রবিবার, ৬ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২১শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ।
নুরুজ্জামান, বাঘা: আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় রাজশাহীর বাঘা উপজেলায় চলতি মৌসুমে দেশের সোনালী আঁশ পাটের বাম্পার ফলন হয়েছে। প্রথম দিকে পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাতের অভাবে পাট আবাদে কিছুটা সমস্যা সৃষ্টি হলেও মৌসুমের শেষ দিকে এসে বৃষ্টি হওয়ায় পাটের আবাদ বৃদ্ধি পায়।
একই সাথে নিবিড় পরিচর্যা আর কৃষি অফিসের পরামর্শের কারণে পাটে কোনো রোগ-বালাই হয়নি। এ কারণে এ বছর পাট চাষে বিপ্লব ঘটেছে উপজেলার পদ্মার চরাঞ্চলে। একই সাথে পাটের দাম ভালো পাওয়ায় হাসি ফুটেছে কৃষকদের মুখে।
বাঘা উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, জলবায়ুর কারণে আমাদের দেশে পরিবেশের চরম বিপর্যয় ঘটে। এ কারণে কোন-কোন বছর পাট জাগ দেয়া নিয়ে কৃষকদের চরম বিপাকে পড়তে হয়।
এদিক থেকে এ বছর আবহাওয়া ভালো থাকায় একদিকে যেমন পাটের উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে, অপর দিকে ছোট খাট জলাশয় এবং নদী নালা সহ খাল-বিলে পানি থাকায় জাগ দিতেও কোন সমস্যা হয়নি।
তাদের ভাষ্য মতে, এ বছর ৫ হাজার হেক্টর জমিতে পাট চাষ করা হয়েছে। এ ছাড়াও উৎপাদন ধরা হয়েছে ২.৮ মে. টন। তবে সর্বোচ্চ পাট উৎপাদন করা হয়েছে উপজেলার পদ্মার চরাঞ্চল নিয়ে গঠিত চকরাজাপুর ইউনিয়নে।
সরেজমিন ঘুরে লক্ষ্য করা গেছে, উপজেলার প্রতিটা মাঠে এখন পাট কাটা, জাগ দেয়া এবং পাট শুকানো নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন পাট চাষীরা। উপজেলার বিভিন্ন বাজারে নতুন পাট উঠতে শুরু করেছে। তবে এখন পর্যন্ত কোন চাষী হতাশ হননি। কারণ এবার মৌসুমের শুরুতে প্রতি মণ পাট বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৮ শ’ থেকে ৩ হাজার টাকা মণ।
বাঘার পাট চাষীরা জানান, এ বছর কোন-কোন জমিতে পানি (জলাবদ্ধতা) থাকায় শ্রমিকদের অনেক বেশি মজুরি দিতে হচ্ছে। আমোদপুর গ্রামের কৃষক জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, পাটের বাজার ভাল হওয়ায় শ্রমিকদের মুল্য কোন ব্যাপার না। তার মতে, বর্তমানে পাটের যে দাম (মুল্য) রয়েছে শেষ পর্যন্ত এটি থাকলে আর কোন চিন্তা নেই।
আপর দিকে বারখাদিয়া গ্রামের পাট চাষী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, গত কয়েক বছরের হিসেব অন্তে সোনালী আঁশ পাটের অতীত ঐতিহ্য আমরা প্রায় হারাতে বসে ছিলাম। কিন্তু এবার শুরু থেকে ন্যায্য মূল্য পাওয়ায় সকল চাষী বেজায় খুশি। তার মতে, যদি শেষ পর্যন্ত বাজার মুল্য স্থিতিশীল থাকে তাহলে আগামীতে এর উৎপাদন আরো বৃদ্ধি পাবে এবং পাট চাষে কৃষকদের আগ্রহ বাড়বে।
সার্বিক বিষয়ে বাঘা উপজেলা কৃষি অফিসার শফিউল্লাহ সুলতান বলেন, এ বছর এ অঞ্চলে পাটের উৎপাদন বেশ ভালো হয়েছে। আমরা কৃষকদের মাঝে-মধ্যে পাট উৎপাদনের জন্য ট্রেনিং দেয়া থেকে শুরু করে বীজ এবং সার সরবরাহ করেছি। একই সাথে আমাদের মাঠ কর্মীরা সরেজমিন গিয়ে তদারকি সহ কৃষকদের নানা পরামর্শ দিয়ে এসেছে। আমার বিশ্বাস, পাট ব্যবসায়ীরা পুরোপুরি পাট কেনা শুরু করলে এর দাম আরও বৃদ্দি পাবে।