রবিবার, ৬ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২১শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ।
স্টাফ রিপোর্টার: সাধারণ মানুষকে সঙ্গে নিয়ে আগামীতে এগিয়ে যেতে চায় রাজশাহীর বিএনপি। তাই, তৃণমূলের মাঠ গোছানোর কাজে ব্যস্ত দীর্ঘ সময় ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের। এরই অংশ হিসেবে দ্রুত সময়ের মধ্যে তৃণমূলের কমিটিগুলো ঘোষণা করতে যাচ্ছে দলটি। তৃণমূলের কমিটি গঠনের পর পরই ঘোষণা করা হবে জেলা ও উপজেলা কমিটি। আর এসব কমিটিতে অগ্রাধিকার পাবে প্রবীণ ও ত্যাগী নেতারা।
দলটির শীর্ষস্থানীয় নেতারা জানান, প্রবীণ ও ত্যাগী নেতাদের মূল্যায়ন করা হবে সবার আগে। নতুন কমেটি দেয়ার বিষয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মিজানুর রহমান মিনু বলেন, গতকাল আমাদের সভা হয়েছে। সভায় সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে কেন্দ্রীয় নির্দেশনা অনুযায়ী যেগুলো জায়গায় কমেটি দীর্ঘদিন থেকে হয়নি সেখানে নতুন কমেটি দেয়া হবে। রাজশাহী বিএনপি নতুন করে সাজানো হবে। যারা বিগত দিনে আমাদের সাথে লড়াই সংগ্রামে রাজপথে ছিলো এবং ত্যাগী ও প্রবীণ নেতাদের মূল্যায়ন করা হবে।”
রাজশাহীর বিএনপিতে কোন দলীয় কোন্দল নাই জানিয়ে তিনি আরো বলেন, “বিএনপি একটি বড় দল। দলে কিছুটা মতবিরোধ এবং কোন্দল থাকতেই পারে। কিন্তু রাজশাহীতে এইরকম কিছুই নেই। আমরা সবাই এক হয়ে একটি একটি সুন্দর বাংলাদেশ গঠনে কাজ করতে চাই।”
গত আগস্টে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর আমূল পরিবর্তন আসে রাজশাহী জেলা ও মহানগর বিএনপির। নেতারা বলছে অতি উৎসাহী হয়ে কেউ যাতে বিএনপির নাম ব্যবহার করে ‘বিশৃঙ্খলা’ সৃষ্টি করতে না পারে সে বিষয়ে নজর রাখা হবে।
বিএনপির সহ-ত্রাণ ও পূর্ণবাসন বিষয়ক সম্পাদক ও রাজশাহী মহাগর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক এ্যাড. শফিকুল হক মিলন বলেন, বিএনপি একটি সাংগঠনিক দল। এই দলের নাম ব্যবহার করে যারা অপকর্ম করবে তাদের বিরুদ্ধে আইনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
তিনি আরো বলেন, গত ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট সরকারকে ছাত্র-জনতা আন্দোলন করে বিতারিত করেছে। প্রান ভয়ে শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে গেছে। এর ফলে বাংলাদেশ স্বৈরাচারমুক্ত ও দেশ পুণরায় স্বাধীন হয়েছে। আমাদের দলের উপরে দীর্ঘদিন অত্যচার নিপীড়ন করেছে শেখ হাসিনার দোসর বাহিনী। নিযার্তিত নেতাকর্মীরা আবার পুর্ণঃউদ্যমে শহীদ রাষ্টপতি জিয়াউর রহমানের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে সংগঠনে মনোনিবেশ করবে। ”
নতুন করে বিএনপিকে সাজানোর বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা কেন্দ্রীয় নির্দেশনা অনুযায়ী দল গোছানোর কাজ করছি। আপানরা ইতিমধ্যে পত্র-পত্রিকার মাধ্যমে দেখতে পাচ্ছেন আমাদের বিভিন্ন উপজেলা এবং ইউনিয়নে কমেটি গঠন করা হচ্ছে। আমরা তৃণমূল পর্যায় থেকে কাজ করছি। যেমন বুধবার পবা উপজেলা হড়গ্রাম ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের কমিটি গঠন করা হয়েছে। এইভাবেই যেখানে যেখানে দীর্ঘদিন কমেটি হয়নি সেই জায়গাগুলোতে আমরা কাজ করছি।
দলে অনুপ্রবেশ ঠেকানোই এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করেন তিনি। এ বিষয়ে শফিকুল হক মিলন বলেন, বিগত সময়ে আমরা যখন স্বৈরাচার সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন লড়াই সংগ্রাম করেছি তখন আমরা কতটা অত্যচারিত ছিলাম আপনারা তা জানেন। কিন্ত এখন একটি বিষয় খুব উদ্বেগ এর সাথে লক্ষ্য করছি আমাদের দলেও কিছু অনুপ্রবেশকারী প্রবেশ করে দলের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে। আমি আমাদের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্য বলবো আপনারা এগুলো অনুপ্রবেশকারীদের থেকে সর্তক থাকবেন।
দল পূর্ণরায় সাজানোর উদ্যেগ কে সাধুবাদ জানিয়েছে রাজশাহী বিএনপির তৃণমূল নেতৃবৃন্দ। জেলার বিভিন্ন উপজেলা বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের সাথে কথা বলে জানা যায় তারা জেলার নেতাদের নির্দেশে বিএনপির বিভিন্ন ইউনিয়ন ও ওয়ার্ডে কমেটি গঠন করছে।
রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলা বিএনপির আহব্বায়ক আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, দীর্ঘদিন লড়াই সংগ্রামে রাজপথে ছিলো পুঠিয়া উপজেলা বিএনপি। শেখ হাসিনা সরকারের আমলে আমাদের সবচেয়ে বেশি নিযার্তিত করা হয়েছিল। এই ফ্যাসিস্ট খুনি সরকার পতনের পরে আমরা পুঠিয়া উপজেলা বিএনপি নতুন করে সাজাচ্ছি। আমার ৬টি ইউনিয়নে ইতিমধ্যে কমেটি দেওয়া হয়ে গেছে। ইউনিয়নে যাদেরকে কমেটি দিয়েছিলাম তারা আবার ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে গিয়ে কাজ করছে। এইভাবেই আমাদের দল গোছানোর কাজ শুরু হয়েছে যা চলমান থাকবে।
তানোর উপজেলা বিএনপির সভাপতি আখেরুজ্জামান হান্নান বলেন, বিএনপি যেহেতু দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে ছিলো তাই এই দলটি পূর্ণরুপ ভাবে সাজানো দরকার। ইতিমধ্যে আমাদের তানোরে ওয়ার্ড কমেটি দেওয়া শুরু হয়েছে। আমরা কেন্দ্রীয় নির্দেশনা মোতাবেক দল গোছানোর কাজ শুরু করেছি।
দল গোছানোর কাজে নতুন করে সাংগঠনিক দক্ষতা বাড়বে বলে মনে অঙ্গ সহযোগী সংঠনের নেতৃবৃৃন্দ। রাজশাহী জেলা ছাত্রদলে যুগ্ম আহ্বায়ক সোহেল রহমান বলেন, বিএনপি বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ এবং সবচেয়ে জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল, যার মূল শক্তি হচ্ছে তৃণমূলের কোটি কোটি নেতাকর্মী। বিএনপির অতীতে যে কোন সময় চেয়ে বর্তমানে সুশৃঙ্খল সুসংগঠিত অবস্থায় আছে। রাজনৈতিক কর্মকান্ড পরিচালনার জন্য দল গোছানো একটি চলমান প্রক্রিয়া এটা বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশনা মেনে চলমান থাকবে এবং আমরা এই উদ্যোগ কে সাধুবাদ জানাই।