সর্বশেষ সংবাদ :

উত্তরাঞ্চলের সঙ্গে যোগাযোগের নতুন দিগন্ত : উদ্বোধন হতে যাচ্ছে যমুনা রেলওয়ে সেতু

স্টাফ রিপোর্টার: পরিবেশ ও যোগাযোগ ব্যবস্থাপনায় ব্যাপক ইতিবাচক বার্তা নিয়ে উদ্বোধন হতে যাচ্ছে বাংলাদেশের সবচেয়ে দীর্ঘ ও আধুনিক রেলওয়ে সেতু। এ সেতুর উদ্বোধনের মুহুর্ত থেকে দেশে শুধূ যোগযোগ ব্যবস্থাপনায়ই ব্যাপক পরিবর্তন হবে না, তা জাতীয় অর্থনীতি বিকাশে ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় ব্যাপক ও ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে শুরু করবে। এমন আশার কথা জানিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু প্রকল্প পরিচালক আল ফাত্তাহ মাসুদুর রহমান। সম্প্রতি তার কার্যালয়ে গণমাধ্যম কর্মীদের সাথে এক একান্ত আলাপ চারিতায় তিনি জানান, এ সেতুটি উদ্বোধনের মুহূর্ত থেকে দেশের রেল যোযোগের গতি বাড়বে। সেই সাথে পরিবেশের উপর এর ব্যাপক ও ইতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করবে।
তিনি জানান, বর্তমানে যমুনা সেতুতে যে গতিতে ট্রেন চলছে তা হচ্ছে ২০ কিলোমিটার গতিতে। ব্রিজ ও দুই স্টেশনের মাঝের দূরত্ব পার হতে একটি ট্রেনের সময় যাচ্ছে প্রায় ৪৫ মিনিট। এ সময়ে অন্য ট্রেনগুলোকে কোন না কোন পর্যায়ে অপেক্ষমান রাখতে হচ্ছে। এতে সময় এবং জ্বালানী ব্যায় বেড়ে যাচ্ছে। নব নির্মিত সেতুটি উদ্বোধনের পর সেতুসহ দুপাশের দূরত্ব মোট ১৩ কিরোমিটার পার হবে মাত্র ৫ মিনিটে।
তিনি জানান, এ সেতু উদ্বোধনের দিন থেকে দিনে ৮৮টি ট্রেন চালানো সম্ভব হবে। এতে বাড়বে ট্রেনে যাত্রী ও পণ্য পরিবহণের ব্যাপক সুবিধা। গতি বৃদ্ধি পাওয়ায় বাচবে সময়। সাশ্রয় হবে জ্বালী ও আর্থ। তিনি জানান, একটি কন্টেইনার বহণে এখন আমাদের যে খরচ করতে হচ্ছে সেই এখই খরচে একটি ট্রেন ৪৫টি কনটিনেন্টাল বহণে সক্ষম হবে। এতে আামদেও জ্বালানী খরচ বাচবে কম পক্ষে ৪৫ শতাংশ। ব্যাপক এ জ্বালানী সাশ্রয় শুধূ আমাদেও জন্য অর্থনীতির জন্য সুখবর নয়। এটি আমাদেও পরিবেশ দূষনের মাত্রাও নিয়ন্ত্রণ করবে।
তিনি জানান, আমাদর আমদানী বাণিজ্যেও বড় একটি অংশ ভারতের সাথে স্থল ভাগ দিয়ে হয়ে থাকে। এ ব্রিজটি সেই ব্যাপক বাণিজ্যে বহুগুন ইতিবাচক ভুমিকা রাখতে শুরু করবে। কারণ এখন পর্যন্ত আমাদের দেশে যে কন্টেইনার পোর্টগুলোতে জমা হচ্ছে তার মাত্র ৩শতাংশ কন্টেইনার পরিবহণ করছে বাংলাদেশ রেলওয়ে।
তিনি আরো জানান, এ সেতু চালু হলে পন্য ও যাত্রী বহনে রোড ট্রান্সপোর্টের উপর নির্ভরতা অনেকাংশই কমে যাবে। সেই সাথে কমে আসবে রোড এক্সিডিডেন্ট। সব মিলে এ সেতুটি বাংলাদেশের জন্য সার্বিক ভাবে সুসংবাদ হয়ে উঠবে।
তিনি জানান, নদীর বুকে সম্পূর্ণ দৃশ্যমান হয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু। নির্মাণাধীন সেতুটির সব কটি স্প্যান বসানো হয়েছে। গত এপ্রিল থেকেই সেতুর ৪ দশমিক ৮ কিলোমিটারের পুরোটাই দৃশ্যমান।
অ্যালাইনমেন্ট ও লেভেল ঠিক করার কাজও শেষ দিকে। বিভিন্ন ড্রেনের কাজ ও কালভার্টগুলোর কাজ শেষ হয়ে গেছে। দুই পাশের স্টেশন বিল্ডিংয়ের কাজ, প্ল্যাটফর্ম স্থাপনের কাজ ও ট্র্যাকের কাজও শেষ। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই সব কাজ শেষ হয়ে যাবে। সেই সঙ্গে ডিসেম্বরের শেষ দিকে সেতুটি উদ্বোধন করা সম্ভব হবে।
জাপান ও বাংলাদেশ সরকারের যৌথ অর্থায়নে সেতুটি নির্মিত হচ্ছে। এর নির্মাণ ব্যয় ১৬ হাজার ৭৮০ কোটি টাকা। ২০২০ সালের ২৯ নভেম্বরে সেতুটি নির্মাণকাজের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করা হয়। সমান্তরাল ডুয়েল গেজ ডাবল ট্র্যাকের এই রেলসেতুর পিলার নির্মাণে পাইলিংয়ের কাজ শুরু হয় ২০২১ সালের মার্চ মাসে। ডব্লিউডি-১ ও ডব্লিউডি-২ নামে দুটি প্যাকেজে জাপানি পাঁচটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। ডব্লিউডি-১ প্যাকেজটি বাস্তবায়ন করছে জাপানি আন্তর্জাতিক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ওবাইসি, টোআ করপোরেশন ও জেইসি (ওটিজে) জয়েন্ট ভেঞ্চার।
ডব্লিউডি-২ প্যাকেজটি বাস্তবায়নে রয়েছে জাপানের আইএইচআই ও এসএমসিসি জয়েন্ট ভেঞ্চার। এ ছাড়া সেতুর উভয় প্রান্তের দুই স্টেশনে সিগন্যালিং সিস্টেম স্থাপনে ডব্লিউডি-৩ নামে অপর একটি প্যাকেজের কাজও শেষ পর্যায়ে। সেতুটি নির্মাণে জাপান, ভিয়েতনাম, নেপাল, অস্ট্রেলিয়া, ফিলিপাইন ও বাংলাদেশের কর্মীরা নিয়োজিত আছেন।
সমান্তরাল ডুয়েল গেজ ডাবল ট্র্যাকের সেতুটির নির্মাণকাজ একবারেই শেষ প্রান্তে রয়েছে। সেতুর ওপর দিয়ে ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার বেগে ট্রেন চলাচল করতে পারবে।
জানা যায়, ১৯৯৮ সালে যমুনা সেতু চালু হওয়ার পরই ঢাকার সঙ্গে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের রেল যোগাযোগ স্থাপিত হয়। তবে ২০০৮ সালে সেতুটিতে ফাটল দেখা দেওয়ায় কমিয়ে দেওয়া হয় ট্রেনের গতিসীমা। বর্তমানে এই সেতু দিয়ে ঘণ্টায় ২০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চলাচল করে। সেতুটির নির্মাণকাজ শেষ হলে ঢাকার সঙ্গে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের রেল যোগাযোগে নতুন দিগন্তের সূচনা করবে। ঢাকার সঙ্গে রাজশাহী, রংপুর ও খুলনা অঞ্চলের রেল যোগাযোগে বর্তমান যে বিড়ম্বনা রয়েছে, সেটা আর থাকবে না। নির্মাণ শেষে সেতুটি দিয়ে প্রতিদিন অন্তত ৮৮টি যাত্রীবাহী ও মালবাহী ট্রেন চলাচল করবে। কমে যাবে পরিবহন খরচও। সেই সঙ্গে মহাসড়কের ওপর চাপও অনেকটা কমে আসবে।


প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২২, ২০২৪ | সময়: ৫:৫১ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ

আরও খবর