রবিবার, ৬ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২১শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ।
আদমদীঘি প্রতিনিধি: বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলার সান্তাহার ইউনিয়ন পরিষদে বিতর্কিতভাবে প্যানেল চেয়ারম্যান নাজিম উদ্দীনকে নির্বাচিত করা হয়েছে। ফলে ইউপির সাবেক প্যানেল চেয়ারম্যানরা অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। বিএনপির নেতাকর্মীদের সাহায্যে এমন কর্মকান্ড হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ঘটনার পর এলাকায় ব্যাপক গুঞ্জন শুরু হয়েছে। এ ঘটনায় অসম্মতি জানিয়ে উপজেলা নির্বাহী বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন ইউপি সদস্যরা।
জানা যায়, গত ৫ আগষ্ট আওয়ামী লীগ সরকার পদত্যাগের পর দেশ ত্যাগ করেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এতেকরে কোনঠাসা হয়ে পড়েন দলীয় মন্ত্রী, এমপি ও বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা। মামলা হামলার ভয়ে আত্মগোপনে থাকছেন তাঁরা। সেই সাথে কোনঠাসা হয়ে পড়েন দলীয় চেয়ারম্যানরা। মামলা থেকে বাদ জাননি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানরাও।
এতেকরে চেয়ারম্যানরা অনুপস্থিত থাকায় পরিষদের যাবতীয় কার্যক্রম করছেন প্যানেল চেয়ারম্যানরা। আর এই সুযোগ কাজে লাগিয়েছেন বিএনপি ঘেঁষা ইউপি সদস্যরা। সেই জন্য বিএনপির এক নেতার চায়ের দাওয়াতে সান্তাহার ইউনিয়ন পরিষদের বাহিরে একটি কক্ষে সকল সদস্যরা উপস্থিত হন। সেখানে এক ঘরোয়া বৈঠকে নাজিম উদ্দীনকে প্যানেল চেয়ারম্যানের প্রস্তাব দেন বিএনপি নেতারা।
বিভিন্ন ভয়ভীতি দেখিয়ে ইউপি সদস্যেদের তার পক্ষে সম্মতি প্রকাশ করতে বাধ্য করান। ফলে পুরাতন প্যানেল চেয়ারম্যান বাতিল করে নতুন করে গঠন করা হচ্ছে। দেখা মিলছে নতুন প্যানেল চেয়ারম্যানদের। এমন ঘটনা অনেক পরিষদের ঘটানো হচ্ছে বলে জানা যায়।
এদিকে ঘটনাটি নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়। যার কারণে ইউপির সাবেক প্যানেল চেয়ারম্যানরা অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। বাধ্য হয়ে গত ৪ সেপ্টেম্বর বুধবার দুপুরে প্রতিকারের আশায় ইউএনও বরাবর অভিযোগ দিয়েছেন সাবেক প্যানেল চেয়ারম্যান সহ ৭জন।
অপরদিকে অভিযোগ দায়েরের পরপর অদৃশ্য কারণে কয়েকজন ইউপি সদস্য ইউএনও’র নিকট অভিযোগ প্রত্যাহারের বিষয়ে সাক্ষাৎ করেন। ইউএনও’র সাক্ষাতের পরও কোন ফলপ্রসূ হয় না বলে জানা যায়।
অভিযোগে একাধিক ইউপি সদস্যরা জানান, গত ২৮ আগষ্ট বুধবার সন্ধ্যায় বিএনপি নেতা ও সাবেক সান্তাহার ইউপি চেয়ারম্যান মোজাহার হোসেন পিন্টু সকল ইউপি সদস্যদের চায়ের দাওয়াত দেন। সেখানে ইউপি সদস্যসহ প্রায় অর্ধশতাধিক লোককে নিয়ে একটি ঘরোয়া বৈঠকের আয়োজন করে বিএনপি নেতারা। কিছুক্ষণ পরে প্যানেল চেয়ারম্যান পরিবর্তনের কথা বলা হয়। এরপর ইউনিয়ন বিএনপির স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক ও ইউপি সদস্য নাজিম উদ্দীনকে প্যানেল চেয়ারম্যানের প্রস্তাব দেন উপস্থিতিরা।
এসময় নাজিম উদ্দীন চাপ প্রয়োগ করে কয়েকজন ইউপি সদস্যর ইচ্ছের বিরুদ্ধে কাগজে স্বাক্ষর করান। স্বাক্ষর না করলে মামলার ভয় দেখান এবং প্রাণনাশের হুমকি ধামকি প্রদান করা হয় ইউপি সদস্যদের। একপর্যায়ে নিজেদের রক্ষার্থে অনিচ্ছাকৃত ভাবে হলেও উল্লেখিত কিছু কাগজপত্রে স্বাক্ষর করে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে চলে যান ইউপি সদস্যরা।
তাই এক ইউপি সদস্য ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, স্রোতের বিপরীতে গেলে বিভিন্ন হয়রানির শিকার হতে হবে। এর থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেওয়া শ্রেয়।
এ বিষয়ে সাবেক প্যানেল চেয়ারম্যান শাহিন হোসেনি জানান, পরিষদ গঠিত হবার পর এক মাসের মধ্যে আমি, এমদাদুল ও লুৎফুন নেছা তিনজন সকলের সম্মতিক্রমে প্যানেল চেয়ারম্যান নির্বাচিত হই। ইউপি চেয়ারম্যানের অনুপস্থিতিতে সকল কার্যক্রম আমরাই করতাম। কয়েকদিন আগে জোরপূর্বক আমাদের প্যানেল চেয়ারম্যান থেকে অব্যাহতি দিতে বাধ্য করা হয়েছে। তবে ইউএনও অফিসে আমরা ৩ প্যানেল চেয়ারম্যান অব্যাহতি বিষয়ে লিখিত ভাবে কোন কাগজপত্র জমা দিইনি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক আওয়ামী লীগ নেতারা জানান, মেম্বার নাজিম উদ্দীন গত সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের খান মুহাম্মদ সাইফুল্লাহ আল মেহেদী বাঁধনের ভোটের প্রচারণা করেছেন। পরে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম খান রাজুর ভোটের প্রচারণাও করেছেন তিনি।
এছাড়া সভাপতি রাজুর বাড়িতে প্রায় দিনভর পড়ে থাকতে দেখি তাকে। বিভিন্ন প্রকল্পের সুবিধা নিয়েছেন। তাকে দেখলে কখনও মনে হয়নি সে বিএনপির একজন নেতা। সে আওয়ামী লীগের পক্ষে থেকে সুবিধা নিয়েছেন, এখন বিএনপির সুবিধাও নিচ্ছেন। সে একজন সুবিধাভোগী মানুষ।
আইনজীবী আতাউর হোসেন জানান, ইউনিয়ন পরিষদ আইনে সদস্যগণ নিজেদের মধ্য থেকে প্যানেল চেয়ারম্যান নিবার্চন করবেন যেখানে একজন সংরক্ষিত মহিলা সদস্য নির্বাচিত হবে। যে কোন কারণে চেয়ারম্যান অনুপস্থিত থাকলে অগ্রাধিকারক্রমে একজন সদস্য চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করবেন।
আবার প্যানেলভুক্ত সদস্যরা অযোগ্য হলে অথবা দায়িত্ব পালনে অসম্মতি জ্ঞাপন করলে তাদের পদত্যাগপত্র উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর লিখিত ভাবে জমা দিতে হবে। এবং তাদের পদত্যাগপত্র গ্রহণ করবেন ইউএনও। এরপর আবারও প্যানেল চেয়ারম্যান গঠিত করতে পারবেন।
আদমদীঘি উপজেলা নির্বাহী অফিসার রুমানা আফরোজ জানান, এ বিষয়ে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন তারা। আগের তিন প্যানেল চেয়ারম্যান স্বেচ্ছায় এখানে এসে পদত্যাগপত্র দেননি। পরিষদ গঠিত হবার পরপর সংরক্ষিত মহিলাসহ তিন সদস্যবিশিষ্ট প্যানেল চেয়ারম্যান নির্বাচন করা হয়। সেটা তো এইভাবে সম্ভব নয়। আর বর্তমান পেক্ষাপটে নতুন ভাবে প্যানেল চেয়ারম্যান গঠন গ্রহণযোগ্য হবে না।
চেয়ারম্যানের অনুপস্থিতির কারনে পরিষদের বিভিন্ন কাজে বিঘ্নিত হচ্ছে। এ বিষয়ে আমার উর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে জানিয়েছি তাঁরা দ্রুত একটি পদক্ষেপ নিবেন বলে আশা করছি। বিষয়টি আরও খোলাসা হবে বর্তমান জারিকৃত একটি পরিপত্র দেখে।