মঙ্গলবার, ১৮ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ৫ই ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ।
রাবি প্রতিনিধি: ছাত্রাবাসের নিজ কক্ষে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) এক নবীন শিক্ষার্থীকে র্যাগিংয়ের পাশাপাশি আবরার ফাহাদের মতো পিটিয়ে মেরে ফেলার হুমকির অভিযোগ উঠেছে কয়েকজন শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে। গতকাল সোমবার (২৩ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় নিজের নিরাপত্তা চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বরাবর দেওয়া একটি লিখিত অভিযোগপত্রে হুমকির বিষয়টি জানিয়েছেন ভুক্তভোগী নবীণ শিক্ষার্থী।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর নাম মোহাম্মদ রকি। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। অন্যদিকে অভিযুক্তরা হলেন- মার্কেটিং বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী অন্তর বিশ্বাস, একই বিভাগের প্রথম বর্ষের দ্বিতীয় সেমিস্টারের শিক্ষার্থী নাজমুল হোসেন নাবিল ও তার কয়েকজন সহযোগী।
অভিযোগপত্র থেকে জানা যায়, ক্যাম্পাস সংলগ্ন বিনোদপুরের লেবুবাগান এলাকার ‘বিশ্বাস ম্যানসন’ ছাত্রাবাসের ২০৪ নম্বর কক্ষে থাকেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী। গত রবিবার (২২ সেপ্টেম্বর) রাত পৌনে ১২টা থেকে দেড়টা পর্যন্ত মানসিক নির্যাতন ও হয়রানির শিকার হন তিনি। অভিযুক্ত একই ছাত্রাবাসের ২০১ নম্বর কক্ষের নাজমুল হোসেন নাবিল ও ২০৫ নম্বর কক্ষের অন্তর বিশ্বাস রাত পৌনে ১২টার ভুক্তভোগীর কক্ষে প্রবেশ করে। শুরুতেই অভিযুক্ত দুই শিক্ষার্থী মোহাম্মদ রকিকে নানা রকম বিব্রতকর প্রশ্ন করে। ফলে ভুক্তভোগী মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হন।
লিখিত অভিযোগ অনুযায়ী, এক পর্যায়ে অভিযুক্ত দুই শিক্ষার্থী ভুক্তভোগীকে বলেন, ‘তোকে গেস্টরুমে নিয়ে যাব, গেস্টরুমে নিয়ে গিয়ে তোকে আদর আপ্যায়ন করব। শেষবারের মতো তোর মাকে কল দে, কল দিয়ে বল আর কোনদিন দেখা নাও হতে পারে। আমি কোনো ভুল করলে আমাকে মাফ করে দিও।’
এক পর্যায়ে অভিযুক্তরা বলেন, ‘আবরার ফাহাদ কে কিভাবে মেরে ফেলা হয়েছিল জানিস?’ উত্তরে ভুক্তভোগী বলেন, ‘জ্বি ভাই পিটিয়ে মারা হয়েছিল।’ তারপর অভিযুক্তরা বলেন, ‘তোকে এভাবে মারলে তখন কি করবি? উত্তরে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী চুপ থাকেন।
এরপর অভিযুক্তরা রকিকে হুমকি দিয়ে একাধিকবার হলের গেস্টরুমে যেতে বলেন। শেষে তারা ভুক্তভোগী মোহাম্মদ রকিকে বলেন, ‘তোর রুমমেটদের সেমিস্টার ফাইনাল ৭ তারিখে শেষ হবে। ৮ তারিখ থেকে রাতে তোর সাথে আমরা পার্টি দিব।’ এরপর তারা আনুমানিক রাত দেড়টার দিকে কক্ষ থেকে বের হয়ে যায়। এমতাবঅস্থায় আমি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।’
এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে প্রক্টর অফিসে দুই পক্ষকে ডাকা হয়। এসময় দুই সহকারী প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. রফিকুল ইসলাম ও অধ্যাপক ড. মো. নাসির উদ্দীন ও মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ মশিহুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।
জানতে চাইলে অভিযুক্ত মার্কেটিং বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী নাজমুল হোসেন নাবিল বলেন, গতকাল আমাকে ইচ্ছার বিরুদ্ধে বিভাগের বড় ভাই ওই ছেলের রুমে নিয়ে যায়। যখন আমি রুমে যাই, তখন আমার ডিপার্টমেন্টের বড় ভাই তার (রকি) সাথে মজা করে। আমিও ছিলাম পিছনে। কিন্তু আমি সেরকম ইনফ্লুয়েন্স করিনি। শিবির কথাবার্তা, মারা বা কোনো অত্যাচার করিনি। আমি তাকে বলে এসেছি তোমরা ফ্লোরে একসাথে আছো, মিলেমিশে থাকবা। রুমে আসবা আড্ডা দিবা। তোমার কোনো সমস্যা হলে আমাকে নক করতে পারো।
আবরার ফাহাদের মতো হত্যার হুমকি বিষয়ে তিনি বলেন, এটা আমরা উদাহরণ হিসেবে বলেছি। আমরা বলেছি বিশ্ববিদ্যালয় এখন সে রকম নেই যে আবরার ফাহাদের মতো হবে। তারসাথে এমন হলে আমাদের জানাতে বলেছি, কিন্তু সে বিষয়টি অন্যভাবে নিয়েছে।
অভিযুক্ত আরেক শিক্ষার্থী মো. অন্তর বিশ্বাস বলেন, আমি তারসাথে খুবই নরমালি কথা বলি। আমাদের উদ্দেশ্য ছিলো তার সাথে একটা সুসম্পর্ক তৈরি করা। কিন্তু ব্যাপার টা এতোদূরে চলে যাবে আমি বুঝতে পারিনি। ওই শিক্ষার্থীকে আমরা হুমকি দিয়েছি এমনভাবে সবার সামনে উপস্থাপন করা হচ্ছে এই ব্যাপারটি ভুল। আমি তাকে বলেছিলাম, আবরার ফাহাদের সাথে যেটা ঘটেছে ওটা র্যাগিং কিন্তু, তোমার সাথে যেমনভাবে কথাবার্তা হচ্ছে এটাকে তুমি র্যাগিং হিসেবে নিও না।
এবিষয়ে প্রক্টর অধ্যাপক মাহবুবর রহমান বলেন, এটা অত্যন্ত দুঃখজনক একটি ঘটনা। কারণ, একজন নতুন শিক্ষার্থীকে যেভাবে র্যাগিং দেওয়া হয়েছে, সেটা কোনোভাবেই কাম্য নয়। আমরা শিক্ষক হিসেবে এই বিষয়গুলোকে কোনোভাবেই প্রশ্রয় দিতে পারিনা। অভিযুক্তদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করার চেষ্টা আমরা করবো। অভিযোগ ও স্বীকারোক্তির তথ্যগুলো আমরা অভিযুক্ত শিক্ষার্থীর বিভাগে আমরা প্রেরণ করবো। বিভাগের একাডেমিক কমিটির একটা সুপারিশমালা তৈরী করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা কমিটিতে দিবে। সেই অনুযায়ী শৃঙ্খলা কমিটি সিদ্ধান্ত নিবে।