রবিবার, ২৬শে জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ১২ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ।
স্টাফ রিপোর্টার, বাঘা: রাজশাহীর বাঘায় পদ্মার ভাঙ্গনে চরাঞ্চলে ফসলী জমি ও শতাধিক বাড়ি-ঘর বিলিন হয়েছে। এটা চরবাসীদের জন্য নতুন কিছু নয়। প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে নদীতে পানি বাড়লেই এমন ঘটনা ঘটে। তারপরও ওরা স্থান পরিবর্তন করতে নারাজ। কারণ বন্যা, জলোচ্ছাস রোদ, বৃষ্টি, খরা ওদের সইয়ে গেছে। এ যেন নাড়ির টানে ঘরে ফেরার মতো। ওরা ভাংবে তুবু মুসরাবে না। জীবন-জিবিকার তাগিদে শত বাধা অতিক্রম করে নিজ গৃহেই বসবাস করবেন তারা।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান বাবলু দেওয়ান জানান, বাঘা উপজেলার পদ্মার চরাঞ্চলের ২০ টি গ্রাম নিয়ে গঠিত চকরাজাপুর ইউনিয়ন। এই ইউনিয়নের পাশে দিয়ে বয়ে চলেছে রাক্ষসী পদ্মা নদী। প্রতি বছর এ অঞ্চলে কম বেশী বন্যা এবং নদী ভাঙ্গন দেখা দেয়। এর ফলে অনেক মানুষকে তাদের ঘর-বাড়ি অন্যত্র সরিয়ে নিতে হয়। যার ব্যত্বয় ঘটেনি এবারও।
এ বছর ইতোমধ্যে সপ্তাহের ব্যবধানে ৭০টি বাড়ি, একটি স্কুল ও একটি মসজিদ পদ্মা গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এ ছাড়াও অর্ধশতাধিক বাড়িতে পানি উঠেছে। যা সরেজিমন তদন্ত করে গেছেন, উপজেলা নির্বাহী অফিসার ,সহকারী কমিশনার ভুমি ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার তরিকুল ইসলাম জানান, আমি সম্প্রতি পদ্মার চরাঞ্চলে ভাঙ্গন দেখতে গিয়ে ছিলাম। ঐ এলাকার লোকজন জানান, এবার বন্যার শঙ্কা বিগত বছরের তুলনায় কম। তবে বিভিন্ন ফসলী শত-শত বিঘা জমি নদী গর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। ভাঙ্গন থেকে রক্ষা পেতে প্রায় শতাধিক মানুষ তাদের ঘরবাড়ি অন্যত্র সরিয়ে নিয়েছেন। এর ফলে তারা আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ গয়েছে।
কিন্তু দেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটের জায়গা থেকে তাদের বেশি কিছু সহায়তা করতে পারিনি। তবে মঙ্গলবার উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কয়েকজন কর্মকর্তাকে ইঞ্জিন চালিত নৌকা যোগে গৃহহারা একশ পরিবারের জন্য দশ কেজি করে চাল এবং কিছু সুখনা খাবার পাঠিয়ে ছিলাম। সেখানে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান উপস্থিত ছিলেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এবার পদ্মায় পানী বাড়ার পর চরাঞ্চলের আতারপাড়া, দিয়ার কাদিরপুর ও চৌমাদিয়া চরের জয়নাল আবেদিন, মুসা হালদার, আজগর মোল্লা, আনোয়ার শিকদার, আনজিরা বেগম, পারুল বেগম, লালন, শাহ আলম, রাসেল হোসেন, তাজেল গাজি, আজিজ গাজি, আকবর আলী, আলম ব্যাপারি, মাজেদা বেগম, তরিকুল ইসলাম, হোসেন আলী, দিলু দর্জি, জালাল উদ্দিন, জলিল মোল্লা, সানোয়ার মোল্লা, ফারুক ব্যাপারি, আবু মোল্লা, ইব্রাহীম হালদার, বাবলু হালদার, আয়নাল মোল্লা, কাদির গাজি, ফরুক ব্যাপারি-২, আমাল ব্যাপারি, ফজল হালদারসহ ৭০টি বাড়ি এক সপ্তাহের ব্যবধানে পদ্মা গর্ভে বিলিন হয়ে যায়। এ ছাড়াও অর্ধশতাধিক বাড়িতে পানি উঠে। একই সাথে আতারপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয় ও মসজিদ পদ্মা গর্ভে বিলিন হয়ে যায়।
চকরাজাপুর ইউনিয়ন পরিষদের ২ নম্বর চৌমাদিয়ায় ওয়ার্ডের মেম্বর আবদুর রহমান দর্জি জানান, পদ্মার ভাঙনে চকরাজাপুর ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ড আতারপাড়ায়, ২ নম্বর ওয়ার্ড চৌমাদিয়ায়া এবং ৩ নম্বর ওয়ার্ড দিয়ারকাদিরপুরে ৭০টি পরিবারের ঘরবাড়ি পদ্মা গর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়ায় তারা নতুন ঘর না উঠানো পর্যন্ত খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছে। তাদের সরকারি ভাবে যত সামান্য সহযোগিতা করা হয়েছে। এই সহায়তার আরো বৃদ্ধি করার প্রয়োজন বলে তিনি মন্তব্য করেন।
বাঘা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসান বলেন, বাঘার চরাঞ্চলে নদী ভাঙনে ক্ষয়-ক্ষতির পরিমান জেলা প্রশাসক-সহ দুর্যোগ ও ত্রান মন্ত্রনালয়ে জানানো হয়েছে। আশা করছি তারা অচিরে আরো কিছু সহায়তা পাবেন।