সর্বশেষ সংবাদ :

ঘরছাড়া এক তরুণী ও এক কিশোরী

স্টাফ রিপোর্টার: রাজশাহীর গোদাগাড়ী পৌর এলাকার কেল্লাবারুইপাড়া গ্রামের সৈবুর রহমানের মেয়ে বৈশাখী খাতুন (১৫) ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার দেবীনগর গ্রামের এসরাফিল হকের মেয়ে তাজরীন (২৪) এর সাথে বন্ধুত্বের গভীর সম্পর্ক গড়ে উঠে। তাজরিনের বোন কেল্লাবারুইপাড়া গ্রামে প্রায় ৮ বছর আগে বৈখাখী খাতুনের বাড়ীর পাশে ভাড়াও থাকতেন। তাজরিন বোনের বাড়ী যাওয়া আসার সুবাদে সেই সময় থেকেই তাদের পরিচয় হয়ে বন্ধুত্ব হয়।
প্রায় ৬ বছর আগে তাজরিনের বোন সেই ভাড়া বাড়ী ছেড়ে চলে যায়। তবে সম্পর্ক থেকে যায় দুই বান্ধবীর। মোবাইল ফোনে নিয়মিত যোগাযোগও হয়। তবে মোবাইল ফোনে তাদের কথপোকথন হতো ঘণ্টার পর ঘণ্টা। বৈশাখী খাতুনের মা সামনুর বেগম জানান, দুই বান্ধবী মোবাইল ফোনে প্রতিনিয়ত চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা কথা বলতো। আমরা মোবাইল ফোনে কথা বলতে দেখলে কেটে দিতো। সুযোগ বুঝে পুনরায় কথা বলতো।
দুই বান্ধবীর যখন এমন গভীর সম্পর্ক তখন গত ১০ সেপ্টেম্বর থেকেই তারা নিখোঁজ রয়েছেন। দুই পরিবারের সদস্যারা তাদের কোথাও খুঁজে পায়নি। এর ফলে বৈশাখী খাতুনের মা সামনুর বেগম গোদাগাড়ী মডেল থানায় ও তাজরিনের পিতা এসরাফিল হক চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর থানায় তাদের ফিরে পেতে সাধারণ ডায়েরি করেছে। ডায়েরিতে উল্লেখ করা হয়েছে বৈশাখী খাতুন সকাল ৯ টার দিকে গোদাগাড়ী আফজি পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে যাওয়ার নাম করে বের হয়। সে দশম শ্রেণির ছাত্রী। অদ্যবধি আমার মেয়ে আর বাসায় ফিরে আসেনি।
অপর দিকে তাজরিনের বাবা এসরাফিল হক ডায়েরিতে উল্লেখ করেছেন, তার মেয়ে একই দিন সকাল সাড়ে ৭ টার দিকে দেবীনগর কলেজে যাওয়ার নাম করে বের হলে আর ফিরে আসেনি।
তাজরিনের সাথে বৈশাখীর গভীর সম্পর্কের সূত্র ধরে বৈশাখীর বাবা মা ও বোন জামাই তাজরিন খাতুনের বাবার বাসায় যোগাযোগ করলে তথ্য পাওয়া যায় ভিন্ন রকম।
বৈশাখীর বোন জামাই আল আমিন জানায়, আমরা তাজরিনের দেবীনগরের বাড়ী গিয়ে তার পিতার কাছে নিজের মেয়ের খোঁজ নিতে গেলে এসরাফিল হক জানান, ১০ সেপ্টেম্বর আমার মেয়ে সকালে কলেজে যাওয়ার নাম করে বের হয়েছে আর ফিরে আসেনি। ফিরে আসেনি বলে খোঁজ নিয়েছেন বা থানায় জিডি করেছেন কিনা জানতে চাইলে তাজরিনের পিতা জানান, আমার মেয়ে প্রায় এভাবে চলে গিয়ে ৫-৬ দিন নিখোঁজ থাকার পর আবার চলে আসে তাই এসব কিছু করি না।
তবে তাদের মেয়ে নিখোঁজ আছে এসব নিয়ে তাদের মনে কোন শঙ্কা বা দুশ্চিন্তা কাজ করছে তা মোটেও বুঝা যায়নি। ধারণা করা হচ্ছে তার মেয়ে কোন অপরাধ চক্রের সাথে জড়িত থেকে বৈশাখী খাতুনকে কৌশলে কোথাও নিয়ে গিয়ে রেখেছে। তাদের দুজনের মোবাইল ফোনও বন্ধ রয়েছে। তাই তাদের সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না।
এদিকে বৈশাখী থাতুনকে ফিরে পেতে তার বাবা-মা মরিয়া হয়ে উঠেছে। এজন্য র‌্যাব-৫ অধিনায়ক চাপাইনবাবগঞ্জ সিপিসি-১ এর নিকট লিখিত আবেদনও করেছেন।
আবেদন উল্লেখ করা হয়েছে, স্কুলে যাওয়ার নাম করে তার মেয়ে বৈশাখী খাতুন সকালে বের হয়ে আর ফিরে আসেনি। পরবর্তীতে স্কুলে যোগাযোগ করা হলে স্কুল কর্তৃপক্ষ জানায় বৈশাখী সেদিন স্কুলে আসেনি। আত্মীয় স্বজনদের বাড়ীতে খোঁজ নিলেও মেয়ের খোঁজ মেলেনি। পরবর্তীতে বাড়ীতে এসে দেখে যে, বৈশাখীর দেড় ভোরি স্বর্ণঅলংকার, নগদ ৫ হাজার টাকা ও জামা কাপড় বাড়ীতে নাই।
পরে গোদাগাড়ী মডেল থানায় গিয়ে মেয়ের মোবাইল নং লোকেশন ট্র্যাক করা হলে সবশেষ লোকেশন রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশন দেখায়। তারপর মোবাইল ফোন বন্ধ দেখায়। গত ১১ সেপ্টেম্বর পুনরায় গোদাগাড়ী মডেল থানায় গিয়ে তাজরিনের মোবাইল ফোন ট্র্যাক করলে তার বর্তমান লোকেশন ঢাকা সাভারের আশেপাশে দেখায়।
বৈশাখীর বান্ধবীদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা জানান, বৈশাখীর সাথে তাজরিনের গভীর সম্পর্ক আছে। মোবাইল ফোনে নিয়মিত ৪-৫ ঘণ্টা কথা বলতো এবং মোবাইলে তাজরিন খাতুন বৈশাখীকে বিভিন্ন রকম লোভ লালসা দেখাতো। বৈশাখীকে তাজরিন বলতো তাকে আমি একদিন না একদিন দূরে কোথাও নিয়ে চলে যাবো।
নিখোঁজ বৈশাখীর পিতা সৈবুর রহমান ও মাতা সামনুর বেগম জানান, তাজরিন আমার মেয়েকে ফাঁদে ফেলে স্বর্ণঅলংকার ও টাকা পয়সা নিয়ে চলে গেছে। কোন চক্রের ফাঁদে ফেলে আমার মেয়েকে আটকে রেখেছে বলে অভিযোগ করেন।
গত ১২ সেপ্টেম্বর রাতে তাজরিনের বোনের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমার বোনকে নিয়ে কোন সংবাদ করবেন না। সে হয়তো ফিরে আসবে। বৈশাখীকে নিয়ে গেছে তারা মামলা করবে জানালে তার বোন পাল্টা হুমকি দিয়ে বৈশাখীর বাবা মায়ের বিরুদ্ধেও মামলা করার হুমকি দেয়।
গোদাগাড়ী মডেল থানার ওসি আতাউর রহমান জানান, এ বিষয়ে থানায় সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে। সবশেষ মোবাইল লোকেশন ট্র্যাক করে সাভার এলাকায় পাওয়া গিয়েছে। তারা ফোনও বন্ধ রাখছে তাদের উদ্ধারে কাজ চলছে বলে জানান।


প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৪, ২০২৪ | সময়: ৬:২৭ পূর্বাহ্ণ | সুমন শেখ

আরও খবর