রবিবার, ১৬ই মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ২রা চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ।
সানশাইন ডেস্ক: রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শনিবার সন্ধ্যায় এক স্মরণ সভায় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, গত ১৬ বছর ধরে এবং সাম্প্রতিক ছাত্র-জনতার আন্দোলনে যারা নিহত হয়েছেন, তাদের সবাইকে রাষ্ট্রের তরফ থেকে ক্ষতিপূরণ ও ভাতা দিতে হবে। এটা অত্যন্ত জরুরি ব্যাপার। তিনি বলেন, ‘শুধু এখানে বসে কথা বলে আমরা অনুষ্ঠান করলেই হবে না, এই বিষয়গুলো অত্যন্ত জোরেসোরে তুলে ধরতে হবে এবং সরকারকে বলতে হবে যে, এসব করতে হবে।’
বিএনপির উদ্যোগে ছ্ত্রা-জনতার আন্দোলনসহ গত ১৭ বছরে নিহতদের স্মরণে এই সমাবেশ হয়। সমাবেশে গত ১৭ বছরে গুম ও খুন হওয়া কয়েকশ পরিবারের সদস্যরা অংশ নেন। সমাবেশের শুরুতে তাদের আত্মার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। এরপর সম্মিলিত সাংস্কৃতিক গোষ্ঠীর শিল্পীরা জাতীয় সংগীত পরিবেশ করেন।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আজকে আমরা সবাই বলছি যে, আমরা স্বাধীন হয়েছি, হয়তো স্বাধীন হয়েছি, কিন্তু এখনও চতুর্দিকে নাগিনীরা ছড়াচ্ছে নিঃশ্বাস। সেই দলের চক্রান্ত বিভিন্নভাবে ছড়াচ্ছে এবং এরা আমাদের বিভক্ত করবার চেষ্টা করছে।’
‘আজকে আমাদের যেটা প্রয়োজন সবচেয়ে বেশি তা হচ্ছে— যে ইস্পাত ঐক্য নিয়ে আমরা ১৬ বছর লড়াই করেছি, সেই ঐক্যটা অটুট রাখা এবং কোনোমতেই চক্রান্তে পা না দেওয়া। আমি বিএনপির নেতাকর্মী ভাইদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। তারা শত প্রলোভনের মধ্যে, উসকানির মধ্যে শান্ত থেকেছেন এবং এই দেশকে রক্ষা করবার জন্য তারা কাজ করে যাচ্ছেন।’
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘ শুক্রবার গোপালগঞ্জে আমাদের স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এসএম জিলানীর ওপর আক্রমণ করা হয়েছে, তার স্ত্রীর ওপর আক্রমণ করা হয়েছে। আমি নিজে আজকে হাসপাতালে দেখে এসেছি। একজন নেতা শহীদ হয়েছেন। এসব দেখে এটা পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে— এখনও তারা হায়েনার মতো লুকিয়ে আছে, যেকোনও সময়ে তারা আক্রমণ করবে।’
‘সেই আক্রমণকে আমাদের প্রতিহত করতে হবে। আমাদেরকে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘আমরা আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবসের প্রাক্কালে এই অঙ্গীকার করতে চাই- আমরা বাংলাদেশকে সত্যিকার অর্থে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে পরিণত করবার জন্য, প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করবার জন্য— সবাই কাঁদে কাঁদ মিলিয়ে কাজ করবো, অতীতেও করেছি আমরা। তবে একটা বিষয়ে সর্তক থাকবে হবে, চক্রান্তের মধ্য দিয়ে আমাদেরকে কেউ যেন বিপথে নিয়ে যেতে না পারে, আমরা সেই পথ না হারাই।’
‘সামনে দিনগুলোতে আমরা পেছনে ফিরে না তাকাই। সামনের দিনগুলোতে গণতন্ত্রের পক্ষে, জনগণের পক্ষে, মানুষের পক্ষে এগিয়ে যাই— এটাই হোক এখনকার শপথ।’ সমাবেশে বিএনপির সাংস্কৃতিক সংগঠন জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংস্থা-জাসাসের আয়োজনে আন্দোলনে উজ্জীবন করা গান, মুখাভিনয় পরিবেশন করা হয়।
ফখরুল বলেন, ‘আজকে একটা সংগ্রামের মধ্য দিয়ে আমরা একটা অর্ন্তর্বতীকালীন সরকার পেয়েছি। এই সরকারের কাছে জনগণের প্রত্যাশা আকাশচুম্বি। জনগণ মনে করে, এই সরকার এমন একটা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করে দেবে, গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে সংস্কার করে এমন একটা জায়গায় আনবে— যেন সত্যিকারের অর্থে একটা অর্থবহ নিরপেক্ষ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আমরা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র, গণতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে পারি।’
একইসঙ্গে ১৬ বছর ধরে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত এক লাখ ৪৫ হাজার মামলা প্রত্যাহার এবং গুম হওয়া নেতাকর্মীদের খুঁজে বের করার দাবিও জানান বিএনপি মহাসচিব। বিএনপির প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর পরিচালনায় এই স্মরণ সভায় বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর, জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদা, ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক মুভমেন্ট (এনডিএম) চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ, বিডিআর বিদ্রোহে নিহত মহাপরিচালক শাকিল আহমেদের ছেলে রাকিব আহমেদসহ নির্যাতিত পরিবারের তিন সদস্য বক্তব্য রাখেন।
প্রতিকূল আবহাওয়ায় দিনভর বৃষ্টির মধ্যে বিএনপিসহ তার অঙ্গসংগঠনের কয়েক হাজার নেতাকর্মী এবং গুম হওয়া পরিবারের সদস্যরা, ছাত্র-জনতার আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহতদের পরিবারসহ গত ১৬ বছরে আন্দোলনে বিএনপির নির্যাতিত ও পঙ্গু হওয়া নেতাকর্মীরা শহীদ মিনারের বেদীতে বসে এই অনুষ্ঠানে দেখেন।
অনুষ্ঠানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান, এজেডএম জাহিদ হোসেন, কেন্দ্রীয় নেতা আবদুল আউয়াল মিন্টু, আমান উল্লাহ আমান, আফরোজা খান রীতা, খায়রুল কবির খোকন, হাবিব উন নবী সোহেল, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, শিমুল বিশ্বাস, ফজলুল হক মিলন, শিরিন সুলতানা, রাকিবুল ইসলাম বকুল, রফিকুল আলম মজনু, আমিনুল হক, তাবিথ আউয়াল, ইশরাক হোসেন, ছাত্রদলের রাকিবুল ইসলাম রাকিব, নাছির উদ্দীন নাছিরসহ অঙ্গসংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।