সর্বশেষ সংবাদ :

বাঘায় পদ্মা বিনোদন

নুরুজ্জামান, বাঘা: কর্মব্যস্ত জীবনের ক্লান্তি অবসাদ দূর করতে মানুষ ছুটে যান কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে। সুনীল সাগরে নিজের সব ক্লান্তি দূর করে অনাবিল আনন্দ উপভোগ করেন প্রিয় জনদের সাথে। সমুদ্রের বুকে গর্জে ওঠা ঢেউগুলো যখন তীরে আছড়ে পড়ে, তখন যেন সেখানকার মানুষের দুঃখগুলো নিমিষেই ধুয়ে-মুছে যায়। তবে সবাই অখন্ড অবসর কাটাতে সাগরে ছুটলেও কিছু মানুষ ছোটেন বাঁচার তাগিদে। এ বিশাল সমুদ্র সৈকতই তাদের জীবন-জীবিকা।
রাজশাহীর বাঘায় সমুদ্র সৈকত নেই, আছে সু-বিশাল পদ্মা নদী। এই পদ্মা মানুষের ঘর-বাড়ি গ্রাস করা থেকে শুরু করে প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে ফসলী জমি ভেঙ্গে একাকার করতো। কিন্তু এবার সেটি হয়নি। কারণ পদ্মার ভাঙ্গন রোধে গতবছর বাঁধ এলাকায় বসানো হয়েছে পাথর ও সিমেন্ট দিয়ে নির্মাণ করা ব্লক।
ফলে একদিকে যেমন বাঁচার তাগিতে ঘর-বাড়ি এবং জমি ভাঙ্গন রোধ সহ জীবন-মান উন্নয়ন হচ্ছে সমতল এলাকার মানুষদের। অপর দিকে একস্থান থেকে অন্য স্থানে ঘরবাড়ি ভেঙ্গে সরিয়ে নেয়া লাগছে না চরবাসীদের। তারা ইঞ্জিন দিয়ে তৈরীকরা নৌকা চালিয়ে অর্থ উপার্জন করছেন। আবার কেউ-কেউ হরেক রকম সবজি ফসল ফলাতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। আর জেলেরা মাছ ধরে তাদের জীবন সচল রেখেছেন।
বাঘার কিশোরপুর গ্রামের বদর আলী ও আনোয়ার হোসেন জানান, পদ্মার পাড়ে ব্লক বাধায় হওয়ার কারণে প্রতিদিন বিকেলে এখান মিনি পার্ক চালু হয়ে যায়। বসে চটপটি ও ফুসকা সহ হরেক রকম ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। আর ছুটে আসেন সকল সম্প্রদায়ের আবাল বৃদ্ধ বনিতা। এই নদী যেনো সমুদ্র পাড়ের ন্যায় সৌখিনতা ও বৈচিত্রতা পেয়েছে।
জনশ্রুতি রয়েছে, নদীর পাড়ে দাঁড়ালে সমুদ্রের বিশালতায় নিজেকে খুব ক্ষুদ্র মনে হয়। সাগরের নানাবিধ সৌন্দর্য আর বিশালতা উপভোগ করতে হলে মানুষকে যেতে হয় সাগর পাড়ে। আর যদি সেটি সম্ভব না হয়, তাহলে এই মুহুর্তে ঘুরে যেতে পারেন রাজশাহীর বাঘা উপজেলার পদ্মার পাড়।
সেখানে তৈরী হয়েছে এক মনোরম পরিবেশ। গতবছর নদীর পাড় ঘেষে ব্লক সেটিং করায় বর্তমানে এখানে প্রতিদিন হাজার-হাজার ভ্রমণপিপাসু মানুষ ভীড় জমাচ্ছেন। আবার অনেকেই নৌকায় চড়ে পদ্মার পানি ছুয়ে আনান্দে মেতে উঠছেন। আবার কেউ-কেউ মনের আনন্দে গান গেয়ে ইউটিউবে ছাড়া সহ টিকটক তৈরী করছেন।
স্থানীয় লোকজন বলেন, আমাদের এলাকায় প্রতি বছর কম-বেশী বন্যা হয়। এই বন্যার কারণে নদী তীরবর্তী এলাকায় ভাঙ্গন দেখা দেয়। এতে করে আমরা চরম আতঙ্কে রাত কাটাতাম। তবে আমাদের চাওয়ার প্রেক্ষিত ও সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর প্রচেষ্টায় গত বছর থেকে ভাঙ্গন রোধ করা সম্ভব হয়েছে। এতে ব্যায় হয়েছে প্রায় ৭ শ’ কোটি টাকা। এর ফলে নদী তীরবর্তী এলাকায় এবার ভাঙ্গনের পরিবর্তে দেখা মিলছে হাজার-হাজার ভ্রমণ প্রিয় মানুষের ঢল।
এছাড়াও ব্লক স্থাপন এলাকা জুড়ে বিস্তৃর্ণ পদ্মায় প্রতিদিন বিকেলে উন্মুক্ত পরিবেশ আর নদীর ওপারে কাশবন সহ হরেক রকম ট্রলার চালিত নৌকায় নানা রকম দৃশ্য আকৃষ্ট করছে বাঘা সহ অত্র এলাকার জনগণকে। আর চাঁদনী রাত হলেতো কোন কথায় নেই! এক কথায় বাঘার কিশোরপুর ও আলাইপুর নদী এলাকা ভ্রমন প্রিয় মানুষদের জন্য এখন হয়ে উঠেছে একটি মিনি পর্যটন কেন্দ্র।


প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৮, ২০২৪ | সময়: ৭:০১ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ