রবিবার, ৬ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২১শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ।
স্টাফ রিপোর্টার: রাজশাহী কলেজের অধ্যক্ষের দায়িত্ব গ্রহণের আড়াই ঘন্টার মধ্যে সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের মুখে পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছে প্রফেসর ড. আনারুল হক প্রাং। গত ৯ সেপ্টেম্বর রাজশাহী কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে প্রফেসর ড. আনারুল হককে পদায়নের দিন থেকেই প্রতিবাদ শুরু করে রাজশাহী কলেজের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। মানববন্ধন, বিক্ষোভ, স্মারকলিপি প্রদানসহ প্রশাসন ভবনেও তালাও ঝুলিয়ে দেন শিক্ষার্থীরা। ধারাবাহিক আন্দোলনকে উপেক্ষা করে মঙ্গলবার দুপুর পৌনে বারোটায় পুলিশ, সেনাবাহিনী, বিজিবি ও ছাত্রদলের সহযোগিতায় দায়িত্ব গ্রহণ করতে কলেজে আসেন প্রফেসর আনারুল।
সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে এদিন দুপুর ২টার দিকে পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর করে কলেজের উপাধ্যক্ষের কাছে জমা দেন তিনি। সরজমিনে দেখা যায়, মঙ্গলবার বেলা এগারটার দিকে কলেজ ক্যাম্পাসে আসে নব নিযুক্ত অধ্যক্ষ। সাধারণ শিক্ষার্থীরা তাকে প্রশাসনিক ভবনে ঢুকতে বাধা দিলে তিনি প্রায় আধা ঘন্টা ক্যাম্পাসে অবস্থান করেন। পরবর্তীতে বেলা পৌনে ১২টার দিকে ছাত্রদল, পুলিশ, সেনাবাহিনী ও বিজিবিসহ কলেজের প্রশাসনিক ভবনে দায়িত্ব গ্রহণের জন্য পদার্পণ করেন নবনিযুক্ত অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. আনারুল হক। এ সময় ছাত্রদলের ১৫-২০ জন নেতা-কর্মী প্রশাসন ভবনের সামনে অবস্থান নেওয়া শিক্ষার্থীদের ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়ে আনোয়ারুল হককে দায়িত্ব গ্রহণের সুযোগ করে দেয়। তবে সাধারণ শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে ক্যাস্পাস ছাড়তে বাধ্য হোন আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।
খবর পেয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীরা ক্ষোভে ফেঁটে পড়ে। দলে দলে প্রশাসন ভবনের সামনে এসে একত্রিত হন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এসময় ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা বেরিয়ে যেতে বাধ্য হয়। এরপর বেলা আড়াইটার দিকে শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে পদত্যাগ করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিরাপত্তায় ক্যাম্পাস ছাড়েন প্রফেসর ড. আনারুল হক।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, রাজশাহী শিক্ষাবোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক থাকার সময় ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে বোর্ডের ১৮ লাখ টাকা আত্মসাতের ঘটনায় ২০২০ সালে তিনটি মামলা করে দুদক। দুদকের তদন্ত প্রতিবেদনে অভিযোগ প্রমানিত হলে আত্মসাতের সমপরিমাণ টাকা বোর্ডের ফান্ডে জমা দেওয়ার মাধ্যমে আসামিরা মামলা থেকে অব্যাহতি পান। এতকিছুর পরও শিক্ষাবোর্ড চেয়ারম্যান হওয়ার তদবিরে উঠে পড়ে নামেন এই বিতর্কিত শিক্ষক। যা বিভিন্ন গণমাধ্যমেও উঠে আসে। রাজশাহী বোর্ড চেয়ারম্যানের স্বপ্ন পূরণ না হলেও তৎকালীন মেয়র লিটনের সুপারিশে পেয়েছেন বুদ্ধিজীবী কলেজের অধ্যক্ষের চেয়ার। তাকে বিতর্কিত, দুর্নীতিবাজ, স্বৈরাচার সরকারের দালাল, শিক্ষক নামের পা চাটা গোলাম অ্যাখ্যা দিয়ে দেশসেরা রাজশাহী কলেজের অধ্যক্ষ পদায়নের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানায় শিক্ষার্থীরা। যদিও এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন প্রফেসর আনারুল।
আন্দোলনের সমন্বয়কারী মহুয়া জান্নাত মৌ বলেন, রাজশাহী কলেজের শিক্ষার্থীরা যোগ্য অধ্যক্ষ চায়৷ খুনি হাসিনার কোন দোসরকে আমাদের পবিত্র ক্যাম্পাসে জায়গা দেওয়া হবে না। এ কারণেই শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করেছে। শিক্ষার্থীরা যখন আন্দোলন করছে হাসিনার দোসরদের বিরুদ্ধে সে সময় ছাত্রদলের কতিপয় নেতারা সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে। এটা কখনোই কাম্য নয়।
এ বিষয়ে ছাত্রদলের রাজশাহী কলেজ শাখার আহ্বায়ক আবির বলেন, এ আন্দোলনে আমরা প্রশাসন ভবনে তালা দেওয়ার আগ পর্যন্ত ছিলাম। এখন আমরা নবনিযুক্ত অধ্যক্ষকের যোগদানের পক্ষে, সে যে দলেরই হোক। কারণ অধ্যক্ষ না থাকায় শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা দূর্ভোগের সম্মুখীন হচ্ছেন।
কলেজের সুবিধার স্বার্থে আমরা তাকে বসিয়েছি, যেন কলেজ সুবিধাটা পায়। আমরা চাচ্ছিলাম, অধ্যক্ষ অফিসে যোগ দিয়ে অফিসের কাজ চালাক, আমরা আমাদের মতো তাকে সরানোর চেষ্টা করি।
রাজশাহী কলেজের শিক্ষার্থী মেশকাত রহমান বলেন, আমাদের কলেজ থেকে নতুন অধ্যক্ষ পদত্যাগ করায় কলেজের শিক্ষার্থীরা অনেক খুশি। তাকে পদত্যাগ না করানো হলে কলেজের অবস্থা আরো অনেক খারাপ হয়ে যেত। তবে আজকে ছাত্রদল খুব নিচু মানের কাজ করেছে। তারা দুর্নীতিবাজকে কলেজের দায়িত্ব নিতে সহায়তা করেছে এটা কখনোই তাদের কাছে আসা করা যায় না।