রবিবার, ৬ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২১শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ।
স্টাফ রিপোর্টার, বাগমারা: ছাত্র-জনতার গণ অভ্যুত্থানের আন্দোলনে দুই পায়ে গুলিবিদ্ধ রাজশাহীর বাগমারার সেই যুবদলের নেতা মুনছুর রহমান বাদী হয়ে মামলা করেছেন। রাজশাহী-৪ (বাগমারা) আসনের সাবেক দুই সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদ, এনামুল হক, ভবানীগঞ্জ পৌরসভার সাবেক মেয়র আবদুল মালেক মণ্ডল, এনামুল হকের ক্যাশিয়ার হিসেবে পরিচিত মতিউর রহমান ওরফে টুকুসহ ৭৩ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ১৫০ জনকে আসামি করে গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় থানায় মামলা দায়ের করা হয়। মামলায় ককটেল বিস্ফোরণ ঘটানো, ছিনতাই ও গুলি করে পঙ্গু করার অভিযোগ আনা হয়েছে।
মামলার বাদী মুনছুর রহমান উপজেলার রামরামা গ্রামের বাসিন্দা ও গোয়ালকান্দি ইউনিয়ন যুবদলের সাধারণ সম্পাদক।
বাগমারা থানার ওসি তৌহিদুল ইসলাম মামলা দায়েরের বিষয় নিশ্চিত করে বলেছেন আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। ক্ষমতা হারানোর পর সাবেক সংসদ সদস্য এনামুল হক এই প্রথম কোনো মামলার আসামি হলেন। এর আগে আরেক সাবেক এমপি আবুল কালাম আজাদের বিরুদ্ধে আরও দুটি মামলা হয়েছে।
এই মামলায় সাবেক তিন আওয়ামী লীগ নেতা ছাড়াও উল্লেখযোগ্য আরো যাদের আসামী করা হয়েছে তারা হলেন, তাহেরপুর কলেজের অধ্যক্ষ জিয়া উদ্দিন টিপু, দেউলা গ্রামের প্রভাষক মাহাবুর রহমান (৪৫), বীরকুৎসা গ্রামের সাজেদুর ইসলাম সোহাগ (৩৬), বানাইপুর গ্রামের আব্দুল হাকিম (৪৮), সারন্দি গ্রামের সরদার জান মোহাম্মদ বক্স (৪৮), চকমহব্বতপুর গ্রামের এসএম এনামুল হক (৪৮), গঙ্গানারায়নপুর গ্রামের মামুন প্রাং (৫২), জিয়াপাড়া গ্রামের আবু সাইদ (৪৫), বাজে গোয়ালকান্দি গ্রামের জামাল মোল্লা (৩৫), সারন্দি গ্রামের তুহিন বক্স (২৫), সাঁকোয়া গ্রামের মিঠু চৌধুরী (৫০), কোনাবাড়িয়া গ্রামের সাইফুল ইসলাম (৫৮), নুরপুর আমতলি গ্রামের সোগেল রানা (৩২), জামগ্রাম উত্তপাড়ার শাহিন (৩০), রসুলপুর গ্রামের কোরবান (৩০), নুরপুর গ্রামের শামিম ওসমান (৩০), চৌকিরপাড়া গ্রামের শিশির (৩০), গাইদোহা গ্রামের তমিজ (৩০), আলিগাছি গ্রামের শাকিল (৩০), মজিদপুর গ্রামের রবিউল (২৪), একই গ্রামের লালন (২৪), জব্বার (২৬), সাজুরিয়া উত্তপাড়া গ্রামের হেলাল (৪২), আলুগাছি গ্রামের কোরবান (৩২), রসুলপুর গ্রামের আলমগীর (৩৫), আলুগাছিগ্রামের আমজাদস (৩০), জামগ্রাম উত্তপাড়া গ্রামের শান্ত (৩০), হামিরকুৎসা নামোপাড়া গ্রামের মিজানুর রহমান (৩৬), নুরপুর আমতিল গ্রামের ফরিদ (৩০), মজিদপুর গ্রামের শরিফুল (৩৪), তাহেরপুর গ্রামের আক্তারুজ্জামান তুহিন (৩৫), ভবনপুর গ্রামের সাফিন খা (৩৫), মথুরাপুর গ্রামের মেহেদী ওরফে শ্রাবন (২০), একই গ্রামের সালাউদ্দিন((৩২), দুলাল (২৯), চৌকিরপাড়া গ্রামের আলম সরকার (৫৩), জামগ্রামের এরশাদ আলী (৪০), একই গ্রামের আসাদুল (৩৮), সাজ্জাক (৩২), নুরপুর আমতলি গ্রামের সবুজ (৩২), সুলতানপুর গ্রামের জাহেদুল ইসলাম শোভন (৩২), জামগ্রামের মিঠুন (৩২), হামিরকুৎসা গ্রামের রশিদ শাহ (৫৫), আচিনঘাট গ্রামের ডালিম (৪১), গোয়ালকান্দি গ্রামের জোহান মোল্লা (২৫), কামারখালি গ্রামের রফাতুল্যা (৪০), চাঁনপাড়া গ্রামের আব্দুল হান্নান (৪০), একই গ্রামের নাহিদ ইসলাম (৩০), পলাসী গ্রামের ফরহাদ হোসেন সাজিল (৫০), খয়রা গ্রামের জুয়েল রানা (৩৮) মাঝগ্রামের ফারুক হোসেন (৪০) সোনাডাঙ্গা গ্রামের রহিদুল ইসলাম (৫০), ডোখলপাড়া গ্রামের হাবিবুর (৫০) সহ মোট ৭৩ জনের নাম উল্লেখ সহ অজ্ঞাত আরো ১৫০ জনকে আসামী করা হয়েছে।
মামলা সূত্রে ও আহত মুনসুর রহমানের ভাষ্যমতে, গত ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচিতে যোগ দেওয়ার জন্য তিনি মোটরসাইকেল নিয়ে উপজেলা সদর ভবানীগন্জে আসছিলেন। সকাল সাড়ে ১০ টার দিকে তিনি ভবানীগঞ্জ কারিগরি কলেজের সামনে পৌঁছালে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের ক্যাডারেরা লাঠি, হকিস্টিক, রামদা ও আগ্নেয়াস্ত্র সহকারে তাঁদের ধাওয়া করেন। এসময় তিনি ধানখেতের ভেতরে পড়ে যান।
হামলাকারীরা আসামি সাবেক দুই এমপি, মেয়র, তাহেরপুর কলেজের অধ্যক্ষ জিয়াউদ্দিনসহ অন্য ছয়জনের নির্দেশে আতঙ্ক সৃষ্টির জন্য ফাঁকা কয়েক রাউন্ড গুলি করা হয়। সেখানেই তাঁর ওপর হামলা চালান।
এসময় পকেটে থাকা আট হাজার টাকা ছিনিয়ে নেন আসামিরা। তাঁকে পিটিয়ে জখম করার পর এক পায়ে যুবলীগের নেতা সোহেল রানা ডান পায়ে ও শাহিন ইসলাম বাম পায়ে আলাদা দুটি গুলি করেন। এতে একটি বুলেট পায়ের এক পাশ দিয়ে ঢুকে অন্য পাশ দিয়ে বের হয়ে যায় এবং আরেকটি পায়ে আটকে যায়। এসময় হামলাকারীরা এলোপাতাড়ি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটান। ধানখেতে ফেলে চলে আসেন হামলাকারীর।
স্থানীয় একদল নারী অচেতন অবস্থায় ধানখেত থেকে উদ্ধার করে এক বাড়িতে নিয়ে আসেন। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসার পর চেতনা ফিরে পান মুনছুর রহমান। পরে যুবদলের নেতারা তাঁকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে নিয়ে আসেন। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসার পর রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। চিকিৎসা নেওয়ার পর তিনি মামলা করলেন বলে জানিয়েছেন। তাঁর বাম পায়ের বুলেট স্পর্শকাতর স্থানে আটকে থাকায় তা বের করা সম্ভব হয়নি।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে চিকিৎসার পর ঢাকার বারডেম হাসপাতালের অর্থোপেডিক্স বিভাগে চিকিৎসা করা হয়।
রাজশাহী জেলা গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল এই মামলার এক আসামি ভবানীগঞ্জ পৌরসভার সাবেক মেয়র আবদুল মালেক মণ্ডলকে আটক করেছে। জেলার মোহনপুরের আরেকটি বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে দায়ের করা গ্রেপ্তার করা হয়। মামলার অধিকাংশ আসামি আত্নগোপনে রয়েছেন বলে পুলিশ জানিয়েছেন। কয়েকজন আসামির সঙ্গে এই প্রতিবেদক যোগাযোগের চেষ্টা করেছেন।
তিনজন আসামি হোয়াটসঅ্যাপে জানান, তাঁরা ঘটনা সম্পর্কে কিছুই জানেন না। আওয়ামী লীগ করার কারণে আসামি করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেন। বাগমারা থানার ওসি তৌহিদুল ইসলাম জানান আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।