মোহনপুরের সেই বিতর্কিত শিক্ষক সাইফুলের বদলীর বিকল্প নেই

মোহনপুর প্রতিনিধি: রাজশাহীর মোহনপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের বিতর্কিত সিনিয়র শিক্ষক (ইসলাম শিক্ষা) সাইফুল ইসলামের বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের সত্যতা পেয়েছে তদন্ত কমিটি। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ তদন্ত করেছে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি।

 

কয়েক স্তরে তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন রাজশাহী অঞ্চলের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা উপপরিচালক ও জেলা প্রশাসক বরাবর প্রদান করা হয়েছে। উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) সুজিত কুমার দেবনাথ ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার পৃথক প্রতিবেদনে অনিয়মের তথ্য তুলে ধরে উর্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে সিনিয়র শিক্ষক সাইফুলের বদলীর জোর সুপারিশ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে শিক্ষক সাইফুলের বদলীর বিকল্প দেখছেন না স্থানীয় শিক্ষানুরাগীরা।

 

তবে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) সুজিত কুমার দেবনাথ একটি প্রতিবেদনে তার সময়ে কোন অনিয়ম হয়নি বলেও উল্লেখ করেছেন। তার পরবর্তী প্রতিবেদনে তিনি বিতর্কিত সিনিয়র শিক্ষক সাইফুলের বদলীতে জোর তাগিদ দিয়েছেন। প্রতিবেদনে তিনি উল্লেখ করেছেন, বিদ্যালয়ের সার্বিক পরিবেশ শান্ত রাখতে শিক্ষক সাইফুলকে অন্যত্র বদলীর বিশেষ প্রয়োজন। অন্য একটি প্রতিবেদনে এ একই তাগিদ দিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার আয়শা সিদ্দিকা।

 

ঐ প্রতিবেদনে তিনি জানান, জেলা শিক্ষা অফিসারে নির্দেশক্রমে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি তার নিকট তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছেন। তদন্ত প্রতিবেদনে, তিনজন শিক্ষার্থী ভর্তিতে অনিয়ম করার প্রমান মিলেছে। এছাড়াও সাবেক প্রধান শিক্ষককে প্রভাবিত করে বিভিন্ন অনিয়মের প্রমান পেয়েছে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি।
তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি প্রতিবেদনে আরো বলেছেন, শিক্ষক সাইফুলকে বিদলী করলে বিতর্কের অবসান ঘটতে পারে।

 

অভিযোগ অনুসন্ধানে জানা গেছে, সাবেক প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) স ম আবু হেনা বজলুর রশিদের যোগসাজশে শিক্ষক সাইফুল ইসলাম বিদ্যালয়ের সরকারি বরাদ্দ, ফান্ড ও পুকুর লীজ বাবদ কৌশলে ১৯ লাখ ২২ হাজার ৬৭৫ টাকা আত্মসাত করেছেন বলে তথ্য পাওয়া গেছে।

 

গণমাধ্যমের হাতে আসা বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত হতে জানা যায়, স ম আবু হেনা বজলুর রশিদ গত ২৩ ও ২৪ সালে দুইবার মাত্র ২ মাস দুই দিন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দ্বায়িত্ব কালীন সময়ে সিনিয়র শিক্ষক সাইফুল যৌথ যোগাযোগ সাজসে কৌশলে ১৯ লাখ ২২ হাজার ৬৭৫ টাকা আত্মসাত করেছেন বলে জানা গেছে। প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী বিবিধি, মিলাদ, রেড ক্রিসেন্ট, ক্রীড়া, পরিচ্ছন্নতা, কালচার, স্কাউট, ম্যাগাজিন, প্রিন্টিং, কৃষি, বিজ্ঞানাগার, লাইব্রেরি ও কম্পিউটার ফান্ড হতে ১১ লাখ ৯০ হাজার ১৭৫ টাকা, সরকারি বরাদ্দ হতে ৩ লাখ ৬৩ হাজার পাঁচশ টাকা।

 

স্কুলের ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারী মিজানুরের মাধ্যমে সাইফুল এককভাবে নিয়েছে ২০২৩-২৪ বাজেট ২৬ নম্বর বিলের ২২ হাজার টাকা, ৩০ নম্বর বিলের ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা, বিদ্যালয়ের দুটি পুকুর লীজ বাবদ তিন বছরের ভ্যাটসহ ৯৭ হাজার টাকা গ্রহণ করে সাইফুল ইসলাম। এসব তথ্য পুকুর লীজ গ্রহীতার অভিযোগ থেকে জানা গেছে।

 

এরইমধ্যে গত ১৫ সেপ্টেম্বর ২৪ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে হারানো ফ্রিজ, ল্যাপটপ, মাউস, চার্জার সহকারী শিক্ষক সাইফুল ইসলামের বাড়ি থেকে উদ্ধার করে স্কুলে জমা দিয়েছে শিক্ষার্থীরা। তার একটি সিজার লিষ্ট প্রতিবেদকের হাতে এসেছে।

 

এদিকে, শিক্ষক সাইফুল শিক্ষার্থীসহ শিক্ষকদের দেখে নেওয়ার হুমকি ও সাবেক প্রধান শিক্ষক স ম আবু হেনা বজলুর রশিদ ফোনে বর্তমান প্রধান শিক্ষক সুজিত কুমার দেবনাথকে মামলায় জড়ানোর ভয় দেখানোর অভিযোগ উঠেছে। এবিষয়ে তাদের বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন বর্তমান প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) সুজিত কুমার দেবনাথ।
এবিষয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা রাজশাহী অঞ্চল উপ-পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) ড. শরমিন ফেরদৌস চৌধুরী জানান, সাইফুল ইসলামের বিরুদ্ধে তদন্ত করে প্রতিবেদন মাউশি-তে পাঠানো হয়েছে। এখন রিপোর্ট অনুযায়ী ব্যবস্থা নিবেন মাউশি।

 

মন্তব্য অনুযায়ী, আলোচিত মোহনপুর সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক সাইফুল ইসলামের বদলীর বিকল্প নেই বলে মন্তব্য করেছেন স্থানীয় বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানরা। তারা বলেন, যারা দীর্ঘদিন একই প্রতিষ্ঠানে দ্বায়িত্ব পালন করতে গিয়ে নানা অনিয়মে বিতর্কিত হয়েছেন, তাদের বদলীর বিকল্প নেই।


প্রকাশিত: অক্টোবর ৫, ২০২৪ | সময়: ৭:২৯ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ