রবিবার, ৬ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২১শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ।
স্টাফ রিপোর্টার, চারঘাট: রাজশাহীর চারঘাটে ভুয়া সনদ দিয়ে চাকুরীর অভিযোগে প্রধান শিক্ষকের অপসারণের দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করেছে শিক্ষার্থীসহ এলাকাবাসী। গত কয়েকদিন ধরে এমন পরিস্থিতি বিরাজ করলেও বিদ্যালয়ের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পাওয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার তা সমাধানে কোন উদ্যোগ গ্রহণ করেননি।
বিদ্যালয়টিতে পরিদর্শনে যাওয়ার চিঠি দিলেও সভাপতি বিদ্যালয়ে যাননি বলে দাবি বিদ্যালয়টির শিক্ষকদের। এতে চরম ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও এলাকাবাসীর মাঝে।
অন্যদিকে শিক্ষার্থী-সহ এলাকাবাসীর অভিযোগ ভুয়া সনদে গত ১ যুগ ধরে চাকরী পাওয়া প্রধান শিক্ষক রেজাউল করিম গত ৫ আগস্ট থেকে ১০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থাকলেও ব্যবস্থা নেননি সভাপতি। উপজেলার ভায়ালক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের বাকড়া উচ্চ বিদ্যালয়ে ঘটে এমন ঘটনা।
সরজমিন সোমবার দুপুর সাড়ে ১২ টার দিকে ঘটনাস্থলে চারঘাট প্রেসক্লাবের সাংবাদিকরা উপস্থিত হলে দেখা যায় বাকড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ক্লাস বন্ধ করে প্রধান শিক্ষক রেজাউল করিমের অপসারণের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করছে। উৎসাহ জোগাচ্ছেন ওই এলাকার শত শত এলাকাবাসী।
শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আওয়ামী লীগ শাসন আমলে ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে সম্পুর্ণ নিয়মনীতি উপেক্ষা করে নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে নিয়োগ পাওয়া প্রধান শিক্ষক জালাল উদ্দিনকে বাদ দিয়ে জোর করে ভুয়া সনদ দেখিয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ নেন সহকারী প্রধান শিক্ষক রেজাউল করিম। এতে চরম অসন্তোস সৃষ্টি হয় তৎকালিন শিক্ষকদের মাঝে।
এ বিষয়ে শিক্ষক জালাল উদ্দিন বলেন, রেজাউল করিম যে সনদে চাকুরী পেয়েছেন সেটি একটি ভুয়া। তিনি এ্যামিরিকান বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি থেকে বিবিএড এর সার্টিফিকেট দেখালেও ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিবিএড এর কোন অনুমোদনই নেই।
তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, এ্যামিরিকান বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি ২০০৬ সাল থেকে বিভিন্ন কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ ঘোষণা করেন সরকার। তবে বন্ধ হওয়ার আগ পর্যন্ত ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শুধু বিবিএ ম্যানেজমেন্ট ও বিবিএ মার্কেটিং বিভাগ অনুমোদন ছিল। অথচ ২০০৫ সালে এমিরিকান বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি থেকে বিবিএড করেছেন বলে সার্টিফিকেট দিয়ে বাকড়া উচ্চ বিদ্যালয়ে চাকুরী নেন রেজাউল করিম। যেটি সম্পুর্ণরুপে বেআইনী বলে দাবি শিক্ষক জালাল উদ্দিনসহ উপস্থিত একাধিক শিক্ষকদের।
জালাল উদ্দিন আরও বলেন, বিষয়টি জানার পর ২০১৮ সালে ভুয়া সনদের বিরুদ্ধে আদালতে একটি মামলা দায়ের করা হয়। পরে আদালতের নির্দেশে সনদ জালিয়াতির বিষয় তদন্ত করেন সিআইডি রাজশাহী অঞ্চল। এরপর তদন্তকারী কর্মকর্তা তদন্ত শেষে আদালতে তদন্ত রিপোর্ট দাখিল করেছেন। সেখানেও তারা রেজাউল করিমের সনদটি জাল পান বলে দাবি শিক্ষক জালাল উদ্দিনের। তবে বর্তমানে সনদ জালিয়াতির মামলাটি আদালতে চলমান রয়েছে।
বিষয়টি সম্পর্কে অভিযুক্ত শিক্ষক রেজাউল করিমের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমার সনদটি জাল এখনো প্রমান হয়নি। আদালতের বিচারাধীন রয়েছে। তাছাড়া আমি বিদ্যালয়ে মেডিকেল সার্টিফিকেট নিয়ে ছুটিতে আছি।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাইদা খানম বলেন, অনুপস্থিত শিক্ষক আমার কাছে ২-৩ দিন পর পর তো এসে বসে থাকেন। তিনি যদি অসুস্থতার জন্য ছুটিতে থাকে তাহলে আপনার কাছে এসে কিভাবে বসে থাকে। এমন প্রশ্নের কোন উত্তর দেননি তিনি। তাছাড়া রেজাউল সাহেবের সনদের বিষয় আদালতে মামলা চলমান আছে। এখানে আমার কোন করনীয় নেই। শিক্ষার্থীসহ এলাকাবাসীর অভিযোগ থাকলে তারা আমার কাছে আসে না কেন বলে প্রশ্ন ছুড়েন দেন বিদ্যালয়টি সভাপতি উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাইদা খানম।