্ব, সমাজ হিতোশী এবং মানব প্রেমিক মানুষ।
এদিকে ঢাকা থেকে বাড়ি ফিরে বাঘার কৃতিসন্তান ও বর্তমান সরকারের যুগ্ন সচিব শী-রথীন্দ্রনাথ দত্ত বলেন, সফল মানুষের সাথে অসফল মানুষের প্রধান পার্থক্য শক্তি বা জ্ঞান নয়। পার্থক্যটা হলো, সত্যিকার সফল হওয়ার ইচ্ছে।” সাফল্যের জন্য আপনাকে মূল্য দিতে হবে ভালোবাসা, কঠোর পরিশ্রম, অধ্যাবসায়, আর স্বপ্নকে বাস্তব হতে দেখার জন্য ব্যর্থতার পরও কাজ করে যাওয়া। আমার জীবনে এমনটি ঘটেছে।
তবে আমি কখনো কোন কাজে বিচলিত (নিরাশ) হয়নি। আমি আমার সম্প্রদায়কে বলতে চাই, হিংসা-বিদ্দেশ ভুলে সবাই নিরুপদ্রপে ইচ্ছে-মতো পূজার আনন্দে শামিল হতে পারলে উৎসব তার প্রকৃত তাৎপর্য ফিরে পাবে। আর এখান থেকেই নতুন করে আগামী এক বছর চলার শক্তি ও পাথেয় সংগ্রহ করে মানুষ আবার নতুন করে জীবনযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে পারবে। সংসারের সব অসুরকে হারিয়ে নতুন এক উজ্জ্বল, উচ্ছল জীবনবোধে উদ্বেল হয়ে শুরু হবে নতুন করে পথচলা। সকলের প্রতি আমার এটি চাওয়া এবং কাম্য।